সিএনএন/বিবিসি/আলজাজিরা; পাকিস্তান জানিয়েছে যে ভারত তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর তার প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পাকিস্তান ভারতে এসব হামলা চালাতে শুরু করেছে। এর আগে ভারত পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে একটি ঘাঁটি সহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর কিছুক্ষণ পরেই, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে তারা সর্বশেষ হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।
ভারতের যেসব এলাকা পাকিস্তান লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালায় সেগুলো হচ্ছে, ব্রিগেড সদর দপ্তর কেজি টপ, উরির ফিল্ড সাপ্লাই ডিপো, আর্টিলারি গান পজিশন দেরাঙ্গিয়ারি, ব্রহ্মোস ব্যাটারি সাইট নাগরোটা, উধমপুর বিমান ক্ষেত্র, পাঠানকোট বিমান ক্ষেত্র এবং সুরাত গড় বিমান ক্ষেত্র। এই অবস্থানগুলির বেশিরভাগই নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলকে বিভক্তকারী ডি ফ্যাক্টো সীমান্তের কাছাকাছি বা পাশে অবস্থিত। পাঞ্জাব রাজ্যের পাঠানকোট এবং রাজস্থান রাজ্যের সুরাত গড়, ভারতের অবিসংবাদিত সীমান্তের অভ্যন্তরে বিমান ক্ষেত্র।
এদিকে বিবিসি বলছে, ভারতের ২৬টি জায়গায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। শুক্র ও শনিবারের মাঝরাতে উত্তরের বারামুল্লা থেকে গুজরাটের ভুজ পর্যন্ত হামলাগুলো চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত।
শনিবার (১০ মে) বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্র ও শনিবারের মাঝরাতে উত্তরের বারামুল্লা থেকে গুজরাটের ভুজ পর্যন্ত ২৬টি জায়গায় ড্রোন দেখা গিয়েছে। এসব সন্দেহভাজন সশস্ত্র ড্রোন বেসামরিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
বারামুল্লা, শ্রীনগর, অবন্তীপোরা, নাগরোটা, জম্মু, ফিরোজপুর, পাঠানকোট, ফাজিলকা, লালগড় জাট্টা, জয়সলমীর, বারমের, ভুজ, কুয়ারবেত ও লক্ষী নালার কাছে ওই ড্রোনগুলো দেখা গেছে।
ফিরোজপুরের একটি বেসামরিক এলাকায় এমনই একটি ড্রোন হামলা চালায়। ওই হামলায় স্থানীয় অনেক বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী এলাকায় তল্লাশী চালাচ্ছে।
ভারত জানিয়েছে, তাদের সামরিক বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং এ জাতীয় হামলা ড্রোন প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোকাবেলা করা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরে থাকার এবং এলাকায় জারি করা সুরক্ষা নির্দেশাবলী মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, “চোখের বদলে চোখ” প্রতিশোধ হিসেবে, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার জন্য ব্যবহৃত ভারতীয় বিমান ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে। ভারতের হামলা সম্পর্কে পাকিস্তানের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি সিএনএন। প্রতিক্রিয়ার জন্য সিএনএন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে তারা পাকিস্তান থেকে হামলায় ব্যবহৃত ড্রোন “এবং অন্যান্য গোলাবারুদ” ধ্বংস করেছে। ভারতের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, “আমাদের পশ্চিম সীমান্তে ড্রোন হামলা এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের স্পষ্টতই হামলা বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। ভারতের স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরের একটি সামরিক ঘাঁটির উপর দিয়ে একাধিক “সশস্ত্র ড্রোন” উড়তে দেখা গেছে, ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, “আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলি তাৎক্ষণিকভাবে শত্রুপক্ষের ড্রোনগুলিকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়,” এটি আরও যোগ করে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে তারা ভারত এবং ভারত-শাসিত কাশ্মীরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। সিএনএন ভারতের হামলার বিষয়ে পাকিস্তানের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। সিএনএন প্রতিক্রিয়ার জন্য ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেছে।
এদিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সাথে ফোনে মধ্যস্থতার জন্য সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক। পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতি অনুসারে, শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সাথে কথা বলেছেন এবং মার্কিন মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। রুবিও “উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের উপায় খুঁজে বের করার জন্য অনুরোধ করে চলেছেন,” বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি “ভবিষ্যতে সংঘাত এড়াতে গঠনমূলক আলোচনা শুরু করার জন্য” মার্কিন সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
পাকিস্তানি বা ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে তার ফোনে উল্লেখিত মার্কিন সহায়তার এটিই প্রথম প্রস্তাব।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের একটি সভা আহ্বান করেছেন, সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
