হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতী নদীর ডান-তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই কয়েকটি অংশ ধসে পড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এতে নদীর তীরে বসবাসকারী শতাধিক পরিবারের মধ্যে নতুন করে ভাঙনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের দুর্বল তদারকি এবং যথাযথ ডাম্পিং না করে সিসি ব্লক বসানোর কারণেই বাঁধটি ভেঙে গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, যেহেতু প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান, তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা এখনো বুঝে নেয়নি। কাজে কোনো অনিয়ম হলে তার দায়ভার ঠিকাদারকেই বহন করতে হবে।
সরেজমিন পরিস্থিতি ও প্রকল্পের বিবরণ
আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের মিলনস্থলে অবস্থিত চর আজমপুর এলাকায় মধুমতী নদীর ডান-তীর রক্ষায় ৩০০ মিটার বাঁধের নির্মাণকাজ করছিল মেসার্স লিটন মল্লিক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি টানা বৃষ্টির কারণে বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে, যার ফলে সিসি ব্লকগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, মধুমতী নদীর পূর্ব পাড়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তীব্র ভাঙন চলছিল। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, স্কুল-মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই ভাঙন রোধে 'মধুমতী নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন' নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় মোট সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।
২৮টি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্পের ২ নম্বর প্যাকেজের আওতায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স লিটন মল্লিক। কাজটি প্রায় শেষের দিকে হলেও আকস্মিক ধসে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভ ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
হান্নান শরীফ (৬৩) নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “বাঁধ নির্মাণ শুরু হলে আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই যদি তা ভেঙে যায়, তাহলে আমাদের বাড়িঘর রক্ষা পাবে কী করে?” আরেক বাসিন্দা শেফালী বেগম (৫৫) বলেন, “স্থায়ী বাঁধ হবে ভেবে ধারদেনা করে ঘর তুলেছিলাম। এখন যদি বাঁধই ভেঙে যায়, তাহলে আমাদের আর কিছু করার থাকবে না।”
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন মল্লিকের ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জানান, নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধের কিছু অংশ ধসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামতের কাজ চলছে। নদীর পানি কমলে পুরো অংশ মেরামত করে দেওয়া হবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও, দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী মো. তৌফিকুর রহমান জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ধসে যাওয়া অংশের কাজ পুনরায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”