রহিদুল খান, যশোর: মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ, নেংগুড়াহাট এলাকার ধোপাডাংগা গ্রামের বাজন্দারপাড়া গরমের হাতপাখা তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ। এখানকার বাসিন্দারা যেন হাতপাখা তৈরির কারিগর নন শিল্পী। আর বৈশাখের এ প্রচন্ড- গরমে এসব শিল্পীরা এখন ব্যাপক ব্যস্ত। স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা পরিবারের সকলেই এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। পাখা তৈরি করে তাদের জীবনে এসেছে স্বচ্ছলতা।
উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের ধোপাডাংগা গ্রামের বাজন্দারপাড়ায় বাস ১৫ থেকে ২০পরিবারের। হাতপাখা তৈরি করে চলে এসব পরিবারের জীবন ও জীবিকা। তাল গাছ থেকে পাতা কেটে রোদে শুকাতে ও পাখা তৈরি করতে নির্ঘুম সময় পার করছেন এখানকার বাসিন্দারা। পাখা বিক্রি করেই বদলিয়েছেন ভাগ্য।
হাতপাখা তৈরির কারিগর আলিফ (৪০) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ আমাদের বাপ দাদা পূর্বপুরুষরা করে আসছেন। স্থানীয় অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, বহুবছর বছর ধরে তালপাতা দিয়ে বাহারি রঙয়ের হাতপাখা তৈরি করে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। বসন্তের শুরু থেকে বর্ষার শেষ পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। যদিও পাখার চাহিদা থাকে ১২মাস। বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রচন্ড গরম তাপদাহে তাই পাখার চাহিদা বেশি।
এখানকার তৈরি গ্রামের হাত পাখা যশোর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হয়। স্থানীয় গ্রাম-গঞ্জে পাড়া মহল্লায়ও বিক্রি করে খুচরা ব্যবসায়িরা। ১২ থেকে ১৫ টাকা খরচ হয় একটি পাখা তৈরিতে। ব্যাপক চাহিদার কারণে তা বিক্রি হয় পাইকারি ২০-৩০ টাকা।
পাখা তৈরির কারিগর আলিফ ও তার স্ত্রী নাহার বেগম আরশাদ আলী ও আকবার বলেন, বংশ পরম্পরায় পাওয়া এ ব্যবসা থেকে এক সময় সংসার চালানো ছিল কষ্টসাধ্য। তারপরও বর্তমানে চাহিদার ব্যাপকতায় ব্যবসা বেড়েছে। এ ব্যবসা করেই ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। থাকার মত পাকা ঘর তৈরি করতে পেরেছি। মাঠে কিছু জমিও হয়েছে।
পাখা তৈরি কারিগার মান্দার বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে তাদের ব্যবসার মোড় ঘুরেছে। প্রতিটি বাড়িতে খড়ের ঘরের স্থানে টিনের, চারচালা অথবা পাকা ঘর উঠেছে। এসব কারিগররা বলেন, অধিক পুজি থাকলে শীতের সময় পাখা তৈরি করে মজুদ করতে পারলে ব্যবসা আরো ভালো হতো। অন্যদিকে এ ব্যবসার শ্রমিকরাও কাজ পেতো। এসব কারিগররা বলেছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ব্যবসার প্রসার যেমন সম্ভব তেমনি কারিগরা-শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থান হবে। সম্পাদনা: ইস্রাফিল ফকির
প্রতিনিধি/আইএফ/জেএ