শিরোনাম
◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের সাক্ষর  ◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ০৪ আগস্ট, ২০২২, ০২:৫৫ দুপুর
আপডেট : ০৫ আগস্ট, ২০২২, ০৭:২১ বিকাল

প্রতিবেদক : এম. মোশাররফ হোসাইন

আইএমএফ থেকে ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ

আইএমএফ

এম. মোশাররফ হোসাইন : আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে ঋণ প্রদানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি লাঘবে এই অর্থসহায়তা দেওয়ার সম্মতির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে বুধবার (৩ আগস্ট) জানিয়েছে সংস্থাটির ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেনেবল ট্রাস্ট (আরএসটি)। তবে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা চাইলেও আইএমএফ কী পরিমাণ অর্থ দিতে রাজি হয়েছে, তা উল্লেখ করেনি। সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশকে কী পরিমাণ সহায়তা প্রদান করা হবে, তা এখনও আলোচনা করা হয়নি। সূত্র : রয়টার্স

বিবৃতিতে আইমএফ বলেছে, এই ফান্ড থেকে অর্থ পেতে ইতিমধ্যে যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আগামী মাসের মধ্যে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ নিয়ে বৈঠক করবে এবং এই ঋণের একটি কাঠামো তৈরি করবে। সে সময় ঋণের আকার চূড়ান্ত হবে।

তারা বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ উদ্যোগী হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। মুদ্রা বিনিময় হারও নমনীয় করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ অপ্রয়োজনীয় এবং জ্বালানিসংশ্লিষ্ট আমদানি কমাতে সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। আর্থিক ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য ব্যয় বাড়িয়েছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের বহু দেশ এখন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ এমনিতেই দীর্ঘ মেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সেইসঙ্গে হঠাৎ তৈরি হওয়া এসব নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সামস্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকিতে পড়তে পারে। আরএসটি তহবিল এই দীর্ঘ মেয়াদি ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে। আরএসটি তহবিল থেকে আইএমএফের সদস্য দুই-তৃতীয়াংশ দেশ ঋণ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

আইএমএফ উল্লেখ করেছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এই বাহ্যিক অর্থনৈতিক আঘাত মোকাবিলা করতে এই তহবিল সহায়তা করবে আইএমএফ। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এই তহবিল দীর্ঘ মেয়াদে সহায়তা করবে। 

উল্লেখ্য, আইএমএফ এই তহবিলটি ২০২১ সালে তৈরি করা হয়। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সদস্য দেশগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে সহায়তা করতে প্রাথমিক ভাবে ৬৫ হাজার কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করা হয়েছিল। নিম্ন-আয়ের দেশগুলোর জন্য শূন্য সুদের এই তহবিল ১০ বছর রেয়াতকাল এবং ২০ বছর মেয়াদে পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। ১ হাজার ২০০ ডলারের ওপর মাথাপিছু আয় রয়েছে এমন দেশগুলো ঋণের জন্য আবেদন করতে পারে। তবে অর্থনীতির ঝুঁকি কমাতে উদ্যোগী রয়েছে কি না, সে বিষয়গুলোও ঋণ দেওয়ার আগে নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস করার পাশাপাশি জলবায়ু সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতিমধ্যে এইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে সরকারি উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করেছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, সক্ষমতা বিবেচনায় আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস ঋণ প্রসঙ্গে বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে যদি ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বাড়ে, সে জন্যই মূলত অর্থ মন্ত্রণালয় আলোচনা সাপেক্ষে সহায়তা চেয়েছে। এটি সহজ শর্তের ঋণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে একাধিকবার এ ধরনের ঋণসহায়তা আইএমএফের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে।

আইএমএফ কি?

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জাতিসংঘের অনুমোদিত একটি স্বায়ত্তশাসিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান কাজ বিভিন্ন দেশের মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা। ১৯৪৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কার্যক্রম শুরু হওয়া এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ২৯টি দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮৯টি রাষ্ট্র এই সংস্থার কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হয়।

আইএমএফ তাদের কার্যক্রমের আওতাভুক্ত দেশগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয় এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অর্থায়ন করে থাকে। এসব সহযোগিতা তারা দিয়ে তাকে বিভিন্ন শর্তে। সংস্থাটি ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আর্থিক খাতে নীতিগত বিষয়ে সংস্কারের কিছু শর্তও দিয়ে থাকে, যা পূরণ করতে গেলে সরকারের অজনপ্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়।

আইএমএফের কাছে কেন ঋণ চাইছে বাংলাদেশ?
 
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের কাছে চারশো কোটির বেশি ডলার ঋণ চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে কয়েকবার আইএমএফ থেকে ঋণ সহায়তা নিয়েছে বাংলাদেশ, কিন্তু এর পরিমাণ কোনো বারই ১০০ কোটি ডলার পেরোয়নি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও গ্যাস, যন্ত্র ও পণ্যের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে। সেই চাপ সামলাতেই আইএমএফ দাতা সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

গত বছর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫.৫ বিলিয়ন থাকলেও জুলাই মাসের ২০ তারিখ নাগাদ সেটা ৩৭.৬৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি অনেক বেড়েছে। ফলে দেশীয় বাজারে ডলারের চরম সংকট তৈরি হয়েছে।

জুলাই ২০২১ থেকে মে ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি তৈরি হয়েছে ১৭ দশমিক ২ বিলিয়ন, যা আগের বছরের ওই সময়ে ছিল মাত্র ২.৭৮ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশের সরকার বলেছেন, আগের বছরের তুলনায় এই সময়ে আমদানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।

যেসব শর্তে ঋণ দেয় আইএমএফ

২০১২ সালে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময় বাংলাদেকে বেশ কিছু শর্ত দেয় সংস্থাটি। এর মধ্যে ছিল রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার। এর আওতায় বাংলাদেশকে ভ্যাট আইন পাস করতে হয়েছিল। তখন একটি নতুন প্রত্যক্ষ কর আইন তৈরির শর্তও দেওয়া হয়েছিল।

ওই সময় কর মওকুফের সুবিধা বাতিলের শর্তও দিয়েছিল বৈশ্বিক সংস্থাটি। অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল সরকারের ভর্তুকি কমানো, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি, বিনিময় হার আরও নমনীয় করা, খেলাপি ঋণ আদায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ক্ষমতা বাড়ানো, বাণিজ্যের বাধা দূর করা, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ইত্যাদি।

অতীতে আইএমএফ ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে অনেক শর্ত দিয়েছে, যা পুরোপুরি অনুকূলে ছিল না। অনেক কঠিন শর্তের কারণে বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার নজিরও রয়েছে।

বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কিছুটা চাপে রয়েছে । আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য ও রাসায়নিক সার আমদানি দায় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। কয়েক মাস ধরে মজুত কমছেই। সর্বশেষ হিসাবে মজুত এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় সংস্থাটির কাছে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়