মোস্তাফিজুর রহমান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাটি ‘কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা: সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক ও অর্ন্তভূক্তিমূলক পন্থা’ শিরোনামে এবং ‘The Sheikh Hasina Initiative’ হিসেবে সম্প্রতি জাতিসংঘে প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমরা সকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার দুপুরে (৬ জুন) ঢাকা মেডিকেল কলেজ শহিদ ডা: মিলন অডিটোরিয়াম অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক এমপি।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক এমপি, চেয়ারম্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, চেয়ারম্যান, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোঃ কামরুল হাসান মিলন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনে এই রেজুল্যুশনের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেন। তিনি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক এই রেজুল্যুশনের অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, রেজুল্যুশনটির সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয় সফলতা অর্জন করেছে।
তিনি আরো বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন ৫/৬ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বছরে ১৮ কোটি মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, আগে ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা, এ বছর তা বেড়ে ৩৮ হাজার কোটি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে বাজেট আরো কিছু বাড়ানো দরকার ছিল বলে তিনি মনে করেন। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের জন্য একটি সুখবর স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন পাশ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ৮ টি ডিভিশনে ১০ টি পুরাতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ১৯ টি আধুনিক শিক্ষার্থীদের জন্য হোষ্টেল করা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি ৬০০০ গ্রামীণ জনসাধারণের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের লক্ষ্য নিয়েই বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ঘরের খুব কাছে একই ছাতার নীচে স্বাস্থ্যসেবার এতো সহজ সুন্দর পরিবেশ বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নতুন রুপে সজ্জিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ভার্রচুয়ালে বক্তব্য রাখেন তিনি বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্ত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই রেজুল্যুশনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। কারণ এটি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০০ সালে চালু হয় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে প্রতিহিংসার শিকার হয় কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মসূচি। বন্ধ করে দেওয়া হয় কয়েক কোটি মানুষকে সেবাদানের বৈপস্নবিক এ ব্যবস্থা। ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর দেশজুড়ে চালু হয় কমিউনিটি ক্লিনিক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ১৬ মে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ‘কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা : সর্বজনীন স্বাস্থ্যপরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামে গৃহীত এ প্রস্তাবটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সভাপতি ডা. মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী উদ্যোগের স্বীকৃতি দিয়ে এ উদ্যোগকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রস্তাবটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি অনুষ্ঠ সমর্থনস্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এ প্রস্তাবে কো-স্পন্সর ছিল। জাতিসংঘ রাষ্ট্র সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ প্রস্তাব অনুমোদন কে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা অর্জনের বৈশিক প্রচেষ্টায় অবস্মরণীয় মাইল ফলক হিসাবে দেখা হচ্ছে।
স্বাচিবের মহা সচিব অধ্যাপক কামরুল হাসান মিলন বলেন, গ্রামীন জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ পাঠ দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। পরে সংঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন, প্রামান্য চিত্র পরিদর্শন করেন। সম্পাদনা: নাহিদ হাসান
এমআর/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :