শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল, ২০২৩, ০৭:০৫ সকাল
আপডেট : ০১ এপ্রিল, ২০২৩, ১১:৩৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৯০ বছরের গবেষণায় নতুন জাত উদ্ভাবন

হাওরের ধান আর নষ্ট হবে না ঢলের পানিতে

সালেহ্ বিপ্লব: হাওরের কৃষকের জন্য আতঙ্ক মার্চ মাসের চৈতালী ঢল আর এপ্রিলের বৈশাখী ঢল। চোখের সামনে আধা পাকা ধান গাছ তলিয়ে যাবে, ঠেকানোর কোনো পথ নেই; ভগ্ন হৃদয়ে চেয়ে দেখে অসহায় কৃষক। এবার সেই দুর্যোগের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। ঢল আসার আগেই পেকে যাবে, এমন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন দেশের বিজ্ঞানীরা। বাসস

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে কাটা যাবে এমন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন ধান বিজ্ঞানীরা। আগামী বছরই এটি একটি নতুন জাত হিসাবে অনুমোদন পেতে পারে। নতুন প্রজাতির ধানটি হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের হাওরে পরীক্ষামূলক ফলনে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। কৃষি বিজ্ঞানীরা মাঠে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, মাঠভর্তি ফসলের মাঝে একমাত্র তাদের পরীক্ষামূলক জমির ফসল পেকে গেছে। ধান কেটে দেখা গেছে ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি ১৭/১৮ মন, যা ভীষণ আশাব্যঞ্জক। কৃষকরাও আনন্দিত আগাম এই ফসল দেখতে পেয়ে।

২০২০ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সহযোগিতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করে। 

গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের তিনটি হাওরে নতুন উদ্ভাবিত জাতের পরীক্ষণ মাঠের ফলাফল দেখতে যান গবেষণার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস, ব্রির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং গবেষণার মূখ্য পরীক্ষক পার্থ সারথী বিশ্বাস, ইরির বৈজ্ঞানিক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, খাদ্য নিরাপত্তায় স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ধান বিজ্ঞানী ড. আব্দুল মজিদ এবং ব্রির বিজ্ঞানী হাবিবুর রহমান।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ব্রির হবিগঞ্জ স্টেশন ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এর নাম ছিলো ইমপেরিয়াল কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ। সেই সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটি আসাম অববাহিকার হাওরের জন্য উপযোগী জাত উদ্ভাবনের কাজ করে আসছে। 

বিজ্ঞানীরা আগাম বন্যা থেকে রক্ষার জন্য সর্বপ্রথম ১৯৫০ সালে এখান থেকে আবিস্কার করেন হবিগঞ্জ বোরো-৬, যাকে পশুশাইল বলে। এই ধানের মাঝে শীতসহনশীল ও খরাসহনশীল জিন পাওয়া গেছে। এখানকার উদ্ভাবিত রাতা বোরো ও টেপি বোরোতেও শীতসহনশীলতার জিন পাওয়া গেছে। আগাম বন্যা থেকে রক্ষার জন্য নতুন এই জাত উদ্ভাবনের জন্য অন্যতম পিতৃলাইন হিসাবে নেয়া হয়েছে হবিগঞ্জের জনপ্রিয় ধান পশু শাইলের জিন। 
এই সিনিয়র ধানবিজ্ঞানী বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে আমরা আশাবাদী, ধান বিজ্ঞানীদের ৯০ বছরের গবেষণার ফসল হবে আমাদের নতুন এই জাত। প্রাথমিকভাবে বিঘা প্রতি ফলন ১৭/১৮ মন হলেও আমরা এই ফলন আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
ব্রির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পার্থ সারথী বিশ্বাস বলেন, ১০টি পরীক্ষণ মাঠে নতুন এই জাতের ফসল আমরা লক্ষ্যমাত্রা সময়ের মাঝেই কাটতে পেরেছি। আমরা যে জাতটি উদ্ভাবন করতে যাচ্ছি তার ফলন হবে হেক্টর প্রতি ৭ টন। ফসল চাষের মেয়াদ হবে ব্রি-২৮ ধানের সমান,  ১৫০ দিন। যেহেতু শীত টলারেন্স আছে তাই চাইলে অক্টোবরেই এর বীজতলা তৈরি করা যাবে। শীতে এর বীজতলার কোন ক্ষতি হবে না। 

ইরির বৈজ্ঞানিক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে যখন আগাম বন্যা হয়; তখন দেশে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হয়। লাখ লাখ কৃষক হয়ে পড়ে সর্বশান্ত। তখন থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছিলাম, কীভাবে বন্যার হাত থেকে হাওরের ফসল রক্ষা করা যায়। আমরা এই গবেষণার সফলতার শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। নতুন এই জাতটি আবিস্কার হলে জাতীয় অর্থনীতির সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা সুরক্ষিত হবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।

ধানবিজ্ঞানী ড. আব্দুল মজিদ বলেন, নতুন জাতটি হবে স্বল্প মেয়াদী ও শীত সহনশীল। ফলে আগাম বন্যা আসার আগেই কৃষকের গোলায় চলে যাবে এই ধান। 

এমএএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়