শিরোনাম
◈ কলকাতায় ভাঙচুরের ঘটনায় লিওনেল মেসি দায়ী: সু‌নিল গাভাস্কার ◈ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের আমানত ফেরত দেওয়ার নির্দেশ গভর্নরের ◈ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা ছাড়া ভারত বিজয় অর্জন করতে পারতো না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ◈ সৌদিতে হলরুম ভাড়া করে নির্বাচনী সভা করায় কয়েকজন বাংলাদেশি আটক ◈ হিমালয়ের গভীরে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থা তৈরি করছে চীন ◈ ইউক্রেনের সাথে আপস প্রত্যাখ্যান করেছেন পুতিন ◈ ৩০০ আসনের লড়াই: আসন ছাড়ে অনীহা, জোট রাজনীতিতে বাড়ছে টানাপোড়েন ◈ হাদিকে গুলি: প্রধান অভিযুক্তের ‘জামিন বিতর্ক’ নিয়ে যা বললেন আইন উপদেষ্টা ◈ পে স্কেল নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে যে সিদ্ধান্ত নিল কমিশন ◈ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ট্রাভেল পাস চাননি তারেক রহমান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ০১ আগস্ট, ২০২৪, ০৫:০১ বিকাল
আপডেট : ১৫ মে, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজার শহরে স্পার আড়ালে রমরমা দেহ ব্যবসা, মামলায় আটক ১

হাবিবুর রহমান, কক্সবাজার: [২] স্পা নামটি উন্নত বিশ্বের পর্যটন এলাকায় পেশাদার থেরাপি সেন্টার হিসেবে পরিচালিত হলেও বর্তমানে পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে সে স্পা সেন্টার নামক পতিতালয়। এসব উন্নত মানের পতিতালয়ে প্রতিনিয়ত দেশের দুরদুরান্ত থেকে আসা নানা শ্রেণীপেশার মানুষ থেরাপী নিতে গিয়ে প্রতারণাসহ নানা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। 

[৩] অনেক মেয়েদের থেরাপী সেন্টারে চাকরির নাম করে, এনে পতিতাবৃত্তিতে বা দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আর এসব অনৈতিক কাজ করতে কেউ অনিহা প্রকাশ করলে, নেমে আসে নানা অত্যাচার ও মারধরের মতো ঘটনা। শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে ব্ল্যাক রোজ স্পার নামক পতিতালয়ে এমনই এক অত্যারের ঘটনায়, স্পা মালিক বহুল আলোচিত সিরাজুল ইসলাম সাজুসহ ২ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে এক ভোক্তভোগী নারী। 

[৪] এই ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে, স্পা ম্যানেজার শহরের চিহ্নিত বখাটে লিংরোড় এলাকার মোঃ কাসেম প্রকাশ রাজুকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। তবে ঘটনার মুলহোতা সিরাজুল ইসলাম সাজু পালিয়ে গেছে বলে পুলিশ জানান। 

[৫] কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত মশিউর রহমান জানান, অপরাধীদের দ্রুত গেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। 

[৬] মামলার এজাহার সুত্রে জানা মামলার বাদী শম্পা বেগম জানায়, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে ব্ল‍্যাক বোজ স্পা সেন্টার নামীয় কতিত থেরাপী সেন্টারে চাকুনী করিয়া আসিতেছি। উপরোক্ত ১নং আসামী উক্ত স্পা সেন্টারের ম্যানেজার হিসাবে চাকুরী করে এবং ২ন আমামী উক্ত স্পা সেন্টারের মালিক সাজু। বিগত কিছুদিন ধরে ১নং আসামী আমার প্রতি কুদৃষ্টি নিয়া আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়া আনিতেছিল। এমনকি ইতিপূর্বে সে আমাকে তাহার সহিত ও পরিচিত লোকের সহিত ওই স্পা সেন্টারে ও আবাসিক হোটেলে নিয়ে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। ইহাতে আমি রাজি না হইলে সে আমার প্রতি চরম ক্ষুদ্ধ হইয়া উঠে। বিষয়টি আমি উক্ত স্পার মালিক ২নং আসামীকে জানাইলে, সে কোন ব্যবস্থা না নিয়া উল্টো ১নং আসামীর উক্তরূণ কর্মকান্ডে মৌন সমর্থন যুগাইয়া বিভিন্ন কুপ্ররোচনা দিতে থাকে। 

[৭] একপর্যায়ে ঘটনার দিন ২৯/০৭/২০২৪ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৬ ঘটিকার সময়। ঘটনাস্থল কক্সবাজার সদর থানাধীন কক্সবাজার পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের কলাতলী সড়কস্থ কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে ব্ল্যাক রোজ স্পা সেন্টার নামীয় দোকানগৃহের রিসিপশন কক্ষে আমি ডিউটি করাকালে অতর্কিতভাবে উপরোক্ত ১নং আসামী আমাকে পিছন দিক হইতে ঝাপটাইয়া ধরিয়া আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করিয়া চরমভাবে যৌন নিপীড়ন করে। এসময় আমি তাহাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টাকালে ২নং আসামীর উপস্থিত হুকুমে ১নং আসামী আমাকে আমার বাম কানে সজোনে ঘুষি মারিয়া বামকানের পর্দা ফাটিয়া দিয়া শ্রবণশক্তি হরণজনিত গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। এক পর্যাদে ১নং আসামী আমাকে গলা টিপে ধরিয়া শ্বাসরোধপূর্বক হত্যার চেষ্টা করে। 

