মনজুর এ আজিজ : বিশ্বমন্দার মধ্যে রেমিটেন্সের পর এবার তৈরি পোশাকের হাত ধরে জানুয়ারি মাসে রফতানি আয় বেড়েছে ২৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন (ইউএস) ডলার, যা শতকরা হিসাবে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আর সদ্য বিদায়ী জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। প্রবাসীরা জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।
ইপিবি বলছে, জানুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য রফতানি হয়েছে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার ইউএস ডলার। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে যা হয়েছিল ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। শতাংশের হিসাবে ২০২২ সালের জানুয়ারির তুলনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রফতানি আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে ২০২২ সালের তুলনায় রফতানি আয় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১০ শতাংশ কমেছে রফতানি আয়। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট সাত মাসে রফতানি আয় হয়েছে ৩২৪৪৭ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২৯৫৪৮ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮৯৮ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয় বেড়েছে। যা শতাংশের হিসাবে আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
খাতভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই থেকে জানুয়ারি এই সাত মাসে দুই হাজার ৭৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যা মোট রফতানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। একইভাবে চামড়াজাত পণ্যে ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও প্লাস্টিক পণ্যে ৪০ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার কৃষিপণ্য ২৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, হিমায়িত মাছে ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, হস্তশিল্পে ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ, পাটজাত পণ্য ২১ দশমিক ২২ শতাংশ এবং কাঁচ পণ্যের রফতানি ৪৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। প্রবাসীরা জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ডিসেম্বর মাসের তুলনায় ২৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে। ডিসেম্বরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের রফতানি আয়ে সুবাতাস বইছে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক খাত। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই সময়ের মধ্যে আমাদের সামগ্রিক পোশাক রফতানি ২৩.৯৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৪.৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। নিটওয়্যার পণ্য রফতানি ১৪.৯৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, আর ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে ১২.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উভয় ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ১২.৭০ ও ১৬.৩০ শতাংশ। ওভেন খাতে প্রবৃদ্ধি নিটওয়্যারের তুলনায় বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি আমরা একক মাস হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমাদের রফতানি আয় ছিল ৪.৪২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের একই মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.২৪ শতাংশ। যদিও আমরা গত কয়েক মাস ধরে চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রফতানি আয় বজায় রাখছি। এই শক্তিশালী পারফরম্যান্সের পেছনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ২০২৩ সালে মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং বিশ্ব দুর্বল প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির একটি প্রলম্বিত সময়ের মধ্যে প্রবেশ করছে। আমাদের বেশিরভাগ কারখানায় নতুন অর্ডারও কমে গেছে। তাই ভবিষ্যতে যেকোনও ধরনের নজিরবিহীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের সকলকেই প্রস্তুত থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এমএএ/এএ
আপনার মতামত লিখুন :