শাহীন খন্দকার: প্রোটন থেরাপি এক ধরনের রেডিয়েশন থেরাপি, যেখানে প্রোটন নামের ক্ষুদ্রকণার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের বিনাশ ঘটানো হয়। প্রোটন যদিও এ যুদ্ধে প্রয়োজনীয় রসদের জোগান দেয়, তবে এটি ফোটন থেরাপির মতো, আক্রান্ত টিস্যুর আশেপাশে অন্যান্য সুস্থ টিস্যুর কোনো ধরনের ক্ষতি করে না। ফলে পারিপার্শ্বিক ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় এতে ক্ষতিকর টিউমারের বিনাশ ঘটাতে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।
দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র প্রোটন থেরাপি সেন্টার ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টার (এপিসিসি) চিকিৎসকরা বলেছেন, প্রোটন বিম থেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় সুফলতার কথা। রাজধানীর বনানী শেরাটন হোটেলে শুক্রবার ১ জুলাই রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি প্রয়োগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রোটন বিম থেরাপি এক ধরনের রেডিয়েশন থেরাপি, যার মাধ্যমে প্রোটন নামের ক্ষুদ্রকণার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা সম্ভব বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসময়ে (এপিসিসি) পদ্ধতিতে চিকিৎসা চালিয়ে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীর সুফল পাওয়ার কথাও জানানো হয়।
প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারের সিনিয়র কনসালট্যান্ট রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট ডা. স্বপ্ন নানজিয়া জানান, প্রোটন থেরাপি প্রয়োগে আক্রান্ত টিস্যুর আশেপাশে অন্যান্য সুস্থ টিস্যুর কোনো ধরনের ক্ষতি হয় না। ফলে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় ক্ষতিকর টিউমার ধ্বংস করতে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়। অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতে ২০১৮ সালে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কেউ এপিসিসিতে চিকিৎসা নিতে চাইলে চেন্নাইয়ের এ সেন্টারে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। ডা. নানজিয়া বলেন, তবে ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়লে প্রোটন থেরাপি তেমন কার্যকরী চিকিৎসা দিতে পারে না।
শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসায় এ থেরাপি বেশী ব্যাবহৃত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের চিকিৎসায় এরই মধ্যে অনন্য সাফল্য দেখিয়েছে প্রোটন থেরাপি। এ মুহূর্তে অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা করা হচ্ছে মাথা ও গলার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের।
ডা. নানজিয়া আরো বলেন, মাথা-গলা, স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, পুরানো চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় প্রোটন থেরাপি চিকিৎসা চলাকালীন ও চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে ভোগান্তি একেবারেই কম। কারণ রোগীকে ফের হাসপাতালে ভর্তি কিংবা নলের সাহায্যে খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না।
তিনি বলেন, অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি থাকায় প্রতিটি টিউমার আমরা ধাপে ধাপে এবং স্তরের পর স্তরে পৃথকভাবে পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি।
তবে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা ব্যায় প্রায় ১৫-৪০ লাখ টাকা ব্যায় হতে পারে বলে তিনি জানান। অ্যাপোলো প্রোটন ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নেওয়া জামাল উদ্দিন এ পদ্ধতিকে ফলপ্রসূ বললেও সংবাদ সম্মেলনে এর খরচ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তার ফুসফুসে ৫ সেন্টিমিটার বড় টিউমার ধরা পড়েছিলো। বিভিন্ন চিকিৎসার মধ্যে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার পর তাকে ২০ টি প্রোটন বিম থেরাপি নিতে পলা হয়। প্রোটন থেরাপি সম্পর্কে তখনো জানতাম না আমি। চিকিৎসকদের সাথে কথা হল আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, এতে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে ২০২০ সনের ২৪ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলে। চার মাস পরেই পরীক্ষা করে তার ফুসফুসে টিউমারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আবার এর ৬ মাস পরে আমি ফলোআপে গেলাম। তখনো দেখা গেলো , টিউমারের কোন অস্তিত্ব নেই। এখন আমি সম্পন্নই সুস্থ। যা আমি কখনোই চিন্তা করিনি। কেমো থেরাপির তুলনায় প্রোটন থেরাপি অনেক বেশী সহনীয় বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :