শিরোনাম
◈ গ্যাস নিরাপত্তা ও পরিবেশ উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের ৬৪০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা ◈ আমরা পারব, ইনশাআল্লাহ—জাতির উদ্দেশে ইরানের প্রেসিডেন্টের আশা ও প্রত্যয় ◈ ৫ আগস্ট ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’, থাকবে সরকারি ছুটি : উপদেষ্টা ফারুকী (ভিডিও) ◈ ক্লাব বিশ্বকা‌পে ম‌্যান‌চেস্টার সিটির শুভ সূচনা,  লুইসের লাল কার্ড ◈ আদালত থেকে নাটকীয়ভাবে পালাল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ◈ ফাত্তাহ-২ থেকে হোভেইজেহ: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কৌশলে বিপর্যস্ত ইসরায়েল ◈ আমার একটু ভালোবাসা পেলে কান্না পায় : জাহিদ হাসান ◈ পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ডেকেছিলেন ট্রাম্প, যা জানাগেল ◈ সচিবালয়ে কর্মচারীদের মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি, গণসংযোগের প্রস্তুতি ◈ পানি নিষ্কাশনের অভাবে ডুবতে বসেছে  বসেছে বেনাপোল বন্দর

প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০২৫, ০৩:১৯ রাত
আপডেট : ১৯ জুন, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৫৩৬ সাল: মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বছর, জানুন কেন?

যখন প্রশ্ন ওঠে, মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর কোনটি? তখন অধিকাংশ মানুষ ভাবেন ১৩৪৯ সালের ব্ল্যাক ডেথ বা ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির কথা—যেগুলোতে কোটি কোটি প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগীয় ইতিহাসবিদ মাইকেল ম্যাককরমিক (Michael McCormick) এক ব্যতিক্রমী বিশ্লেষণে জানান, মানবসভ্যতার সবচেয়ে ভয়াবহ বছর ছিল ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ।

সূর্য আছে, আলো নেই: রহস্যময় কুয়াশায় ঢেকে যায় পৃথিবী: ৫৩৬ সালে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার একটি বিশাল অংশ রহস্যজনক এক ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায়। সূর্য আকাশে ছিল ঠিকই, কিন্তু তার আলো ছিল নিস্তেজ—চাঁদের মতো ঝাপসা। সমকালীন বাইজেন্টাইন ইতিহাসবিদ প্রোকোপিয়াস লিখেছেন,

“সারা বছর সূর্য যেন চাঁদের মতো নিস্তেজ ছিল।”

এই সূর্যালোকহীন পরিস্থিতির ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা হঠাৎ করে ১.৫ থেকে ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়। গ্রীষ্মেও দেখা দেয় বরফপাত, বিশেষ করে চীনে, যেখানে ধান চাষ ও অন্যান্য ফসল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। আইরিশ বার্ষিকপঞ্জি জানায়,

“৫৩৬ থেকে ৫৩৯ সাল পর্যন্ত রুটির ঘাটতি ছিল।”

দুর্ভিক্ষ, সামাজিক বিপর্যয় ও মৃত্যু: তীব্র ঠাণ্ডা ও আলোহীনতার কারণে একদিকে শুরু হয় বহু বছরের দুর্ভিক্ষ, অন্যদিকে চাষাবাদ ধ্বংস হওয়ায় ইউরোপ-এশিয়ার এক বিশাল অঞ্চলে খাদ্য সংকট ছড়িয়ে পড়ে। শহর ও জনপদে দেখা দেয় সামাজিক বিপর্যয় ও ভাঙন।

এরপর, ৫৪১ সালে মিশরের একটি রোমান বন্দরে শুরু হয় জাস্টিনিয়ান প্লেগ (Justinian Plague)। এই রোগ দ্রুত পুরো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, এবং প্রায় রোমান সাম্রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। এই মহামারী শুধু জনসংখ্যার পতনই ঘটায়নি, বরং রোমান সাম্রাজ্যের পতনকেও ত্বরান্বিত করে।

হিমবাহের বরফে লুকিয়ে থাকা ইতিহাস: এই ভয়াবহ সময়ের কারণ অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা সুইজারল্যান্ডের Colle Gnifetti Glacier-এ ২০১৩ সালে একটি ৭২ মিটার দীর্ঘ বরফকোর (ice core) খনন করেন। এই বরফের স্তরগুলো বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানতে পারেন—পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এই বছরের পেছনে মূল কারণ ছিল একটি প্রলয়ংকরী আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত।

অগ্ন্যুৎপাতের ধোঁয়ায় অন্ধকারে পৃথিবী: গবেষণা অনুযায়ী, ৫৩৬ সালে আইসল্যান্ডে এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। এতে বিপুল পরিমাণ ছাই ও সালফার ডাইঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, যা সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ, শুরু হয় একটি “ভলকানিক শীত” (volcanic winter)।

এরপর, ৫৪০ ও ৫৪৭ সালেও আরও দুটি শক্তিশালী অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এই ঘটনার প্রভাব কয়েক বছর স্থায়ী হয়, পৃথিবী তখন একপ্রকার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ও তীব্র শীতে জমে যায়।

এক যুগব্যাপী দুর্যোগের ধাক্কা: এই তিনটি অগ্ন্যুৎপাতের পরপরই আসে জাস্টিনিয়ান প্লেগ, যার ফলে ইউরোপ এবং আশপাশের অঞ্চল এক যুগব্যাপী মৃত্যুর, দুর্ভিক্ষের ও দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত হয়।

গবেষক আন্দ্রেই কুরবাতভ বলেন, “এই বরফকোরে আমরা গত ২০০০ বছরের দুর্যোগ, ধুলোর ঝড় এবং মানব-সৃষ্ট দূষণের রেকর্ড পেয়েছি।”

উপসংহার
৫৩৬ সাল কোনো একটি বিচ্ছিন্ন দুর্যোগের বছর নয়। এটি ছিল বহু প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের যুগের সূচনা। এই বছর সূর্যের আলো নিস্তেজ হয়ে যায়, পৃথিবী তীব্র ঠাণ্ডায় আচ্ছন্ন হয়, খাদ্য সংকট ও রোগ মহামারিতে বিপর্যস্ত হয় সভ্যতা। ইতিহাসবিদদের মতে, এই সময়টিই ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়।

তথ্যসূত্র:

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা

প্রোকোপিয়াসের ইতিহাস

সুইজারল্যান্ডের বরফকোর বিশ্লেষণ (2013)

জার্নাল: Antiquity, Nature Geoscience

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়