তপু সরকার, শেরপুর: জেলায় মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুর অঞ্চলকে শক্রমুক্ত করা হয়। দেশের এ জেলার প্রথম শক্রমুক্ত হয় ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী, ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শ্রীবরদী উপজেলা এলাকা।
এর পরদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করা হয় শেরপুর অঞ্চলকে। এই দিন মিত্রবাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরা শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক মাঠে হেলিকপ্টারযোগে এসে নামেন এবং এক স্বতস্ফূর্ত সমাবেশে শেরপুরকে মুক্ত বলে ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও শেরপুর জেলা ইউনিট কমান্ড আয়োজনে , জেলার বীরমুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শেরপুরের, চকবাজারস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালী নিয়ে শহীদ মুক্তযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্বে গিয়ে পুষ্পঅর্পণ করেন ।
পরে জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার এর সভাপতিত্বে ,সেখানে এক আলোচনা সভাঅনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাতয়ি সংসদের হুইপ বীরমুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি., বিশেষ অতিথি মোঃ কামারুজ্জামান (বিপিএম) জেলা পুলিশ সুপার শেরপুর ,
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু এবং সাবেক সাধারন সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মুখলেছুর রহমান আকন্দ , শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক এডভোকেট চন্দন কুমার পাল, মোঃগোলাম মোহাম্ম কিবরিয়া লিটন মেয়র শেরপুরপৌরসভা, মোঃ রফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান শেরপুর সদর উপজেলা , শেরপুর জেলা পরিষদ প্রধান নিবার্হী সাইয়েদ এ.জেড. মোরশেদ আলী, জেলা সিভিল সার্জন দেবাশীষ ভট্রাচার্য ,ডাঃ মোঃ জসিম উদ্দিন সুপারিনটেনডেন্ট শেরপুর জেলা হাসপাতাল, ।
মোঃ মুকতাদিরুল আহামেদ এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ বীরমুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি , বলেন
মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে বর্তমান শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩০ থেকে ৪০টি খণ্ডযুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধে ৫৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এ ছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন, শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদী গ্রামে ৩৯ জন এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ৪১ জন শহীদ হন।তিনি আরও জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী শেরপুর শহরে প্রবেশ করে। বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলে ঘাঁটি। শেরপুর জেলা শহরের নয়ানী বাজারে টর্চার সেল ও ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদনগর উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ঘাঁটিতে চালায় অমানবিক অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ।
অন্যদিকে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আঘাত হানতে থাকে শত্রু শিবিরে। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই শত্রু বাহিনীর পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকে। ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের বেশ কয়েকবার কামালপুর দুর্গে আক্রমণ চালান।১১ দিন অবরোধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর এই ঘাঁটির পতন হয়। মোট ২২০ জন পাকিস্তানি সেনা এবং বিপুল সংখ্যক রেঞ্জার, মিলিশিয়া ও রাজাকার বিপুল অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।
কামালপুর মুক্ত হওয়ার পর হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় শেরপুরে হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। কামালপুর দুর্গ দখল হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর সকল ক্যাম্প ধ্বংস হয়।
তারা ৬ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এরপর ৭ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়।
প্রতিনিধি/জেএ
আপনার মতামত লিখুন :