শিরোনাম
◈ “তোমার ছবি দাও”, “তোমার ঠোঁট সুন্দর”, এবার তুষারের সঙ্গে অডিওর কথা স্বীকার করলেন এনসিপি নেত্রী নীলা ◈ ভারতীয় ক্রিকে‌টের বিস্ময় বালক বৈভব মোবাইল-ইন্টারনেট ছেড়ে নিজেকে গড়ছেন! ◈ আদালতে ৫৩৮ কোটি টাকার ধাক্কা খেলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ◈ এবার মিসাইল ছুড়ল উত্তর কোরিয়া, ইরানের পক্ষ নিয়ে দিল বিবৃতি ◈ ‌লিঙ্গ প‌রিবর্তন ক‌রে‌ছে, এবার ম‌হিলা ক্রিকেটে খেলতে চে‌য়ে আই‌সি‌সি ও ভারতীয় বো‌র্ডে আবেদন অনয়া বাঙ্গা‌রের ◈ জিয়াউর রহমানের শিক্ষাদর্শন ও কর্মসূচি নিয়ে পিএইচডি গবেষণা হতে পারে : ড. মঈন খান ◈ অ‌স্ট্রেলিয়ার হোবা‌র্টে আবারও জায়গা হলো রিশাদের ◈ আসন্ন নির্বাচনে পোস্টারে নিষেধাজ্ঞা, ব্যানার-ফেস্টুন-লিফলেট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারে ছাড় ◈ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা এখনও আসেনি, সরকারের নির্দেশনা পেলেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত সেনাবাহিনী (ভিডিও) ◈ গ্যাস নিরাপত্তা ও পরিবেশ উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের ৬৪০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা

প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০২৫, ১০:৫২ দুপুর
আপডেট : ১৯ জুন, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

ইরানের পারমাণবিক বাংকার ধ্বংস করতে পারে যে শক্তিশালী মার্কিন বোমা

এল আর বাদল : ইরানের ভূগর্ভে নির্মিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানতে সক্ষম যেসব অস্ত্র রয়েছে, তার একটি এখনো অব্যবহৃতই রয়ে গেছে এবং সেটি এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের নাগালের বাইরে। এটির নাম 'জিবিইউ-৫৭এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর' (এমওপি), যা সম্পূর্ণভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে।

এমওপি কোনো পারমাণবিক বোমা নয়। অর্থাৎ, এটি থেকে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটে না।

কিন্তু এটি এমন একটি নন-নিউক্লিয়ার 'বাংকার ব্লাস্টার' বোমা, যা মাটির নিচের বাংকার ধ্বংস করে ফেলতে পারে। এই ধরনের বোমার দিক থেকে এটি পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়। --- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই শক্তিশালী বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ৩০ হাজার পাউন্ড বা ১৩ হাজার ৬০০ কিলোগ্রাম। এটি সম্ভবত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ফরদো কমপ্লেক্সকেও ভেদ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যা কিনা পাহাড়ের অনেক নিচে অবস্থিত।

এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এমওপি ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি।

এই বোমা কী? এটি ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ কোথায়?----

মার্কিন সরকার জানিয়েছে, 'জিবিইউ-৫৭এ/বি হলো এমন একটি "শক্তিশালী অস্ত্র যা মাটির গভীরে থাকা শক্তিশালী বাংকার ও টানেলে আঘাত হানতে সক্ষম।"

এই বোমাটি প্রায় ছয় মিটার লম্বা হয় এবং এটি মাটির প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) গভীরে প্রবেশ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হয়। আর যদি ধারাবাহিকভাবে একের পর এক বোমা ফেলা হয়, তাহলে প্রতিটি বোমার বিস্ফোরণ মাটির আরও গভীরে প্রবেশের পথ তৈরি করে।

এমওপি বোমা নির্মাণ করেছে বোয়িং। এটি এর আগে কখনো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জে পরীক্ষা করা হয়েছে।

এই বোমাটি প্রায় ২১ হাজার ৬০০ পাউন্ডের (৯ হাজার ৮০০ কেজি) ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট (এমওএবি) বোমার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। এমওএবি বোমাকে "মাদার অব অল বোম্বস"-ও বলা হয় এবং এটি ২০১৭ সালে আফগানিস্তানে ব্যবহার করা হয়েছিলো।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্র্যাডফোর্ডের পিস স্টাডিজের এমেরিটাস অধ্যাপক পল রজার্স বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী অনেক চেষ্টা করেছে এমন এক ধরনের অস্ত্র তৈরির জন্য, যার আকার ও শক্তি 'এমওএবি'-এর মতোই হবে, কিন্তু সেটির বিস্ফোরক অংশটি থাকবে খুবই শক্ত ধাতব খোলের মধ্যে। সেই চেষ্টার ফলাফল হিসাবে তৈরি হয়েছে ওই 'এমওপি' বোমা।"

বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বি-টু স্পিরিট বিমান এই এমওপি বোমা বহনে সক্ষম। এই বিমান স্টিলথ বম্বার বা 'বি-টু' নামেও পরিচিত। অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 'নর্থরপ গ্রুম্যান' কোম্পানির নির্মিত এই বিমানকে বলা হয় মার্কিন বিমান বাহিনীর সর্বাধুনিক বিমান।

প্রস্তুতকারকের মতে, বি-টু প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড (১৮ হাজার কেজি) অস্ত্র পরিবহন করতে পারে। তবে মার্কিন বিমান বাহিনী দাবি করেছে, এই বিমান একসাথে দু'টি বাংকার ব্লাস্টার বোমা সফলভাবে বহন করেছে, যার ওজন প্রায় ৬০ হাজার পাউন্ড (২৭ হাজার কেজি)।

পুনরায় জ্বালানি না নিয়ে এই বিমান একসাথে প্রায় সাত হাজার মাইল (১১ হাজার কিলোমিটার) পর্যন্ত যেতে পারে। আর আকাশে থাকা অবস্থায় একবার জ্বালানি ভরলে এটি প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মাইল (সাড়ে ১৮ হাজার কিলোমিটার) পর্যন্ত উড়তে পারে।

পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় এক ঘণ্টার মাঝে এটি পৌঁছাতে সক্ষম বলেও দাবি নর্থরপ গ্রুম্যান কোম্পানির।


ইরানের বিরুদ্ধে এমওপি বোমা ব্যবহার করা হবে?----

নাতাঞ্জের পর ফরদো হলো ইরানের দ্বিতীয় পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র। তেহরান থেকে প্রায় ৬০ মাইল (৯৫ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্বোম শহরের কাছে একটি পর্বতের নিচে এর অবস্থান।

২০০৬ সালে এর নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০০৯ সালে এটি কার্যকর হয়। ওই বছর-ই তেহরান প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ফরদো'র অস্তিত্ব স্বীকার করে।

এই স্থাপনাটি প্রায় ৮০ মিটার (২৬০ ফুট) পাথর ও মাটির গভীরে অবস্থিত এবং ইরান ও রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত।

২০২৩ সালের মার্চে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) জানায়, ইরানের একটি স্থানে এমন ইউরেনিয়াম কণা পাওয়া গেছে, যা প্রায় ৮৩ দশমিক সাত শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধিত এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মানের কাছাকাছি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করাই হলো ইরানে হামলার মূল উদ্দেশ্য। তিনি ইরান ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে "ইসরায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আর এই হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হলো ফরদো, জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্র দূত ইয়েখিয়েল লেইটার ফক্স নিউজকে বলেছেন, "এই পুরো অভিযানের লক্ষ্য হলো ফরদো নিশ্চিহ্ন করা।"

তবে ইসরায়েলের নিজের এমওপি ব্যবহারের সক্ষমতা নেই এবং এই ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ না করলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে এককভাবে এই বোমা ব্যবহার করার অনুমতি দেবে না বলে মনে করছেন অধ্যাপক রজার্স।

তার বক্তব্য, "যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবেই চাইবে না যে ইসরায়েল এটি একা করুক। আর ইসরায়েলের হাতে এমন ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র নেই।

ফলে, ইরানের বিরুদ্ধে শেষ অবধি এই বোমা ব্যবহার করা হবে কি না, তা নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র এখানে কতটা সরাসরি জড়াতে প্রস্তুত। বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে।

খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার রসদ ----

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল সাম্প্রতিক সময়ে হামলা চালিয়েছে। তবে অধ্যাপক রজার্স বিশ্বাস করেন, "ইসরায়েল সফলভাবে ফরদোর মতো গভীর বাংকারের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।"

"তাদের আসলে এমওপি'র মতো কিছু দরকার, যা তাদের কাছে নেই," বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক কেলসি ড্যাভেনপোর্ট বলেন, "যতদিন ফরদো চালু থাকবে, ততদিন ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার মতো মানের ইউরেনিয়ামের উৎপাদন মাত্রা আরও বাড়ানোর অথবা ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ ইরানের আছে।

তবে ইরানের বিরুদ্ধে এমওপি ব্যবহৃত হলেও সাফল্য এখনও নিশ্চিত না। কারণ ফরদো'র প্রকৃত গভীরতা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনো সম্পূর্ণ অজানা, বলেন অধ্যাপক রজার্স।

তার মতে, এমওপি বোমা ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে। তবে সেটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তা বলা কঠিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়