শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩, ১২:৪২ দুপুর
আপডেট : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৩:২৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নিপা ভাইরাস

সুস্থ থাকতে খেজুরের রস, বাদুড় ও রুগ্ন শূকর থেকে দূরে থাকুন: ডা. আব্দুল্লাহ

বাদুড়

শাহীন খন্দকার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটরস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেছেন, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ৩৩১ জন মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ২৩৬ জন মারা গেছেন। 

ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, নিপা ভাইরাস এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ। অনেক সময় এই সংক্রমণের কোন লক্ষণ ( যেমন- জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট) নাও দেখা দিতে পারে।

এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি এক বা দুই দিনের মধ্যে অচেতন হওয়ার লক্ষণ রয়েছে। অনেক সময় রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার পরেও মস্তিষ্কে সংক্রমণ ও খিঁচুনির মতো  জটিলতা দেখা দিতে পারে।

Nipah virus

ডা. আব্দুল্লাহ আরো বলেন, নিপা ভাইরাস হল এক ধরনের আর এন এ ভাইরাস যা প্যারামিক্সোভিরিডি পরিবারের হেনিপাহ ভাইরাসের অংশ। এই রোগে সংক্রমিত পশু ও মানুষ থেকে এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। রোগের উপসর্গ ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার করে নিশ্চিত করা যায়। 

তিনি বলেন,  সংক্রমিন থেকে বাচতে বাদুড় ও রুগ্ন শূকর থেকে দূরে থাকতে হবে। অপরিশুদ্ধ খেজুর রস খাওয়া হতে বিরত থাকলে এই রোগ সংক্রমণের হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। 

বাংলাদেশে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিপা ভাইরাসে ৫৮২ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ মানুষ মারা যান। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই রোগের কোন টিকা বা বিশেষ চিকিৎসা ছিলো না।

Nipah virus

অধ্যাপক ডা.  আব্দুল্লাহ বলেন,  এই রোগটি ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রথম দেখা যায়। সুঙ্গাই নিপাহ নামক মালয়েশিয়ার একটি গ্রামের নামে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়। সেই সময় এই রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেই জন্য লাখ লাখ শূকর মেরে ফেলা হয়।

২০১৮ সালে ভারতের কেরালা রাজ্যে এই রোগে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ এবং ভারতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব সংক্রমিত ফলভোজী বাদুড়ের প্রস্রাব অথবা লালা দ্বারা দূষিত ফল বা ফলের পণ্য ( যেমন, কাঁচা খেজুর রস) খাওয়ার ফলে ঘটে। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেক সংক্রমণ রোগীদের সেবাযত্নকারীদের মাধ্যমেই এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

Nipah virus

এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সর্ম্পকে ডা.  আব্দুল্লাহ  জানান,  জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বমি, গলা ব্যথা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা যায়। মাথা ঘোরা, তৃষ্ণা, বেঁহুশ হয়ে যাওয়া, অসংলগ্ন কথা এবং মস্তিষ্কের তীব্র সংক্রমণ জনিত স্নায়বিক লক্ষণ রয়েছে। কিছু লোক নিউমোনিয়া, তীব্র বুক যন্ত্রণাসহ তীব্র শ্বাসকষ্টের সম্মুখীন হয়েও থাকেন। এমনকি ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রুগী অচেতনাবস্থায় চলে যেতে পারেন। অল্পসংখ্যক মানুষ যারা প্রাথমিকভাবে ভালো হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে মস্তিষ্কের সংক্রমণে ভুগতে পারেন।  এই রোগে মৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগটি নির্ণয়ে সাধারণত প্রস্রাব, রক্ত, সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ইত্যাদি শারীরিক তরল থেকে প্রকৃত সময় পলিমারেজ চেন প্রতিক্রিয়া (আর.টি.-পিসিআর)সহ প্রধান পরীক্ষার পাশাপাশি এলাইসা, কোষ কালচার দ্বারা ভাইরাসটিকে শনাক্ত করা যায়। রোগটি থেকে সুস্থ হয়ে উঠার পরেও ইমিউনোগ্লেবিউলিন জি ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম অ্যান্টিবডি শনাক্ত করে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের কোন কার্যকরী চিকিৎসা না থাকায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 

হেন্ড্রা জি প্রোটিন নির্মিত একটি টিকা বানরদের হেন্ড্রা ভাইরাসের সংক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছে, যা হেনিপাহ ভাইরাস ও নিপাহ ভাইরাসের বিরুদ্ধেও অ্যান্টিবডি তৈরি করে। কিন্তু মানুষের ওপর এই টিকার প্রভাব এখনো নির্ণীত নয়।  তবে বর্তমানে দেশে এর চিকিৎসা হচ্ছে।  

তবে সাধারণত শীতকালে বাংলাদেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। ১৯৯৮ সালে প্রথম মালয়েশিয়ার শূকর ও তার চাষীদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। ১৯৯৯ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ১০৫টি মৃত্যুসহ ২৫৬জন মানুষের মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটে এবং সিঙ্গাপুরে একজনের মৃত্যু ও ১১ জনের মস্তিষ্কে সংক্রমণ বা শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দেয়।

২০০১ সালে বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলায় এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়িতে এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ সালে বাংলাদেশের নওগাঁ জেলা, মানিকগঞ্জ জেলা, রাজবাড়ী জেলা, ফরিদপুর জেলা ও টাঙ্গাইল জেলায় এই রোগের প্রকোপ ঘটে। বাংলাদেশে পরবর্তী বছরগুলিতেও এই রোগের প্রকোপ ঘটে। ২০১৮ সালের মে মাসে ভারতের কেরালা রাজ্যের কোঝিকোড় জেলায় এই রোগের প্রকোপ ঘটে, যার ফলে একজন চিকিৎসাকর্মী সেবিকাসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়। 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, সম্প্রতি নবজাতক সন্তান মায়ের কাছ থেকে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পায় বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি)। 

সংস্থাটি বলছে, প্রথমবারের মতো নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির থেকে অন্য জনের দেহে সম্ভাব্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রবাহের নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। 

সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি-এর বিজ্ঞানী ও সহযোগীদের এ নতুন গবেষণার ফল ট্রপিকেল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিতও হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার আনুমানিক ৪০-৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ। এছাড়া নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পরও গুরুতর স্নায়ুবিক জটিলতার শঙ্কা রয়েছে। গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এ জটিলতা আরও খারাপ হতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই রোগটি সংক্রমিত তাই আক্রান্ত ব্যাক্তিকে পরিবারের অন্যান্যদের থেকে পৃথক করে থাকার ব্যাবস্থা করতে হবে। তার ব্যবহারিত বিছানাসহ পোশাক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার সময় মুখে মাক্স হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। কফ্ কাশি এবং নিপাভাইরাসে আক্রান্ত মৃতব্যক্তির বিছানা পোশাক পুঁতে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে রোগী হতে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, খেজুরের রস সংগ্রহ করতে হাঁড়ি পাতার সময়ে হাড়িটি মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে তার ওপরে ডাকনা দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। যাতে বাদুড়, পাখি বসে মল-মুত্র ত্যাগ করতে না পারে।

ডা.  আব্দুল্লাহ বলেন, বাদুড়ের লালা, মূত্রের সংস্পর্শে আসা কোনো ফল যদি কেউ খায়, তখন নিপা ভাইরাস তার দেহে প্রবেশ করতে পারে। খেজুর, পেয়ারা, আম বা লিচুর মতো ফল থেকে সংক্রমণ বেশি হতে পারে। কারণ, এই ফলগুলো বাদুড়ের প্রস্রাব বা লালার মাধ্যমে দূষিত হয়। নিপাভাইরাস মিশ্রিত খেজুরের রস পান করলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

পাখি বা কোনো পশুর খাওয়া ফলমূল এবং গাছ থেকে সদ্য নামানো খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গাছের পরিচর্যা, ফল পাড়া বা খেজুরের রস আহরণের পর স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

যে কোন পাখী ও বাদুড়ে খাওয়া কোন রকম ফল খাওয়া যাবেনা। সেই সঙ্গে ফল খাওয়ার আগে ভালো করে পানি দিয়ে ধুইয়ে এবং পরিস্কার কাপড় দিয়ে মুছে খাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। কারণ এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা ও মেডিসিন নেই, তাই সর্তকতা অবলম্বনের বিকল্প নেই বলে জানালেন তিনি।

এদিকে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, নিপাহভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার অনেক বেশি। জানা গেছে বাদুড় এই ভাইরাস ছড়ায়। বাদুড় থেকে খেজুরের রসে ও রস থেকে মানুষের শরীরে এ ভাইরাস এসেছে। তাই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম

এসকে/এমআই/এইচএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়