নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্যপ্রযুক্তি, ডিজিটাল ফাইন্যান্স, খাদ্য ও পানীয় শিল্প, নির্মাণ এবং জ্বালানি- এই পাঁচ খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি বিনিয়োগকারীরা। তিন দিনব্যাপী ‘সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৫’- এর সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানায় সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই)। দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে ৫৩ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো এ শীর্ষ সম্মেলন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে আয়োজিত সামিট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসএবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এখন শুধু তৈরি পোশাক নয়; সফটওয়্যার, তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিংয়েও বিশ্বে উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করেছে। আর এই সম্ভাবনার অংশীদার হতে চান সৌদি উদ্যোক্তারা।
তিনি বলেন, দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে শিগগিরই সৌদি আরবে ‘শো কেস বাংলাদেশ’ আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো সৌদি বিনিয়োগকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া সৌদি আরবের আল-তাইয়্যিবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং স্বাস্থ্য খাত বিশেষজ্ঞ ড. খালিদ আল হারবি সফরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনা দেখছে প্রতিনিধিদল।
ড. আল হারবি বলেন, সৌদি আরবের অনেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশের শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করেন। তারা বাংলাদেশের মানুষের কাজের নীতি ও উদ্ভাবনী কৌশলকে কাজে লাগিয়ে সৌদি আরব এবং বাংলাদেশের উৎপাদনশীল খাতে অবদান রাখতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের স্বাস্থ্যসেবা খাতে, বিশেষ করে নার্সিং সেবার জন্য বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তির বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। সৌদি ব্যবসায়ীরা সৌদি আরবের শ্রমবাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের অব্যাহত অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।
সামিটে অংশ নেওয়া সৌদি কোম্পানি হ্যালিওপার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল স্যাসেন বাংলাদেশে এসে তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পে অনেক এগিয়ে। কিন্তু সফটওয়্যার ও সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতেও আপনারা এখন বিশ্বমানের কাজ করছেন। বাংলাদেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী আছে, যারা কাজ করতে অত্যন্ত আগ্রহী। এ কারণেই দেশের অর্থনীতির সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।
অন্য ব্যবসায়ীরা বলেন, মুসলিম ভ্রাতৃত্বের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের অজস্র সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। যৌথ বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই কর্মশক্তিকে আরও দক্ষ করে তুললে উভয় দেশই উপকৃত হবে।
এসময় সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য, পানীয় ও কৃষিপণ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি হালাল ও কৃষিপণ্য আমদানির ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিন দিনব্যাপী এ বিজনেস সামিটে দুই দেশের শীর্ষ নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও পলিসিমেকাররা অংশ নেন। আয়োজনে ছিল একাধিক থিম্যাটিক সেশন- যেখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রেমিটেন্স ও প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে এসএবিসিসিআই পরিচালক ও প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক উজমা চৌধুরী, সংগঠনের সহ-সভাপতি আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।