ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর বৃহত্তম গরুর হাট ‘সিটি হাট’-এ গরু নিয়ে আসার পথে বুধবার সকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) অভিযানে ২২টি গরু জব্দ করা হয়েছে। গরুগুলোর মোট মূল্য প্রায় ৪১ লাখ টাকা বলে দাবি করেছেন ব্যাপারীরা।
ব্যাপারীদের অভিযোগ, পবা উপজেলা থেকে গরু নিয়ে আসার সময় রাজশাহীর এয়ারপোর্ট থানার বায়া বাজার, বাকশারা ও দুয়ারী মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব গরু জব্দ করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বিজিবি-১ এর বিভিন্ন অভিযানিক দল এই অভিযান পরিচালনা করে।
শাফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যাপারী জানান, তিনি একটি নশিমনে করে পবা থেকে ছয়টি গরু নিয়ে আসছিলেন। বায়া বাজার এলাকায় বিজিবি সদস্যরা গাড়ি থামিয়ে গরুগুলো আটক করেন। তার দাবি, এসব গরুর বাজারমূল্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা।
একইভাবে বাকশারা এলাকা থেকে রবিউল ইসলাম ও রুবেলের আটটি গরু এবং আতিকুল ইসলামের আরও আটটি গরু জব্দ করা হয়। গরুগুলোর আনুমানিক মূল্য যথাক্রমে সাড়ে ৯ লাখ ও সাড়ে ১৫ লাখ টাকা বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ গরু ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদাররা বুধবার দুপুরে রাজশাহীর বিজিবি সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক অবরোধ করেও বিক্ষোভ জানান।
হাট ইজারাদার শওকত আলী, শেয়ারদার খায়রুল আলম, রুহুল আমিন টুনু এবং পিন্টুর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
হাট ইজারাদারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজিবি কর্মকর্তারা তাদের আশ্বস্ত করেছেন— যাদের গরুর বৈধ কাগজপত্র আছে, তারা কাস্টমস অফিসে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের আগে আর কোনো গরু আটক করা হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে দেশীয় গরু সংগ্রহ করে হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। গরুগুলোর যথাযথ কাগজপত্র ও ছাড়পত্র তাদের কাছে ছিল বলেও দাবি তাদের।
ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা তানোরের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে গরু কিনে এনেছি। সবগুলো দেশীয় গরু, কোনোটিই ভারতীয় নয়।”
ব্যাপারীদের অভিযোগ, এমন ঘটনার ফলে অনেকেই হাটে গরু আনতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন। ইতোমধ্যেই ব্যবসায়িক ক্ষতি ও দেনার দায়ে অনেকে পথে বসার উপক্রম হয়েছেন।
অন্যদিকে, বিজিবির পক্ষ থেকে সরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না মিললেও, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “জব্দ করা গরুগুলো ভারত থেকে চোরাই পথে আনা হয়েছে এবং সেগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
এর আগে গত রোববারও বিজিবির অভিযানে ১৩টি গরু জব্দ করা হয়, যেগুলো পরে নিলামে বিক্রি হয় সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় বলে জানিয়েছেন হাট ইজারাদার রুহুল আমিন টুনু।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের সাথে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার নেতৃবৃন্দ।