শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষণ ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ ◈ রাজধানীর পল্লবীতে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা ◈ ব্রহ্মপুত্রে চীনের দৈত্যাকার বাঁধ: ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগ উপেক্ষা করেই প্রকল্পের উদ্বোধন ◈ জাতীয় মানবাধিকারের নামে সমকামিতার অফিস করতে দিবো না: মামুনুল হক ◈ মির্জা ফখরুলের ভাইয়ের ওপর হামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার ◈ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন কী কাজ করবে, কেন কিছু দলের আপত্তি? ◈ গডফাদার’ মন্তব্য ঘিরে উত্তেজনা: চকরিয়ায় এনসিপির বিরুদ্ধে বিএনপির তীব্র প্রতিক্রিয়া (ভিডিও) ◈ গোপালগঞ্জে কারফিউর সময় বাড়ল ◈ চরমপন্থা ও ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের আশঙ্কা: সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান তারেক রহমানের ◈ অনেকেই এখনো ভাঙার কাজে ব্যস্ত, কিন্তু গড়ার কাজে কাউকে পাওয়া যায় না: মাহফুজ আলম

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২৫, ০৮:০৬ রাত
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দ্রুজদের রক্ষায় সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা: কারা এই সম্প্রদায়, কী তাদের নিয়ে সংকট?

সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির রাজনৈতিক পটভূমি যখন চরম অস্থিতিশীল, তখন ইসরায়েল রাজধানী দামেস্কে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে। এই নজিরবিহীন হামলার কারণ হিসেবে ইসরায়েল সিরিয়ার সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষার দাবি তুলেছে। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে এবং প্রশ্ন উঠেছে—কারা এই দ্রুজ এবং কেন তাদের সুরক্ষার অজুহাতে ইসরায়েল সিরিয়ার সার্বভৌমত্বে আঘাত হানল?

সাম্প্রতিক সংঘাত ও ইসরায়েলের হামলা:
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত আসাদ সরকারের বিরোধী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) বর্তমানে দেশটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তাদের নেতা আহমেদ আল-সারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। নতুন সরকার পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত দিলেও পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সুদাইদাতে দ্রুজ সম্প্রদায় এবং বেদুইন উপজাতিদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন নিহত হন। পরবর্তীতে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা পাঠালে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে অন্তত ১৮ জন সরকারি সেনা সদস্য প্রাণ হারান।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েল সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি ‘নিরস্ত্রীকরণ এলাকা’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, যা সিরিয়ার নতুন সরকার প্রত্যাখ্যান করে। এর পরপরই দামেস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, যার কারণ হিসেবে তারা সুদাইদার দ্রুজদের রক্ষা করার কথা বলে।

কারা এই দ্রুজ সম্প্রদায়?
দ্রুজরা একটি স্বতন্ত্র আরব ধর্মীয় গোষ্ঠী, যাদের বিশ্বজুড়ে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তাদের মূল বসবাস সিরিয়া, লেবানন এবং ইসরায়েলের পাহাড়ি অঞ্চলে।

  • উৎপত্তি: দ্রুজ ধর্মের সূচনা হয়েছিল ৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরের ফাতেমীয় খিলাফতের সময়, যা ইসলামের একটি শাখা হিসেবে পরিচিত। হামজা বিন আলী এবং আদ-দারাজিকে এই ধর্মের প্রবর্তক বলে মনে করা হয়।

  • বিশ্বাস: দ্রুজরা বিশ্বাস করে যে, ফাতেমীয় খলিফা আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহ ছিলেন তাদের 'অন্তর্নিহিত' ইমাম। তাঁর অন্তর্ধানের পর মিশরে এই ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ হয়ে গেলেও এটি সিরিয়া ও লেবাননের মতো পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

  • সামাজিক প্রথা: দ্রুজরা অত্যন্ত রক্ষণশীল একটি সম্প্রদায়। তাদের মধ্যে বাইরের কোনো ধর্মের মানুষের সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ এবং নতুন করে কেউ এই ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারে না। এই কঠোর নিয়ম মেনে চলায় তাদের জনসংখ্যা সীমিত।

ইসরায়েলের সঙ্গে দ্রুজদের সম্পর্ক:
ইসরায়েলের সঙ্গে দ্রুজদের সম্পর্ক বেশ জটিল ও ঐতিহাসিক।

  • গোলান মালভূমির দ্রুজ: ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। সেখানে বসবাসকারী প্রায় ২০ হাজার দ্রুজ নিজেদের আজও ‘সিরিয়ান’ হিসেবে পরিচয় দেন এবং ইসরায়েলি নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

  • ইসরায়েলি দ্রুজ: অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বসবাসকারী প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার দ্রুজ ইসরায়েলি নাগরিক। ১৯৫৭ সাল থেকে তাদের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক। এই কারণে তেল আবিব সরকার দ্রুজদের সঙ্গে নিজেদের "ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক" রয়েছে বলে দাবি করে।

রাজনৈতিক বিভাজন ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা:
সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-সারা দ্রুজ সম্প্রদায়কে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অধীনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু দ্রুজ নেতারা এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং নতুন সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হামলা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের প্রশ্ন—ইসরায়েল কি সত্যিই দ্রুজদের সুরক্ষা দিতে আগ্রহী, নাকি ‘সুরক্ষা’র নামে এই ভঙ্গুর অঞ্চলে নতুন করে বিভক্তি ও সংঘাতের বীজ বপন করছে, যা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে?

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়