শিরোনাম
◈ সরকারি দপ্তরগুলোতে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফরে কড়াকড়ি: কৃচ্ছ্রনীতির অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা ◈ ২১ বছর বয়স হলেই স্টার্ট-আপ লোনের সুযোগ, সুদ মাত্র ৪%: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা ◈ ঢাকায় একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে: আশিক চৌধুরী ◈ তিন বোর্ডে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত ◈ এসএসসির ফল নিয়ে যে বার্তা দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ◈ সৈক‌তের কা‌ছে দু:খ প্রকাশ ক‌রে‌ছেন ‌বি‌সি‌বির প্রধান নির্বাচক  ◈ ভারত সরকারকে আম উপহার পাঠাল বাংলাদেশ ◈ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১৬ কর্মকর্তা বদলি ◈ কল রেকর্ড ট্রেলার মাত্র, অনেক কিছু এখনো বাকি, অপেক্ষায় থাকুন: তাজুল ইসলাম ◈ জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৭:৪১ বিকাল
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৭:৪১ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পোশাক খাতের চেয়ে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ চামড়া শিল্প

চামড়া

শহীদুল ইসলাম: তৈরি পোশাক খাতের চেয়েও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় একটি বড় খাত চামড়া শিল্প। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের চামড়ার ব্যপক খ্যাতি রয়েছে। বাংলাদেশের গুণগতমানের চামড়া, সস্তা দরের শ্রমিক, চামড়ার পণ্য তৈরির কাঁচামাল দেশে পাওয়া যায়। ফলে পোশাক খাতের চেয়েও এ খাতে রয়েছে অপার সম্ভবনা। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে চামড়া শিল্পের রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন ডলার থেকে উন্নিত করে ১০ বিলিয়ন ডলার করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। বর্তমানে বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ দখলে এ বাজারের মাত্র ০.৫ শতাংশ। অথচ চাইলে বাংলাদেশ অতি সহজেই এ বাজারের একটি বড় অংশ দখল করতে পারে।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্য নানা পরিকল্পনার কারণে চলতি বছরে এ খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। তাছাড়া এ খাতে রয়েছে জুতা তৈরির জন্য যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা। এর ফলে চামড়া শিল্পের সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ থেকে পাকা চামড়ার পাশাপাশি জুতা, ট্রাভেল, ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ, জ্যাকে বিদেশে রফতানি হচ্ছে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের মসৃণ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য জাপান এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। নাইকি, এ্যাডিডাস, টিম্বারল্যান্ড, সিয়াস, ডায়েচম্যান, জেনেসকো, পুমা, পিভোলিনোস, হুগো, বসের মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানির চামড়া বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বিশ্বের প্রায় ৭৫ ভাগ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার চীনের দখলে। কিন্তু সম্প্রতি চীনের বাণিজ্যনীতি পরিবর্তনের ফলে সেখান থেকে চামড়া কারখানার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তাই বাংলাদেশের জন্য এই শিল্প প্রসারের এখনই সঠিক সময়।
 
চামড়া খাতে  ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জুতার রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৮৯ শতাংশ আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৭৩ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিলো ৮৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার হলো ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা। এর বাইরে সম্প্রতি জাপান, ভারত, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়াতেও বাজার গড়ে উঠেছে। ফলে, উত্তরোত্তর এই শিল্পের বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে।

চামড়া শিল্পের প্রসার ঘটাতে গত বছর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী চামড়া শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী লেদার-টেক বাংলাদেশ-২০২২’র অষ্টম আসর অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তিন বছর পরে এ প্রদর্শনীতে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যার শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারি, কম্পোনেন্টস, অ্যাক্সেসরিজ, ডাইস এবং কেমিক্যালস সরবরাহকারীদের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রযুক্তি তুলে ধরা হয়। এতে অংশ নেয় ১০ দেশের ২০০ টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে চামড়া শিল্পের নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। 
 
অন্যদিকে দক্ষ জনবল ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তুলনামূলকভাবে এ খাত এখনো পিছিয়ে আছে বলে মনে করছেন চামড়া শিল্প খাতের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা, তাদের মতে দেশের চামড়া খাতের প্রধান সমস্যা কমপ্লায়েন্সের অভাব। যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য কম দাম পাচ্ছে পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

এছাড়া সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে স্থাপিত ইটিপি এখনও পূর্ণাঙ্গ পরিবেশবান্ধবভাবে কাজ করছে না এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ঠিক হয়নি। এজন্য, বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দাম কম পাচ্ছে। চামড়া খাতের বিকাশ এবং স্থায়ীকরণের জন্য ২০০ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলতে দীর্ঘ ১৭ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। এতে পর্যায়ক্রমে চামড়া রপ্তানির আয় কমে যাচ্ছে এবং কাঁচা চামড়ার দাম কমে যাচ্ছে।

বিশ্ববাজারে কুষ্টিয়া গ্রেড খ্যাত বাংলাদেশের ছাগলের চামড়ার চাহিদা রয়েছে প্রচুর। যদি এ চাহিদার বিপরীতে জোগান নিশ্চিত করা যায়, তবে তা যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চামড়া শিল্পের মানোন্নয়নে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে আরও লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন, চামড়া শিল্পের জন্য আলাদা শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা, চামড়া সংরক্ষণে ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এসআই/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়