বিপ্লব বিশ্বাস: রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তিতে হাত বাড়ালেই মেলে মাদক। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একের পর এক অভিযানেও থামছে না এই মাদকের বেচা-কেনা। সন্ধ্যা নামতেই এই মাদকের হাটে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মটরসাইকেল, প্রাইভেট গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা যোগে শ শ মাদক সেবি মাদক সেবনে সেখানে যায়। অনেকে সেবনের পাশাপাশি বহনও করে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের উপজেলায় ৪০০ মাদকের ডিলার রয়েছে। এর মধ্যে চনপাড়া বস্তিতেইে রয়েছে ২০০ ডিলার। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া যায় ।
অন্যদিকে, একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বস্তিতে প্রতি মাসে প্রায় তিন কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকার মাদক বিক্রি হয়। আর মাসে ১০ লাখ টাকা বখরা হিসেবে পায় পুলিশ। উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় এই চনপাড়া বস্তি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সীমানায় এই বস্তির অবস্থান। বস্তিতে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বাস। এখানে মাদক বেচাকেনা চলে প্রকাশ্যে। রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও রাজধানীর ডেমরা, সারুলিয়া, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ বস্তিতে আসে মাদক সেবন করতে। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটেছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও। স্থানীয় প্রশাসন এখানকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে। মাদকের হাটখ্যাত চনপাড়া বস্তি থেকে থানা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালীরা নিয়মিত বখরা পায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে চনপাড়ায় কোলাহল শুরু হয়। এ রমরমা আসর চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এখানে ফেরি করে বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর মোহনায় চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র। বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলিখ্যাত চনপাড়ায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রয়েছে অনেক। একদিকে পুলিশ প্রবেশ করলে মাদকসেবীরা অন্য পথ দিয়ে বের হয়ে যায়। এখানে দিনমজুর, ঠেলাগাড়িচালক, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, গার্মেন্ট শ্রমিকের পাশাপাশি পেশাদার খুনি, ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বাস করে।
পুলিশ, এলাকাবাসী, মাদকসেবী ও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর তথ্যমতে, চনপাড়া এলাকায় শমশের আলী, আনোয়ার, বোতল মিজু, রাশিদা, কাশেম, রওশন, শাহিদা, রিনা, বিলকিছ, ইয়াসমিন, রোশনী, রহিমুন, মোশারফ হোসেন, ইউসুফ, আক্তার, শাহাবুদ্দিন, খোরশেদ, বদ্দা, রেহেনা, সাইমুন, পুতুল (রফিকের মা), আলী আহম্মদ, ইছাক, বাদশা মিয়া, শিরিনা, আলফু, পান্না মিয়া, সাইফুল আলম, গোলাম মস্তোফা, যতি বেগম, বাবু মিয়া, চিশতি হাসান, কহিনূর আক্তার, শাওন মিয়া, মতুর বউ, নাজমা, বাহী, জামাল, ঝন্টু, দুদু মিয়া, কাশেম, লিটন, জসিম, আরব আলী, রফিকুল, পারভীন, খলিল, আলামীন, খোকাসহ ২০০ ব্যক্তি মাদক ব্যবসা করে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, চনপাড়া বস্তিতে মাদক আছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে অনেকটা কমে এসেছে। চনপাড়ায় পুলিশের একটি টিম প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করে। এলাকাটা ঘিঞ্জি তো। পুলিশ ঢোকার আগেই মাদক কারবারিরা পালিয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিনই মাদকের বিরুদ্ধে ছোটখাটো অভিযান পরিচালনা করছি। তবে চনপাড়ার বিশাল এলাকা মাদকের অভয়ারণ্য। সেখানে অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ও অনেক জন বল প্রয়োজন। আমরা শিগগিরই সেখানে অভিযান চালনোর কথা ভাবছি।
আপনার মতামত লিখুন :