শিরোনাম
◈ নিয়ম ভেঙ্গে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে যৌনতার ফাঁদ, ১০৩ কোটি টাকার ব্ল্যাকমেল কাণ্ডে ধরা ‘মিস গলফ’ সীকা (ভিডিও) ◈ যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে! ◈ মিরপু‌রে আজ সন্ধ‌্যায় সি‌রি‌জের প্রথম ম‌্যা‌চে বাংলাদেশ-পাকিস্তান মু‌খোমু‌খি ◈ ১০৪ রানের বড় জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জিত‌লো বাংলাদেশের যুবারা ◈ প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানালেন জামায়াত আমির ◈ ফ্রান্স সেনা প্রত্যাহার করায় ৬৫ বছর পর মুক্ত হ‌লো সে‌নেগাল, আর কোনো ঔপনিবেশিক শক্তির আনুগত্য নয় ◈ নির্বাচন নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জে ইসি ◈ খেলা দেখ‌তে স্টে‌ডিয়া‌মে খাবার নিয়ে ঢুকতে পারবেন দর্শকরা ◈ র‌মিজ রাজা ও আ‌মির সো‌হেল ধারাভাষ‌্য দে‌বেন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজে ◈ বৃটেনে বাংলাদেশি প্রভাবশালীদের সম্পত্তি লেনদেন নিয়ে গার্ডিয়ানের বিস্ফোরক প্রতিবেদন

প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:১৪ রাত
আপডেট : ০২ জুলাই, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বৈষম্য কমবে আসন্ন বাজেটে, অগ্রাধিকার পাচ্ছে যেসব খাত

প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে আসন্ন বাজেটের অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্নআয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একইসঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসন ও সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং খাদ্য, আবাসন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন করে সমতাভিত্তিক দেশ গঠন। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে থাকবে বিভিন্ন রকম সংস্কার কার্যক্রম, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান-বিনিয়োগ বৃদ্ধি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তুত করার অপেক্ষায় থাকা নতুন বাজেটের আকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য যে ঘাটতি ধরা হচ্ছে, সেই ঘাটতির অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকিটা ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের ব্যয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।

মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য : দেশে বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকলেও তা বাজেট লক্ষ্যমাত্রায় ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। এ জন্য বাজেটে কিছু নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হলেও গত মাসে তা সংশোধন করে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির প্রাক্কলন অনুযায়ী, এই হার ৫ শতাংশ অর্জন করাও সম্ভব হবে না।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সরকার মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরও মূল্যস্ফীতির একই হারই ছিল। নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা রয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। মূলত, আগামী বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বাজেট ঘাটতি ধরা হতে পারে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নতুন বাজেট উপস্থাপন করতে পারেন। সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থান করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন।

এনবিআর-এর মাধ্যমে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা : অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে সরকারের আয়ের লক্ষ্য হতে পারে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো। বাকি টাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থা, সঞ্চয়পত্র ও বিদেশি উৎসসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থেকে সংগ্রহ করতে হবে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এনবিআর ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিতে চাইলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বাবদ ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থাকলেও আগামী বাজেটে এডিপি বাবদ বরাদ্দ ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

অগ্রাধিকার পাচ্ছে যেসব খাত: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সবুজ ও জলবায়ুসংক্রান্ত প্রকল্প বিশেষ গুরুত্ব পাবে। একই সঙ্গে নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। সমাজে বৈষম্য কমানোর পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও থাকবে। নতুন বাজেটে থাকছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগীর সংখ্যা ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের নতুন অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় আসন্ন বাজেটে বৈদেশিক ঋণ কিংবা অনুদানে বাস্তবায়ন হচ্ছে এসব প্রকল্পে এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব করতে হবে। পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এসব প্রকল্পের জন্য অগ্রাধিকার বিবেচনায় আনতে হবে। এ ছাড়াও মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট এমন সব প্রকল্পে এডিপির আওতায় আনা । তবে এসব প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের চাহিদা প্রস্তাব করতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। এ ছাড়াও প্রকল্পভিত্তিক চাহিদা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পাশাপাশি আগামী ২০২৬-২৭, ২০২৭-২৮ অর্থবছরের বরাদ্দের প্রক্ষেপণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রাথমিকভাবে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য সেক্টরের আওতাধীন ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এসব সেক্টরের মাল্টি ইয়ার পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম তেরি হবে। যে কারণে বেশকিছু বিবেচনায় নিতে হবে বলে সরকারের নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

‘বাজেট বড় করার ইচ্ছা সরকারের নেই’: বাজেটের আকার প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, সরকারের আয়ের অবস্থা ভালো নয়। অথচ ব্যয়ের চাপ আছে। এ কারণেই অর্থনীতির বিদ্যমান বাস্তবতায় আগামী বাজেট বড় করার ইচ্ছা সরকারের নেই। সরকারকে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চলতি অর্থবছরে নিত্যপণ্য আমদানিতে অনেক শুল্ক ছাড় দিতে হয়েছে। শুল্ক ছাড়ের কারণে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণে সরকারকে নতুন করে শতাধিক পণ্যে ভ্যাট আরোপ করতে হয়েছে। সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যয়ের ক্ষেত্রে লাগাম টানবে, এটি নিশ্চিত। 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট করা হচ্ছে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ করতেই আকার কমানো হচ্ছে। আগামী ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে সোমবার (২ জুন) বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, অর্জনযোগ্য, বাস্তব সম্মত বাজেট হওয়া উচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেটের আকার আরও ছোট হওয়া উচিত। যা বাস্তবায়ন যোগ্য।

আসন্ন বাজেট সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি হবে বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেটে। এ বাজেটের মাধ্যমে বিদ্যমান সমাজে বৈষম্য কমানোর রোডম্যাপ থাকবে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে আসন্ন বাজেটের অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। উৎস: বাংলাট্রিবিউন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়