শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষণ ও ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ ◈ রাজধানীর পল্লবীতে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা ◈ ব্রহ্মপুত্রে চীনের দৈত্যাকার বাঁধ: ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগ উপেক্ষা করেই প্রকল্পের উদ্বোধন ◈ জাতীয় মানবাধিকারের নামে সমকামিতার অফিস করতে দিবো না: মামুনুল হক ◈ মির্জা ফখরুলের ভাইয়ের ওপর হামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার ◈ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন কী কাজ করবে, কেন কিছু দলের আপত্তি? ◈ গডফাদার’ মন্তব্য ঘিরে উত্তেজনা: চকরিয়ায় এনসিপির বিরুদ্ধে বিএনপির তীব্র প্রতিক্রিয়া (ভিডিও) ◈ গোপালগঞ্জে কারফিউর সময় বাড়ল ◈ চরমপন্থা ও ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের আশঙ্কা: সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান তারেক রহমানের ◈ অনেকেই এখনো ভাঙার কাজে ব্যস্ত, কিন্তু গড়ার কাজে কাউকে পাওয়া যায় না: মাহফুজ আলম

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০২৫, ০৩:৪৮ রাত
আপডেট : ২০ জুলাই, ২০২৫, ১২:০২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে?

অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক নানা উদ্বেগ এবং বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর শুল্কনীতির আবহে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, যেখানে বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো দরকষাকষির মাধ্যমে তুলনামূলক কম শুল্কে বাণিজ্য সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে।

চুক্তির মূল বিষয় ও শর্তাবলী

বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তিতে বাংলাদেশের সামনে একাধিক গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

১. অর্থনৈতিক লেভারেজের অভাব: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সুবিধা পেতে দরকষাকষির জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কম। ইন্দোনেশিয়া যেমন বোয়িং বিমান বা ভারত যেমন যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব দিয়ে সুবিধা আদায় করছে, বাংলাদেশের তেমন বড় কোনো ক্রয়ের সক্ষমতা নেই।

২. কঠিন ও সার্বভৌমত্ব-বিরোধী শর্ত:
নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ: যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে বাংলাদেশকেও তা মানতে হবে।
প্রতিরক্ষা সম্পর্ক: চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বা সমরাস্ত্র বিষয়ক সম্পর্ক রাখা যাবে না, এমন শর্ত থাকতে পারে।
আমদানি বাধ্যবাধকতা: যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে গম, সয়াবিন এবং দীর্ঘমেয়াদে উচ্চমূল্যে এলএনজি (LNG) আমদানির জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক নাও হতে পারে।

৩. ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিগুলোকে মূলত چینকে মোকাবেলার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে ভারতের মতো ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাংলাদেশের নেই, ফলে দরকষাকষিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।

প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সাফল্য

  • ইন্দোনেশিয়া: ৩২% শুল্কের হুমকির পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৯% শুল্কের সুবিধা আদায় করেছে।

  • ভিয়েতনাম: ২০% শুল্কে বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।

  • ভারত: চীনের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ২০ শতাংশের কম শুল্কে চুক্তি চূড়ান্ত করার পথে এগোচ্ছে।

  • অন্যান্য দেশ: মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডও চুক্তি চূড়ান্ত করার পথে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সমালোচনা

  • ড. আব্দুর রাজ্জাক (র‍্যাপিড): এটি একটি "অসম বাণিজ্য আলোচনা", যেখানে ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলোই মুখ্য। বাংলাদেশের দরকষাকষির সুযোগ খুব কম।

  • ড. সেলিম রায়হান (সানেম): প্রস্তুতির ঘাটতি এবং সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো চুক্তির বিষয় জনগণকে জানাচ্ছে এবং বিশেষজ্ঞ মতামত নিচ্ছে, কিন্তু NDA-এর অজুহাতে বাংলাদেশে অস্বচ্ছতা রয়ে গেছে। ভিয়েতনামের মতো কার্যকর লবিস্ট নিয়োগেও বাংলাদেশ পিছিয়ে।

  • এম মাশরুর রিয়াজ (পলিসি এক্সচেঞ্জ): সরকারের পদক্ষেপে কৌশলের অভাব রয়েছে। দরকষাকষিতে নির্দিষ্ট কোনো নেতৃত্ব নেই এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়াও দুর্বল। বাণিজ্য ইস্যুর চেয়ে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়গুলো যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে দেরি হয়েছে।

সরকারি পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

  • আলোচনা: বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুই দফা আলোচনা শেষ করেছে এবং তৃতীয় দফার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটি অবস্থানপত্র তৈরির জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে।

  • রাজনৈতিক উদ্বেগ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চুক্তির নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

উপসংহার

সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশ একটি জটিল বাণিজ্য আলোচনার মধ্যে রয়েছে, যেখানে অর্থনৈতিক সুবিধার চেয়ে ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্তগুলো বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে রফতানি বাজার রক্ষার চাপ, অন্যদিকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার চ্যালেঞ্জ—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখেই অন্তর্বর্তী সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়