শিরোনাম
◈ গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ চলছে, দায়ী ইসরায়েল: ইইউ ◈ রাখাইনে আরো একটি শহর দখল করেছে আরাকান আর্মি ◈ পঞ্চগড় এক্স‌প্রেস ট্রেনের ব‌গি চার ঘণ্টা পর উদ্ধার, ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক ◈ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা ◈ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকার টু শব্দ করার সাহস পাচ্ছে না: বিএনপি ◈ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সোমালিয় পুলিশ ও বহুজাতিক নৌবাহিনী ◈ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবিতে অভিযোগ করলেন জবি ছাত্রী ◈ ঈদের পর কাওরান বাজার যাবে গাবতলীতে: মেয়র আতিক ◈ আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা কয়লায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই: এস আর শিপিং ◈ পাপেট সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত সব নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ বলবে যুক্তরাষ্ট্র: জয় 

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২২, ১১:০৩ রাত
আপডেট : ১১ জানুয়ারী, ২০২৩, ০১:০৬ রাত

প্রতিবেদক : এম. মোশাররফ হোসাইন

বিশ্বজুড়ে অস্থির মুদ্রাবাজার, বাড়ছে অনিশ্চয়তা

ডলার

এম. মোশাররফ হোসাইন: করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে আশংকাজনকহারে পণ্যের উৎপাদন হ্রাস এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ফলে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে বিশ্বজুড়ে মার্কিন ডলারের বিপরিতে দফায় দফায় পতন ঘটছে স্থানীয় মুদ্রার। এই অবস্থায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর অস্থিরতায় টালমাটাল হয়ে পড়েছে বিশ্ব মুদ্রাবাজার।

এই পরিস্থিতিতে ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদহার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মার্চ মাসের পর এটি তৃতীয় দফা সুদহার বৃদ্ধির ঘটনা। ব্যাংকগুলোর ঋণের ওপর ফেডারেল সূদ হার বছর শেষে ৩.৪ শতাংশ পর্যন্ত পৌছতে পারে। ফলে মর্টগেজ, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য ঋণের ওপর সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে জনগণের ওপর আর্থিক চাপ সীমা ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারগুলোতে ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন ঘটেছে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের সর্বত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য একই পন্থা অবলম্বন করতে শুরু করেছে, যা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। যুক্তরাজ্যে ভোগ্যপণ্যের মূল্য গত এপ্রিল মাসে ৯ শতাংশ বেড়ে গেছে এবং গত দেড় মাসে মূল্য সূচক আরও বেড়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড গত ডিসেম্বর মাসের পর থেকে এ পর্যন্ত সূদ হার পঞ্চম দফা বৃদ্ধি করেছে। ব্রাজিল, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও হার বাড়িয়েছে। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক আভাস দিয়ে সামারে তারা সূদ হার বৃদ্ধি করবে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ, ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের শীর্ষ নির্বাহীরা সতর্ক করে বলেছেন, নিম্ন মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার কমিয়ে রাখার বিষয়টি ইতিহাস হতে চলেছে। তারা বলেছেন, পণ্যের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সে লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও সুদের হার এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সোয়া শতাংশ করেছে।

ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার রেকর্ড দরপতন হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন দরপতনের রেকর্ড গড়েছে ভারতীয় রুপি। এদিন প্রতি ডলারে বিনিময়মূল্য দাঁড়ায় ৭৭ রুপি ৮১ পয়সা। 

বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের মূল্যে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি আমদানিকৃত মুদ্রাস্ফীতির স্থায়িত্ব বৃদ্ধির উদ্বেগের কারণে বৃহস্পতিবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি সর্বনিম্ন রেকর্ড গড়ে। ভারতে মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক মন্দার প্রভাবও রুপির দাম কমার জন্য দায়ী।

শীর্ষ চীনা অর্থনীতিবিদ ড্রান ওয়াং বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে মন্দার হারও বাড়বে।

জাপানের দাই ইচি লাইফ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়োশিকি শিনকে বলেন, কিছু দুর্বলতার পর চীনের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে আশা করা যায়। তবে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা অনিশ্চয়তার কারণে মন্দা মোকাবিলা করা ততটা সহজ হবে না।

জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা আংটাড বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগে তা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছিল। তাদের মতে, এ মন্দা রাশিয়াতে দীর্ঘমেয়াদি রূপ নেবে। পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলো এবং দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এ মন্দার হাওয়া থেকে বাদ যাবে না। খাদ্য এবং জ্বালানির মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইতিমধ্যে নানা সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খাবার এবং জ্বালানির ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়ায় এসব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে।বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চরম ধাক্কার শিকার হয়েছে বাংলাদেশও। 

ইতোমধ্যে মুল্যস্ফতির লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। বাজারে অর্থ সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যও কমানো হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে কমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। আবার করোনা মহামারির ফলে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কমেছে। বাংলাদেশেও শিল্প ও কৃষি উৎপাদনে এর একটা প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কৃষিজ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে দফায় দফায়। 

এছাড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় মানুষের বিদেশ ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে কিংবা ঘুরতে মানুষের বিদেশ ভ্রমণের মাত্রা বেড়েছে। এটা প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে ডলার, পাউন্ড, ইউরো, রিয়ালসহ নানা ধরনের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে। তবে ডলারের চাহিদা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কেননা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারই একমাত্র বিনিময়ের মাধ্যম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বছরের ৩০ জুন প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এক মাস আগে ৩০ মে ব্যয় করতে হয়েছে ৮৯ টাকা। আর গতকাল এক ডলারের জন্য ব্যয় করতে হয়েছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। এর জন্য একটি পৃথক তহবিল গঠন করা যেতে পারে। রপ্তানির ধারা ধরে রাখতে হবে। আগামী কিছুদিনের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের ডলার ধরে রাখার ক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়ানো। এ সময় টাকার অবমূল্যায়ন কিছুটা কমানো যেতে পারে। তবে তা হতে হবে বাস্তবসম্মত। বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার করতে হবে বিচক্ষণতার সঙ্গে। ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়লে বাজারে সরবরাহ আরও বাড়বে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়ালে বাজারে অস্থিরতা কমে আসবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে খোলাবাজার ও আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের মধ্যে তফাৎ কমানো। কিন্তু এ কাজ করা বেশ কঠিন। সূত্র: সিপিডি, বিবিসি, রয়টার্স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়