[৮] আমার শোর চিৎকারে আশপাশ লোকজন ও সাক্ষীগণ আগাইয়া আসিয়া আমাকে তাহাদের কবল হইতে উদ্ধার করে, প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করি এবং পরবর্তীতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যাইয়া জখমী চিকিৎসা গ্রহণ করি। বর্তমানে আসামীদ্বয় হুমকি প্রদান করিতেছে যে, ঘটনার বিষয়ে কোন ধরণের মামল মোকদ্দমা করিলে আমাকে পুনরায় মারিবে, কাটবে, খুন-খারানী ইত্যাদি। উপরোক্ত ১নং আসামী তাহ যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে ২নং আসামীর কুপ্ররোচনায় ও সহায়তায় আমাকে আটকাইয়া ধরি শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করিয়া যৌন নিপীড়ন করত। ও মারধরপূর্বক গুরুতর জখম করিল এবং হত্যা চেষ্টা করিয়া বর্ণিত ঘটনার দিন ও সময়ে এহেন জঘন্য ঘটনা সংঘটিত করিয়াছে। 

[৯] ব্ল্যাকরোজ ও চায়না রোজ নামক দুটি স্পায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দালালের মাধ্যম সহজ-সরল সুন্দরী মেয়েদের বেতন না থাকলেও বেশি টাকা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার অবস্থানরত ম্যাসাজ সেন্টারে চাকরি দেয়। তবে তারা জানে না এটা কি চাকরি। অতপর বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও তা আর হয়ে উঠে না। জিম্মি দশায় থাকতে হয় ওইসব মেয়েদের। জোরপূর্বক তাদের অশ্লিল ভিডিও ধারন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করে স্পার মালিকরা। 

[১০] বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, শহরের মোটেল জোন এলাকায় প্রায় ৩০- ৪০টির বেশি স্পা নামক ম্যাসাজ সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে সুন্দরী তরুণী দিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে সেক্স ও মাদক বাণিজ্য। এতে উঠতি তরুণী ও কলেজ ছাত্ররাও জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে জিনিয়া রিসোর্টের ২য় তলায় স্মার্ট থাই স্পা ও কলাতলীর ওয়াল্ডবিচ স্পা। সেখানে প্রতিনিয়তই চলছে দেহ ব্যবসা। এছাড়াও নামে বে-নামের আরও অনেক স্পা সেন্টার রয়েছে। এসব স্পা গুলো বিছু অসাধু ব্যক্তি ও কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন গেস্ট হাউস ও অভিজাত হোটেলে মাসিক রুম ভাড়া নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছে। 

[১১] প্রতিটি স্পা কেন্দ্রে উপজাতিসহ ১০/১২ জন সুন্দরী নারী থাকে। সকাল ৯ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এবং কিছু কিছু স্পা সারা রাতও খোলা থাকে বলে জানা যায়। নিজের ইচ্ছে হলে টাকার বিনিময়ে যৌন চাহিদা মেটাতে পারেন। এছাড়াও রাতে বসে মাদকের আসরও। তবে এই স্পা সেন্টারের বাইরে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও ভিতরে চলে অনৈতিক কর্মকান্ড। কিন্তু স্পা ম্যাসেজ সেন্টারের নামে তরুণী রেখে সেবা দেওয়ার অর্থটা কি। তরুণী দিয়ে জেন্টসদের কি ধরনের সেবা দেওয়া হয় তা তো সহজেই বোঝা যায়। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এধরনের ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রশাসনের ছাড়পত্র নিতে হয়। যা কারও নেই। যদিও ট্রেড লাইসেন্সে এধরনের ব্যবসা উল্লেখ করা নেই। 

[১২] তবে অভিযোগের ভিত্তিতে শহরে অবৈধ ম্যাসাজ পার্লার ও স্পার আড়ালে অসামাজিক বাণিজ্যর বিরুদ্ধে হয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশের বিদায়ী অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে সাড়াশি অভিযান। অভিযানে কয়েকটি ম্যাসাজ সেন্টার বন্ধ হয়ে যায় এবং কয়েকটি  মামলাও হয়। তিনি বদলি হওয়ার পর আবারও বেপরোওয়া হয় এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট দল। 

[১৩] হোটেল মোটেল জোনের অধিকাংশ লোকজন জানান, স্পা নামক এ ব্যবসা হলো অভিজাত পতিতা ব্যবসা। বডি ম্যাসেজের নামে যৌনতা। তারা ব্যবহার করে সুন্দরী নারীদের। এ ব্যবসাগুলো বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানান তারা।

[১৪] কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, এসব বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা: এ আর শাকিল

প্রতিনিধি/এআরএস

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়