শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৫:৩৬ বিকাল
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডিম-মাংসের লাগামহীন দামে বিপাকে ভোক্তারা

ডিম-মাংসের লাগামহীন দাম

শহীদুল ইসলাম: মোসা. রওশন আরা। পেশায় একজন গৃহিণী, স্বামী ভ্যান চালক। পরিবারের ছেলে মেয়েদের নিয়ে কারওয়ান বাজারের রেললাইনের বস্তিতে থাকেন। দীর্ঘ তিনমাস পরে বুধবারে মুরগী কিনতে এসেছেন, তাও নিজের পরিবারের জন্য নয়। মেয়ে জামাইকে খুশি রাখতে মেয়েকে সাথে নিয়েই মুরগী কিনেছেন। মেয়েকে ৩১০ টাকা কেজি দরে মুরগী কিনে দিলেন। প্রশ্ন করতেই বলে উঠলেন, না মামা এত দামে মুরগী কিনে খাওয়ার সমার্থ কি আমাগো আছে! আগে যখন দাম কম ছিলো মাসে একবার কি দুই বার কিনে খাইতাম, এখন তো দাম অনেক বেশি তাই আর মুরগীর মাংস খাওয়া হয়না। গরুর মাংস তো কবে দেখেছি মনেই পড়ছে না। আমাদের শাক-পাতা দিয়েই সংসার চলে যায়। 

বুধবার কারওঁয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেলো বাজারে ডিম ও মুরগীর চড়া মূল্যের এমন দৃশ্য। ১ কেজী ব্রয়লার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালী মুরগী ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, লাল মুরগী ২৮০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে গ্রাহক পর্যায়ে। গত সপ্তাহের চেয়ে প্রতিদিন কেজীতে ১০ টাকা করে দাম বাড়ছে মাংসের, বলছিলেন দোকান মালিকরা। এছাড়া লাল ডিমের দাম ডজন প্রতি-১৩৫ টাকা, সাদা ডিমের ডজন-১৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহেও ৫ টাকা করে কম ছিলো। ভোক্তাদের অভিযোগ লাগামহীন ডিম-মুরগীর দামে আর সহ্য হচ্ছেনা তাদের। বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বিপি কেআর জেপি) এর মূল্য তালিকায় মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি)  গাজিপুরে ডিম ও মাংসের পাইকারী দাম ছিল; লাল ডিম ১০.০৫ টাকা, সাদা ডিম ৯.৫৫ টাকা,  ব্রয়লার মুরগী ১৫৪ টাকা কেজি, কালবার্ড লাল ২২০ টাকা কেজি, কালবার্ড সাদা ১৯০ টাকা কেজি, সোনালী মুরগী ২৩০ টাকা কেজি।

সূত্রে জানা যায়, সিন্ডিকেটের কবলে ধধংশের দ্বার প্রান্তে দেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনিয় জিনিসপত্রের দামের উধর্ধগতির ফলে যখন ডিম-মুরগীর মাংসের দিকে ঝুঁকছেন, ঠিক তখনই একটি অসাধু চক্র সাধারণ মানুষের পকেট কাটতে সক্রিয় হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ( বিপিএ)। প্রান্তিক খামারিদের এ সংগঠনটির দাবি ছোট মাঝারি খামারগুলোর উৎপাদিত ডিম, মাংস বিক্রির বাজারের নিয়ন্ত্রণের কৌশল হাতে নিয়েছে এই খাতের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।ফলে প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মাংসের দাম কম পাচ্ছেন, অন্যদিকে ভোক্তাদের চড়া দামে ডিম-মুরগী কিনেত হচ্ছে। 

পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন এর মহাসচিব সুমন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, আজকে তো ভোক্তারা বয়লার মুরগী ২২০ টাকায় খাচ্ছেন। আগামীতে এ মুরগী ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়ও পাবেন না। যদি আমাদের খামারি ভাইদের কে টিকিয়ে না রাখা যায়। আজ কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছে বৃহত্তরও পোল্ট্রি শিল্প জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটাই, ডিম-মুরগী ও টোটাল পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির বাজারকে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে অভিযোগ করে বলেন, পোল্ট্রি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এই ইন্ডাস্ট্রিজ ধ্ধংশের পেছনে দায়ী। কারণ প্রণোদনা বলেন, খামারিদের যত সুযোগ সুবিধা বলেন এগুলো কিছুই তারা করছেন না। ফলে লোকসানে থাকা  খামারিরা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। কর্মকর্তারা জানেই না তার উপজেলায় কতগুলো পোল্ট্রি খামার আছে, কতগুলো বয়লার মুরগীর খামার আছে, কতগুলো লেয়ার মুরগীর খামার আছে। প্রান্তিক খামারিদের সাথে তাদের কোন প্রকার যোগাযোগ নাই। একমাত্র কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর সাথে তাদের সংযোগ। 

অন্যদিকে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার সুমন হাওলাদার বলেন, করোনাকালের ধকল পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজে এখনও চলছে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্যসস্য সর্বরাহ, সঠিক বাজার নিয়ন্ত্রণব্যববস্থা না থাকা, হাঁস-মুরগীর সঠিক উৎপাদ মূল্য না পাওয়ায় এ খাতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম। অন্যদিকে প্রাণী খাদ্যর মূল উপাদান সোয়াবিন ও ভূট্রা পাওয়া যাচ্ছেনা, পাওয়া গেলেও দ্বাম অস্বাভাবিক। আগের ৩২ টাকা দামের সোয়াবিন এখন ৭২ টকা হয়েছে, খাদ্য তৈরির সোয়াবিন তেল ৮০ থেকে ১৯০ টাকা হয়েছে। ভূট্রা ১৭ টাকা থেকে ৪২ টাকা হয়েছে। অস্বাভাবিক দামে খামারিদের প্রাণী খাবার কিনতে হচ্ছে। ফলে খামারিরা নতুন করে উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে করে পোল্ট্রি খাত সংকুচিত হচ্ছে।  

মুরগী ও ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির বিষয়ে খন্দকার সুমন হাওলাদার বলেন, মুরগী ও ডিমের দাম বাড়ার কথা ছিলো আরো আগেই। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে খামারগুলোতে প্যারেন্ট স্টক বেশি হয়েছে, এছাড়া  খামারিদের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছিলনা। ফলে বাচ্চাগুলো মেরে ফেলতে হয়েছে। ফার্মাররা বাচ্চা নিচ্ছিলনা, কেননা তারা উৎপাদিত মুরগী বিক্রি করতে পারছিলোনা। এতে করে বাজারে মুরগীর সংকট দেখা দিয়েছে। সেই ঘাটতি এখন বাজারে এসে পড়েছে। তাই ভবিষ্যৎ এ মুরগী-ডিমের দাম আরো বাড়তে পারে। তিনি বলেন, খাবারের দাম বাড়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের ১ কেজী মাংস উৎপাদনে ২ কেজি খাবার প্রয়োজন হয়। ৭০ টকা দামে ২ কেজি খাবারের মূল্য ১৪০ টাকা হওয়ায় মাংস উৎপাদনে ১৫৩ থেকে ৫৬ টাকা খরচ পড়ে যায়, এছাড়া আনুসাঙ্গিক আরো খরচ তো আছেই। তাই বাজার দর ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকার নিচে নামলে খামারি ও এ ব্যবাসায় জড়িতরা ঝড়তে থাকবেন। বর্তমানে মুরগীর বাচ্চার দাম বৃদ্ধি ও সারা দেশে সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি হওয়াতে মুরগী ও ডিমের উপরেও অনেকটা প্রভাব পড়েছে বলে জানা খন্দকার সুমন হাওলাদার। তিনি এ সংকট উত্তরণে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী অরো বেশি লাইভস্টক স্থাপন ও এর কর্মকর্তারে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের সাথে নিবীর সম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি খামারিদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির আহবান জানান।  

এসএইচআই/এসএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়