শিরোনাম
◈ কলকাতায় ভাঙচুরের ঘটনায় লিওনেল মেসি দায়ী: সু‌নিল গাভাস্কার ◈ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের আমানত ফেরত দেওয়ার নির্দেশ গভর্নরের ◈ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা ছাড়া ভারত বিজয় অর্জন করতে পারতো না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ◈ সৌদিতে হলরুম ভাড়া করে নির্বাচনী সভা করায় কয়েকজন বাংলাদেশি আটক ◈ ৩০০ আসনের লড়াই: আসন ছাড়ে অনীহা, জোট রাজনীতিতে বাড়ছে টানাপোড়েন ◈ হাদিকে গুলি: প্রধান অভিযুক্তের ‘জামিন বিতর্ক’ নিয়ে যা বললেন আইন উপদেষ্টা ◈ পে স্কেল নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে যে সিদ্ধান্ত নিল কমিশন ◈ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ট্রাভেল পাস চাননি তারেক রহমান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বৈঠকে লন্ডন গেলেন জামায়াত আমির ◈ সরকারি গাড়িতে যুগ্ম সচিবকে জিম্মি, ৬ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা

প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫৯ বিকাল
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

‘সংশোধিত শ্রম আইনের অসঙ্গতি দূর না করলে সংকটে পড়বে শিল্প’

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংশোধিত শ্রম আইনের অসঙ্গতি দূর না করলে আগামীতে শিল্প মারাত্নক সংকটে পড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সংশোধনীগুলোর মূল দিকসমূহ পর্যালোচনা, সম্ভাব্য ঘাটতি চিহ্নিত করা এবং ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন যেন শ্রমিক, মালিক ও নীতিনির্ধারকদের স্বার্থকে সমন্বিত করে সে দিকগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সলিডারিটি সেন্টার আয়োজিত ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬’-এর সাম্প্রতিক পাসকৃত খসড়া সংশোধনীগুলো নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের স্টেকহোল্ডারস মিটিংয়ে বিশদ আলোচনা করার জন্য এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে শ্রমিক সংগঠন, মানবাধিকার ও শ্রমঅধিকার সংস্থা, শ্রমিক আইনজীবী, মালিক পক্ষ, শ্রম সংস্কার কমিশন (এলআরসি), সরকারি কর্মকর্তা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় সলিডারিটি সেন্টারের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর একেএম নাসিম মূল প্রবন্ধে সংশোধনীগুলোর ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি বেশ কিছু প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইউনিয়ন গঠনে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংখ্যার বিষয়ে এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ‘স্ল্যাব অ্যাপ্রোচ’ প্রস্তাবটি একটি প্রগতিশীল উদ্যোগ হতো। কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবে বেশ কিছু কারিগরি অসামঞ্জস্য রয়েছে, যা বাস্তবায়নের সময় নানা সমস্যার সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, তাত্ত্বিকভাবে সংশোধনীটি ভালো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ফাঁকফোকর বের হয়ে আসবে এবং আমি অনুরোধ করি, আপনারা সবাই সম্ভাব্য এই ইস্যুগুলো মাথায় রাখবেন।

এলআরসির সুপারিশ অগ্রাহ্য হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এলআরসি কিছু নির্দিষ্ট সুপারিশ করেছিল, যা সংযুক্ত করা উচিত ছিল। যদিও আমরা আশ্বাস পেয়েছিলাম যে, এই সুপারিশগুলো যুক্ত করা হবে, কিন্তু শেষমেশ কোন কারণবশত তা করা হয়নি।

এলআরসি সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের দেওয়া মতামত বিবেচনা করা হয়নি, টি.সি.সি.-তেও আমরা একই প্রবণতা দেখেছি। তিন বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ একটি অগ্রগতি। তবে বিদেশি ক্রেতাদের জবাবদিহিতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না হওয়া দুঃখজনক।

মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সংশোধনীগুলো শ্রমিকদের স্বার্থে এসেছে এবং আমরা সেগুলোতে একমত হয়েছি। কিন্তু একইসঙ্গে শিল্পের স্থিতিশীলতাও গুরুত্বপূর্ণ-এমন সংশোধনী দরকার, যা শ্রমিক ও শিল্প-উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে।

মজুরি কাঠামো নিয়ে তিনি বলেন, তিন বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ ভালো, তবে আমরা প্রতি বছর মজুরি পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করেছি-কারণ কয়েক বছর পর হঠাৎ মজুরি ৮০ শতাংশ বেড়ে গেলে শিল্পের ওপর চাপ পড়ে। প্রতিবছর মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় মজুরি সমন্বয় করলে মালিকদের জন্যও তা উপকারী হবে।

সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামসুল আলম বলেন, এই সংশোধনী এখানে উপস্থিত সবার অবদানেই সম্ভব হয়েছে। আমরা চাই সরকার, শ্রমিক ও মালিক ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে সংশোধনী বাস্তবায়নে কাজ করুক। তিনি জানান, সলিডারিটি সেন্টারের দেওয়া প্রস্তাবগুলো মন্ত্রণালয়ে আলোচনার জন্য আমি পেপারটি শেয়ার করব।

শ্রম আইন কাঠামোগতভাবে জটিল উল্লেখ করে শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমাদের শ্রম আইনটি কোডিফায়েড-এমন আইন শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনে রয়েছে। কোডিফায়েড আইনে সংশোধনী আনলে অসামঞ্জস্য থাকেই। তাই পুরো শ্রম আইনটি সমন্বিতভাবে বিশ্লেষণ করে কোথায় কোথায় অসঙ্গতি আছে তা শনাক্ত করার সুপারিশ করছি।

আরএমজি-কেন্দ্রিক আলোচনা সীমাবদ্ধ না রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আরএমজি শুধু একটি শিল্প-এটাই বাংলাদেশ নয়। আমাদের সমগ্র শ্রমশক্তিকেই বিবেচনায় নিতে হবে।

বৈঠকে স্টেকহোল্ডাররা যৌথভাবে জানান, সংশোধনীটি কার্যকর করতে সমন্বিত পর্যালোচনা, প্রমাণভিত্তিক সুপারিশ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের শ্রম অধিকার অগ্রসর করার লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় সংলাপ জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিল্প মালিক ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের শ্রমিক নেতারাসহ সলিডারিটি সেন্টারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়