আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ২৭ বছরের সর্বোচ্চ সুদহার বৃদ্ধির ঘোষণা দিল যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম এপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি সংকট চলছে। চলতি বছরের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। জুনে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ নাগাদ মন্দায় পড়বে যুক্তরাজ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, এ বছরের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) থেকে শুরু করে আগামী বছরের শেষ প্রান্তিক পর্যন্ত প্রতি প্রান্তিকে জিডিপি কমতে থাকবে। ঊর্ধ্বমুখী এ চাপের ফলে ব্যাংকটির মনিটারি পলিসি কমিটি মূল সুদের হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়েছে। বর্তমানে সুদের হার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক সংকটের পর এবারই ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদের হার সর্বোচ্চ হলো।
এক বিবৃতিতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেন, এর কারণে কী প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে আমি অবগত। যুক্তরাজ্যের অনেকের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয়ের যে চ্যালেঞ্জ তা অব্যাহত থাকবে। তবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা যদি এ পদক্ষেপ না নিই তাহলে এর পরিণাম আরো ভয়াবহ হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে। উচ্চ সুদহারের অর্থ হলো ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি।
ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ কমিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধের জের ধরে পশ্চিমাদের সঙ্গে বিরোধ জন্মেছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির হার আরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দামও।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের অনুমান, ২০২১-২৩ সালে ব্রিটিশদের পারিবারিক আয়ের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় হবে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে। এর আগে সত্তরের দশকে জ্বালানি সংকটে পড়েছিল যুক্তরাজ্য। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ অনুমান সত্য হলে ব্রিটিশদের পারিবারিক ব্যয় সেই সময়ের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি হবে।
এদিকে সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে ফেডারেল রিজার্ভও। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে টানা দুই প্রান্তিকের মতো মার্কিন অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা আরো ঘনীভূত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মহামারীর জের ধরে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্রমাগত সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। সে প্রভাব এসে পড়ছে সাধারণ মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের ওপর।
সূত্র: বণিক বার্তা
আপনার মতামত লিখুন :