ইউক্রেনে আক্রমণের পর পশ্চিমাদেশগুলো রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ব্যাপক ছাড়ে ভারতে তেল রপ্তানি শুরু করে রাশিয়া। এতে ভারত ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়। বর্তমানে ভারতের ৮৫ শতাংশের বেশি অপরিশোধিত তেলের চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়। ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যপ্রাচ্য ছিল প্রধান সরবরাহকারী, তবে গত তিন বছরে রাশিয়া সেই স্থান দখল করেছে।
কিন্তু এখন ভারতের সেই সস্তা রাশিয়ান তেলের উৎস গুরুতর হুমকির মুখে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দ্বৈত ভূমিকার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে রুশ তেল আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ সেকেন্ডারি ট্যারিফ আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি জানিয়েছেন, ভারত মার্কিন হুমকিতে ভীত নয় এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়া যদি বাদ হতো, তাহলে তেলের দাম ১৩০ ডলার ছাড়িয়ে যেতো।
পুরি আরও বলেন, আমরা চাইলে অন্যদেশ থেকে তেল নিতে পারি। তবে তাতে দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে। কাজেই রাশিয়ান তেল বাজারে থাকা জরুরি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প ও ন্যাটোর হুমকি আদতে রাশিয়ার ওপর আলোচনার চাপ বাড়ানোর কৌশল হতে পারে। ইউরোপের অনেক দেশ এখনও রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস নিচ্ছে, যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
২০২২ সালে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ছিল মাত্র ২.১ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৫.১ শতাংশ হয়েছে।
মাত্র ৩ বছরে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির মূল্য ২ দশমিক ২৫৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৫০ দশমিক ২৮৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
যদি সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, তাহলে ভারতের রাশিয়ান তেল কেনা খুব কঠিন হবে কারণ এটি শুধু রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নয়, পুরো দেশের আমেরিকায় পণ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলবে। সেক্ষেত্রে ভারতকে আবার তার পুরোনো পশ্চিম এশিয়ান উৎসের দিকে ফিরে যেতে হবে, যেমন সৌদি আরব, ইরাক, এবং নতুন উৎস যেমন ব্রাজিল।
সেক্ষেত্রে তেলের দাম কিছুটা বেশি হবে, তবে সরবরাহের সংকট হবে না।
পুরি বলেন, বিশ্বে পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে। দাম এখনো ব্যারেলপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে রয়েছে। তবে তা আরও ৪ থেকে ৫ ডলার বেড়ে যেতে পারে।
বর্তমানে ভারত ৪০টি দেশের কাছ থেকে তেল আমদানি করে, যা আগে ছিল ২৭টি। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে আমেরিকা থেকে ভারতের তেল আমদানি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রাজিল থেকে আমদানি ৮০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ৭৩ হাজার ব্যারেলে।