মনজুর এ আজিজ: দেশের চাহিদা পূরণে ডাল, গম, ভুট্টা, ছোলা, মটর ডাল, দুগ্ধজাত খাবার, আদা, শিশু খাদ্য, শুকনো মরিচ, মধুসহ অনেক ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। আর ক্রমেই বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের আমদানিনির্ভরতা। তাছাড়া সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চিনি শতভাগই আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে বাকি পণ্যগুলোর উৎপাদন কম হওয়ায় প্রতি বছর হুহু করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এর মধ্যে মোট আমদানির ৬৮ শতাংশই ভারত, চীন ও নিউজল্যান্ডের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।
বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে ২১১ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ডলারের কনজিউমার রিলেটেড পণ্য আমদানি করেছে। ২০২৩-এ এর পরিমাণ ছিল ২০১ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের ৬৮ শতাংশই তিন দেশের। এর মধ্যে ভারত থেকে ৩৫ শতাংশ, চীন থেকে ২২ ও নিউজিল্যান্ড থেকে ১১ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। ২০২২-২৩ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব থেকে বেশি চাল, গম, ডাল, চিনি, আদা, শিশু খাদ্য, শুকনো মরিচের আমদানি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত থেকে ৩২৭ মিলিয়ন ডলারের চাল, ২২৪ মিলিয়নের গম, ৭৫ মিলিয়ন ডলারের ছোলা, ১২১ মিলিয়ন ডলারের শুকনো মরিচ আমদানি হয়েছে। দুই বছর পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৫৬ মিলিয়ন ডলারের চাল, ১২০ মিলিয়ন ডলারের চিনি, ২০০ মিলিয়ন ডলারের পিঁয়াজ ও ১১৩ মিলিয়ন ডলারের শুকনো মরিচের আমদানি বাড়ে।
অন্যদিকে চীন থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৪৫ মিলিয়ন ডলারের রসুন, ২৭ মিলিয়ন ডলারের আদা, প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলারের জিরা ও ১২ মিলিয়ন ডলারের দারুচিনির আমদানি হয়। আগের অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ এ ৩৪ মিলিয়ন ডলারের রসুন আমদানি বাড়ে। একইভাবে ৩০ মিলিয়ন ডলারের আদা, ৯ মিলিয়ন ডলারের দারুচিনি আমদানি করতে হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, কৃষিজমি বিলুপ্তি, সঠিক গবেষণার অভাব, জলবায়ু পরিবর্তন, উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাসসহ নানা জটিলতায় দেশের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বিপরীতে আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে প্রতি বছর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে জমির পরিমাণ তিন কোটি ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার একর। এর মধ্যে দুই কোটি ৮১ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হয়। এছাড়া প্রায় ছয় লাখ ৭১ হাজার একর জমি আবাদযোগ্য হওয়ার পরও তা চাষের আওতায় আসেনি।
এদিকে ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে আবাদি জমি ১৯ দশমিক ৮৩ লাখ একরে নেমে এসেছে, যা আগে ছিল ২০ দশমিক শূন্য ৮ লাখ একর। তিন বছরে আবাদি জমি কমেছে ১ শতাংশ, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ হ্রাসের ঘটনা।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষিজমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সাল পরবর্তী ১২ বছরে দেশে প্রতিবছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, চাহিদামতো ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদেরই শুধু নয়, বরং বিশ্বের কোনো দেশের পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতা নেই। কোনো দেশের সক্ষমতা থাকলে তাদেরও উচিত হবে না সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন করা। তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত পণ্য আমাদের চাহিদার জন্য যথেষ্ট নয়। তাছাড়া উৎপাদন খরচ বাড়ায়, কম খরচে একই পণ্য আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা উত্তম। তবে খেয়াল রাখতে হবে- রপ্তানি ও আমদানিতে আমাদের ভারসাম্য বজায় থাকতে হবে। এমন যেন না হয়, খাদ্যের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমদানি খরচে যাতে ঋণে ডুবে না যাই।