এন এ মুরাদ,(মুরাদনগর) কুমিল্লা : ভর্তা তৈরিতে সিদল একটি অন্যতম উপাদান। সিদলের ভর্তা কিংবা লতি তরকারী খায়নি এমন বাঙ্গালী একজনও পাওয়া যাবে না। বহুকাল থেকে এই সিদল তৈরি করছেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার সলফা গ্রামে। বর্তমানে ওই গ্রামের চারটি পরিবার তাঁদের বাপ-দাদার আদি এ পেশাকে ধরে রেখেছেন। একসময় ওই গ্রামের ৪০টি পরিবার সিদল তৈরির কাজ করতো। সময়ের স্রোতধারায় নানা প্রতিকুলতার মুখে তাঁরা হারিয়ে গেছেন। অনেকে পেশা বদলে চলে গেছেন অন্য পেশায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ডাঙ্গিতে (মাচায় ) সিদল শুকানোর কাজ করছেন রবিন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা দুই জাতের সিদল করি । একটি হচ্ছে পোয়া অন্যটি পুঁটি সিদল। পোয়া মাছ চট্রগ্রাম থেকে সংগ্র করি। পুঁটি মাছগুলো আনি মেঘনা ও সিলেট এলাকা থেকে।
পুঁটি মাছ আনার পর এগুলোর পেট কাটতে এলাকার প্রায় একশ মহিলা কাজ করেন। তারা মাছের পেট কেটে নিয়ে জাল দিয়ে তেল উঠায়। ওই তেল মহিলাদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা কেজি কিনে রাখি ।
তারপর মাছগুলো ডাঙ্গিতে শুকানোর কাজ চলে। মাছ শুকানোর এক মাস পর মটকীর ভীতর ঢুকানো হয়। তখন ওই তেলটা ব্যবহার করা লাগে। এবছর ৪’শ থেকে ৫’শ মটকী সিদল হবে। পৌষ- মাঘ মাসে মটকীগুলো মাটির নীচে গর্ত করে তিন মাস পুঁতে রাখার পর তৈরি হবে সিদল। প্রতি বছর আশ্বিন,কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পযর্ন্ত চলে এ কাজ।
রবিন্দ্র চন্দ্র সরকার আরো বলেন, বংশ পরাম্পনা আমরা এ কাজ করে আসছি। এক সয়ময় নদী-নালা , খাল-বিল, জলাশয় উন্মক্ত থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। এখন আর এলাকায় মাছ পাওয়া যায়না। মাছ সব কিনে আনতে হয়। বাজারে সিদলের চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে বেশি করতে পারি না। এই সিজনে ১’শ মন পুঁটি সিদল করছি।
আমাদের সিদল - ঢাকা, চট্রগ্রাম ,নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি , ফেনিসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। এছাড়াও ভারতের আগরতলা এবং তেল্লামুড়ায় আমাদের কিছু পাইকার আছে। তাঁরা এসে সিদল নিয়ে যায়। সরকার যদি সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে আমাদের সহায়তা করে তাহলে সিদল উৎপাদন করে এই শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখতে পারবো। অন্যথায় শতোবছর ধরে করে আসা আমাদের এই জাত পেশাকে আর টিকাতে পারবো না।
প্রতিনিধি/জেএ
আপনার মতামত লিখুন :