মাজহারুল ইসলাম : গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রথমবার ৬টি কুমির ছানার জন্ম হয়েছে। ডিম থেকে ফোটার পরই ছানাগুলো পানিতে নেমে গেছে। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসব জন্ম কুমির ছানার জন্ম হলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। 

সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, এই পার্কে বর্তমানে ১০টি লোনা পানির ও ৬টি মিঠাপানির কুমির রয়েছে। যা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। পার্ক প্রতিষ্ঠার পর বেশ কয়েকবার কুমির ডিম দিলেও তাতে ছানা ফোটেনি। দেশে লোনাপানির কুমিরের সংখ্যা এখন উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে। মাঝে মধ্যে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু কুমির দেখা যায়। 

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ৬টি ছানার জন্ম হলেও কতগুলো টিকে থাকবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরগুলোকে খাবার হিসেবে মুরগী দিয়ে থাকি। তবে ছানাগুলো জলাধার থেকে শেওলা ও ছোটমাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করছে।

বাংলাদেশের সুন্দরবনের নদীগুলোর লোনাপানিতে এসব কুমিরের একমাত্র আবাসস্থল। এ জাতের কুমিরের জীবনকাল সাধারণত ২৫ থেকে ৭০ বছর। তবে ১০০ বছর বেঁচে থাকার রেকর্ডও রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে মাছ, সাপ, বিভিন্ন উভচর প্রাণী, বানর, হরিণ, এমনকি মানুষও শিকার করতে পারে। সাধারণত ৮ বছর বয়সে কুমির প্রজণনক্ষম হয়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হতে পুরুষ কুমিরের ১৬ বছর এবং মেয়ে কুমিরের অন্তত ১২ বছর লাগে। একেকবারে একটি কুমির ৩০ থেকে ৪০টি ডিম দেয়। বাচ্চা ফুটে বের হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। বাচ্চা ফোঁটাতে নূন্যতম ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। সাধারণত বেশি তাপমাত্রায় পায় যে ডিম তা থেকে পুরুষ ছানার জন্ম হয় আর কম তাপমাত্রা পাওয়া ডিম থেকে মেয়ে কুমিরের জন্ম হয়। লোনা পানির কুমির মিঠাপানির কুমিরের চেয়ে হিংস্র হয়ে থাকে। 

প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইইউসিএন) ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় লোনাপানির কুমিরকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এরা মাংসাশী, লেজ ও পেশীবহুল প্রাণী। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কুমিরের দৈর্ঘ্য ৫-৭ মিটার, ওজন হয় ৪০০-১০০০ কেজি, স্ত্রী কুমির অনেক ছোট, দৈর্ঘ্য ৩ মিটার।

এমআই/এইচএ