শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর, ২০২২, ০৫:৫৪ বিকাল
আপডেট : ০৬ অক্টোবর, ২০২২, ০৫:২৯ বিকাল

প্রতিবেদক : এম. মোশাররফ হোসাইন

বিদেশি কোম্পানিতে সন্ত্রাসী হামলা, সুইস এমডি লাঞ্চিত ও অফিস লুটপাট

সংবাদ সম্মেলন

এম. মোশাররফ হোসাইন: বিদেশি বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান রাকিন ডেভেলপমেন্টে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাটের অভিযোগ ওঠেছে এস এ কে একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে চার ঘন্টা জিম্মি করে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত এবং জোরপূর্বক অফিস বেদখল করে নিয়েছে দুর্নীতির দায়ে কোম্পানি থেকে বহিস্কৃত সাবেক এমডি এস এ কে একরামুজ্জামান।

বুধবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগে (এফডিআই) বাংলাদেশের আবাসন খাতে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এ কে একরামুজ্জামান নামে একজন বাংলাদেশী পরিচালক। কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়ার পর পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সেটার অনুমোদন নিতে হয়, কিন্ত ২০০৮ থেকে ২০২২ সালে তাকে অব্যাহতির পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি, তাই আইনের ধারা অনুযায়ী তার এই পদ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের আইন-কানুন সম্পর্কে বিদেশি পরিচালকদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে অবৈধভাবে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।

ফাদি বিতার বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই এস এ কে একরামুজ্জামান কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তাছাড়াও তিনি কোম্পানির নামে কয়েকটি অনুমোদনহীন ব্যাংক হিসাব খুলে সেগুলোতে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এছাড়াও কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের অনুমতি ছাড়া কোনধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ‘স্টার পোরসেলিন’ নামে একটি কোম্পানির নামে ৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন একরামুজ্জামান, যিনি একই কোম্পানির ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এই টাকা পরিশোধের জন্য তাকে বার বার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও তিনি এর কোন জবাব দেননি। একরামুজ্জামানের ১৪ বছরধরে এমডি’র দায়িত্ব পালনকালে এই সময়ে কোম্পানির কোন লাভ দেখানো হয়নি, বরং প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ঘাটতি দেখানো হয়েছে।

বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন না থাকা, কোম্পানির কার্যক্রমে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন, কোম্পানিতে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতি এবং তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার কারণে বিগত ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কোম্পানির ৮১তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে একরামুজ্জামানকে সরিয়ে তাকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে ফিদার জানান।

ফিদার জানান, এমডি’র দায়িত্ব নিয়ে দেখতে পাই পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুজ্জামান কোম্পানির প্রচুর পরিমান অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে খরচ করেছেন। কোম্পানিকে সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিতায় আনতে এবং এখানে গ্রাহকদের অর্থ বিনিয়োগকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এতে একরামুজ্জামান নাখোশ ও ক্ষিপ্ত হন। তার অনিয়মগুলো প্রকাশ্যে আসার পর আমাকে সঠিকভাবে দায়িত্বপালনে বিভিন্ন উপায়ে বাঁধা প্রদান শুরু হয়।

এই পরিস্থিতিতে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, শনিবার, সকাল ১১ টায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এ কে একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে রাশেদুল আলম, আরিফুর রহমান তপন, আবদুল্লাহ কায়সার ও সোহাগ-সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/৩০ জনের বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড-এর রাজধানীর মিরপুরস্থ কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্ইুজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে, তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ ঘন্টা ধরে আটকে রেখে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও তছনছ করে এবং জোরপূর্বক অফিস বেদখল করে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

বিদেশী নাগরিক হিসাবে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভয় পেয়ে এখন মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দেশে যদি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কোন নিরাপত্তা না থাকে তাহলে বিদেশী বিনিয়োগ আরও হুমকির মুখে পড়বে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটিকে (বিডা) জানালে তারা তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; সচিব, সুরক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; মহাপরিচালক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই); মহাপরিচালক, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব); অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (এসবি) ও পরিচালক-১, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর একটি অফিসিয়াল চিঠি ইস্যু করেন। পাশাপশি ওই ঘটনায় রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি ফৌজদারী মামলাও দায়ের করা হয়েছে (মামলা নং-২৪, তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২)।

রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ফাদি বিতার এবং আমাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে, আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ ঘন্টা ধরে আটকে রেখে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও তছনছ করে এবং জোরপূর্বক অফিস বেদখল করে।

এই ঘটনার সাথে নারিদের নিরাপত্তা, দেশের ভাবমূর্তি, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের নিরাপত্তার মতো বিষয় জড়িত বিধায়, এ বিষয়ে দ্রুততার ভিত্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, অবৈধভাবে ১৮৪ কোটি টাকা দুবাইয়ে পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৩ মে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে আকরামুজ্জামান ও তার ভাই কোম্পানির পরিচালক সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামীরা ২০১০ সালে দুবাইয়ে আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল এবং থ্রি স্টার নামে দুটি অফশোর কোম্পানি খোলেন। পরে বাংলাদেশে ‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ অর্জিত ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা দুবাইয়ে পাচার করেন। দুবাইয়ে ওই অর্থ উর্পাজনের কোনো উৎস তারা দেখাতে পারেননি। ওই অর্থ কীভাবে উপার্জন করা হয়েছে তার কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে নেই। দুবাইয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে কখনও জানাননি বা কোনো ধরনের অনুমতি নেননি।

এই ঘটনার সাথে দেশের ভাবমূর্তি, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের নিরাপত্তার মতো বিষয় জড়িত বিধায়, এ বিষয়ে দ্রুততার ভিত্তিতে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, যথাযথ বিচার, আইনী সুরক্ষাও জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেন। পাশাপাশি তাদের বেদখলকৃত অফিস পূনরুদ্ধারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়