দেশের বাজারে প্রচলিত সোনালি মুরগির মাংসে ক্ষতিকর ও অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ইশেরেশিয়া কোলাই (ই. কোলাই) ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 제대로 রান্না করলে এর ঝুঁকি থাকে না, তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
দেশের জনপ্রিয় সোনালি মুরগির মাংসে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ই. কোলাইয়ের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে এক আন্তর্জাতিক গবেষণায়। বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন, যা বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাটি ‘বাংলাদেশে সোনালি মুরগির মাংস থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ-প্রতিরোধী এবং বর্ধিত স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ (ইএসবিএল) উৎপাদনকারী ইশেরেশিয়া কোলাইয়ের আণবিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, মুরগির মাংসে থাকা এই ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত অনেক অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা প্রতিরোধ করতে সক্ষম, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ঝুঁকি।
গবেষণার বিস্তারিত:
গবেষকরা ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নরসিংদী জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে সোনালি মুরগির ৩৯০টি কাঁচা মাংসের নমুনা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ৬৮.২১ শতাংশ, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি নমুনাতেই ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
শনাক্ত হওয়া এসব ই. কোলাইয়ের মধ্যে দেখা গেছে:
অ্যামপিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে শতভাগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।
এরিথ্রোমাইসিনের বিরুদ্ধে ৮৭.৫৯ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোসপোরিনের বিরুদ্ধেও উচ্চমাত্রার প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখিয়েছে।
৪১.৭৩ শতাংশ নমুনায় এক্সটেন্ডেড-স্পেকট্রাম বিটা-ল্যাকটামেজ (ইএসবিএল) উৎপাদনকারী ই. কোলাই পাওয়া গেছে, যা পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণার ফলাফলকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, "প্রাণীর পাকস্থলীতে ই. কোলাইয়ের উপস্থিতি স্বাভাবিক। মুরগি জবাই ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় অসাবধানতাবশত মল থেকে এটি মাংসে সংক্রমিত হতে পারে। তবে ভয়ের কিছু নেই, কারণ ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার উপরে এই ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। ভালোভাবে রান্না করলে এর সব ক্ষতিকর দিক নষ্ট হয়ে যায়।"
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন জানান, "ই. কোলাই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি প্রাণী ও পানিতে থাকে। মুরগির খাবারে এর মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখলে ঝুঁকি কমে যাবে।"
সমস্যার মূল কারণ ও সমাধান:
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আহসানুল হক (রুকন) বলেন, "এর প্রধান কারণ খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার। খামারিরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই সামান্য অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। এছাড়া, দেশে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।"
তিনি সমাধানের পথ হিসেবে খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মুরগি প্রক্রিয়াজাত করার ওপর জোর দিয়েছেন। গবেষকরাও খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের সচেতন ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভব ঠেকানো যায়।
সূত্র: কালবেলা