এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলঘেঁষা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের পানগুছি ও বলেশ্বর নদ এখন রূপালি ইলিশে ভরপুর। যেমন এর রূপ, তেমনি স্বাদ ও গন্ধ—ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে এই নদীর ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর মধ্যে এখানকার ইলিশকেই সেরা বলা হয়।
ইলিশ ধরাকে ঘিরে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে হাজারো জেলের। তবে দাম অতিরিক্ত বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে এই সুস্বাদু মাছ।
স্বাদে-গন্ধে অনন্য
মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার বলেশ্বরের ইলিশের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। পদ্মার ইলিশের মতোই এখানকার ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোজনরসিকরা ছুটে আসেন এই ইলিশ কিনতে। অনেকে বরফ ছাড়াই টাটকা ইলিশ কিনে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দেন।
জেলেদের জালে ভরা মৌসুম
গত কয়েক দিন ধরেই নদীতে ধরা পড়ছে মণকে মণ বড়সড় ইলিশ। ৮–৯শ’ গ্রাম থেকে শুরু করে দেড়-দুই কেজি ওজনের ইলিশ অহরহ উঠছে জেলেদের জালে। এর মধ্যে বেশির ভাগই মা ইলিশ। দুপুরের পর থেকে ঝুড়ি ভরা ইলিশ নিয়ে জেলেরা ফেরেন আড়তে, সেখান থেকে বিকেলের পর চলে যায় উপজেলা শহর ও আশপাশের হাটবাজারে।
দামে নাগালের বাইরে
মোরেলগঞ্জ মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন কয়েকশ’ কেজি ইলিশ উঠছে। তবে দাম বেশ চড়া।
৮–৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ: কেজি ১,০০০–১,৫০০ টাকা
১ কেজি ওজনের ইলিশ: কেজি ১,৬০০–১,৮০০ টাকা
দেড় কেজি ওজনের ইলিশ: কেজি ২,০০০ টাকা
২ কেজি ওজনের ইলিশ: কেজি ২,২০০–২,৮০০ টাকা
মাছ ব্যবসায়ীরা জানালেন, দাম যতই হোক, ইলিশ অবিক্রিত থাকছে না। স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্তের মানুষ আত্মীয়দের জন্য ককসিটভর্তি ইলিশ কিনে পাঠাচ্ছেন।
স্থানীয় জেলে সোহেল শাহ ও রাসেল হাওলাদাররা জানান, আগে দিনে এক-দুই কেজি ছোট ইলিশ জালে উঠলেও এখন প্রতিদিন ৮–১০ কেজি বড় ইলিশ পাচ্ছেন। এতে জেলে, মহাজন ও ব্যবসায়ী—সবাই লাভবান হচ্ছেন।
মাছবাজারে আসা ক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বললেন, “দেড় কেজি ওজনের দুটি ইলিশ কিনলাম ১৬শ’ টাকা কেজি দরে। দাম বেশি হলেও বলেশ্বরের ইলিশের স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।”
মোরেলগঞ্জ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার জানান, বলেশ্বরের ইলিশের স্বাদ, গঠন ও তেলজাতীয় বৈশিষ্ট্য আলাদা। এখন ভরা মৌসুম হওয়ায় আবহাওয়ার অনুকূলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। অক্টোবর মাসে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম শুরু হলে ২২ দিন সব নদ–নদী ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
তিনি আরও জানান, মা ইলিশ চেনার জন্য অভিজ্ঞতা দরকার। সাধারণত ডিমওয়ালা ইলিশ চ্যাপ্টা আকৃতির হয় এবং পেট টিপলে ডিম বের হয়। আর ডিম ছাড়া ইলিশ তুলনামূলক ঢিলা হয়ে থাকে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক শরিফা সুলতানা বলেন, “ইলিশের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দাম আনতে আমরা বাজার মনিটরিং শুরু করেছি। শিগগিরই মাঠে নামবে সংস্থাটি।”