শিরোনাম
◈ আবারও শাহবাগ অবরোধ করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহতরা ◈ গেজেট প্রকাশের পরই আ. লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি ◈ লড়াই রা‌তে, জিত‌লে বা‌র্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন ◈ পরিবারে মা হচ্ছেন এক বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান, খালেদা জিয়াকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা তারেক রহমানের ◈ পাকিস্তানের শক্ত জবাবেই যুদ্ধবিরতি করতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয় ভারতঃ সিএনএনের সাংবাদিক (ভিডিও) ◈ মেসির গোলে কাজ হয়‌নি, বড় ব্যাবধা‌নে হে‌রে গে‌লো ইন্টার মায়ামি ◈ জনরোষ ঠেকাতে লুঙ্গি-গেঞ্জি-মাস্ক পরে বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ, গোপনে তুলে দেওয়া হয় বিমানে ◈ রেকর্ড হ্যাটট্রিকসহ সরলথের চার গোল, জিত‌লো অ্যাথ‌লে‌তি‌কো মা‌দ্রিদ ◈ আরব আমিরাতের বিরু‌দ্ধে দুই ম‌্যা‌চের ‌টি- টো‌য়ে‌ন্টি খেল‌বে বাংলাদেশ  ◈ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় চীনা জে-১০সি জেটের উত্থান: রাফায়েল ভূপাতিত, বিশ্বজুড়ে চীনা অস্ত্রপ্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধি

প্রকাশিত : ০৯ মে, ২০২৫, ০৫:১৬ বিকাল
আপডেট : ১১ মে, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোন রোহিঙ্গাকে থাকতে না দেয়ার ঘোষণা আরাকান আর্মির, সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে হাজারও রোহিঙ্গা

হাবিবুর রহমান সোহেল,কক্সবাজার : আরাকান আর্মি ঘোষনা করেছে তাদের রাজ্যে কোন রোহিঙ্গা থাকতে দিবে না। তাই  তাদের ভূখণ্ড থেকে পলায়ন থামছে না রোহিঙ্গাদের। সহিংসতা, নিপীড়ন ও চরম খাদ্যসংকটের কবলে পড়ে প্রতিদিনই টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পেরিয়ে নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে হাজারো রোহিঙ্গা।
 
অথচ উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলো ইতোমধ্যে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি বোঝা বইছে। সরকারি সূত্র মতে, শুধু গত দেড় বছরেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে ১ লাখ ১৮ হাজার নতুন রোহিঙ্গা। এর ফলে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১৩ লাখ ছাড়ালেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, নতুন আসাদের বড় একটি অংশ এখনো ক্যাম্পভুক্তই হয়নি। উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবির ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ সরকারকে নতুন ঘর বরাদ্দের অনুরোধ জানালেও এখনো কোনো কার্যকর সাড়া মেলেনি।
 
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (RRRC) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনো কেউ পুনর্বাসিত হয়নি। ফলে তারা অস্থায়ীভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে। রোহিঙ্গাদের ভাষ্য বলছে, আরাকান আর্মি (AA) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (ARSA) মধ্যে চলমান সংঘাতই এই নতুন ঢলের মূল কারণ। AA রোহিঙ্গাদের আরসা সমর্থনের অভিযোগ তুলে অপহরণ, হত্যা ও জোরপূর্বক সামরিক কাজে নিয়োজিত করছে। বুথেডং অঞ্চলে রোহিঙ্গা যুবকদের ব্যারাক নির্মাণে বাধ্য করা হচ্ছে। খাদ্য, ওষুধ এবং নিরাপত্তাহীনতা চরমে।
 
শালবন আশ্রয়শিবিরে সদ্য পৌঁছানো জাকের জানান, 'ঘরবাড়ি দখল করে ধানচাল লুটে নিচ্ছে আরাকান আর্মি। কেউ যদি আপত্তি জানায়, তাকে অপহরণ করে কাজ করানো হচ্ছে।' এমন চিত্রই তুলে ধরেছেন আবদু রহমান, মো. হোসেন ও কামলাসহ আরও অনেক রোহিঙ্গা। তাদের দাবি, বাংলাদেশে প্রবেশ করতেও মাথাপিছু পাঁচ হাজার কিয়াত ঘুষ দিতে হচ্ছে দালালদের।মহেশখালী, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী ও পতেঙ্গা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি।
 
বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএম ইমরুল হাসান বলেন, "কাঁটাতারহীন, দুর্গম সীমান্তে অভিযান চালিয়ে দালাল ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ একসঙ্গে ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সীমিত জনবল ও বাজেটের ঘাটতি সত্ত্বেও বিজিবি দিনরাত দায়িত্ব পালন করছে।" তিনি জানান, স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের একাংশ অপরাধে যুক্ত থাকায় চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও মাদকের সিন্ডিকেট একে অপরের পরিপূরক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা ঢলের আড়ালে বিপুল পরিমাণ মাদক আসছে সীমান্ত পেরিয়ে।
 
এ পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। ১২ মে কক্সবাজারে হবে জরুরি বৈঠক। এই কমিটির আহ্বায়ক সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা। জানা গেছে, ২০১৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার একজনকেও এখনও ফেরত পাঠানো যায়নি। বর্তমান বাস্তবতায় নতুন অনুপ্রবেশ ঠেকানো যেমন কঠিন, প্রত্যাবাসনের কথাও এখন অলীক কল্পনা। রোহিঙ্গা নেতা ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, "মংডু শহর দখলের পর আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের টার্গেট করছে। ঘরে ঘরে চলছে নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ এই চাপ আর বইতে পারবে না।" শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমানও বাস্তবতার কথা স্বীকার করেছেন, "নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্পে স্থান বরাদ্দের অনুরোধ থাকলেও সরকার সাড়া দেয়নি। পুরনো ক্যাম্পে তাদের গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে।
 
” সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত নজরদারির পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা চেয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান। তিনি জানান, "দুর্গম অঞ্চলে রাতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা সবচেয়ে বেশি। আমরা প্রতিরোধ করছি, ফেরত পাঠাচ্ছি। তবে সীমান্ত বন্ধে স্থানীয়দেরও সচেতন হতে হবে।" নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক কনসাল জেনারেল মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, "এই সংকট শুধু সীমান্ত বা ক্যাম্প নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আন্তর্জাতিক সমাধান ছাড়া এ স্রোত থামানো সম্ভব নয়।"
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়