জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর সদর ও নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী সাত গ্রামের মানুষের যাতায়াত এখন সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে একটি বাঁশের সাঁকোর ওপর। দুই বছর আগে মাটিবাহী একটি ট্রাকসহ সেতুর মধ্যমাংশ ভেঙে পড়ার পর থেকে আর সংস্কার হয়নি সেতুটি। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা নিজস্ব অর্থায়ন ও শ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের সঙ্গে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ সহজ করতে ২০০৮ সালে কামার বাড়ি সড়কের রহমতখালি খালের ওপর লোহার স্প্যান দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। তবে নির্মাণে ত্রুটি থাকায় দীর্ঘদিনের ব্যবহারে দুর্বল হয়ে পড়ে সেতুটি। ২০২৩ সালে একটি ট্রাকসহ সেতুর মধ্যভাগ ধসে পড়ে। এতে দুই পাড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এরপর স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করলেও সেটি দিয়ে চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগে পড়ছে দুই পাশের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ছেন স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা এবং হাসপাতালগামী রোগীরা। জরুরি প্রয়োজনে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা দ্রুত সেতু পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী মো: হাসান, কবির আহমেদ ফারুকসহ অনেকে জানান, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গনিপুর, রাজাপুর, ছোট বল্লভপুর এবং বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানুল্লাহপুর, কামালপুর, দেবীদ্বিপুর ও বালুচরা গ্রামের মানুষ প্রতিদিন বাঁশের ওই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হচ্ছেন। দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের ঘটনা। সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা পা পিছলে খালে পড়ে যাচ্ছে। গুরুতর আহতও হয়েছে অনেকে। যানবাহন চলাচল করতে না পারায় নারী, শিশু ও রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই সাঁকো এড়িয়ে বিকল্প পথে জেলা সদর ঘুরে দীর্ঘপথ পাড়ি দিচ্ছেন।
চন্দ্রগঞ্জ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফখরুল ইসলাম, স্থানীয় শিক্ষক রুহুল আমিন ও শিক্ষার্থী সানজিদা জানান, নিকটবর্তী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় গনিপুর এলাকার প্রায় ৮-৯ শতাধিক ছাত্রছাত্রী প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে ওই বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বেগমগঞ্জের বালুচরা ইব্রাহিম মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, হাসানিয়া আলিম মাদ্রাসা, বালুচরা সমাজকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুচরা কিন্ডারগার্টেন ও ইব্রাহিমিয়া হাফেজী মাদ্রাসায় যাতায়াত করে। এ সময় অনেকে খালে পড়ে হাত-পা ভাঙে, বই-খাতা ও ড্রেস ভিজে নষ্ট হয়। এতে অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক জানান, চন্দ্রগঞ্জ কামারবাড়ি সড়কের সাথে রহমতখালী খালের ওপর ভাঙা সেতুটিকে অন্তর্ভুক্ত করে ১০০ মিটার প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই এর সুফল ভোগ করবে জনগণ।”
দুই জেলার শিক্ষার্থীসহ প্রায় সাত গ্রামের মানুষদের যাতায়াতে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করছে। অনেকেই খালে পড়ে আহত হচ্ছে, বই-খাতা ভিজে যাচ্ছে, ড্রেস নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয়রা আশাবাদী, দ্রুত সেতু নির্মাণের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং দুর্ভোগ কমবে।