এম আর আমিন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম রেলওয়ের যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় দীর্ঘদিন ধরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংকটের কারণে ট্রেন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাড়ছে ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটি এবং যাত্রীসেবায় ভোগান্তি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বাজেট বরাদ্দ ও টেন্ডার প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ওয়ার্কশপ এবং লোকোশেডে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। রেলওয়ের যন্ত্রাংশ কেনাকাটার জন্য গত এক বছরেও বড় কোনো কার্যক্রম হয়নি।
এদিকে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নানামুখী প্রশাসনিক জটিলতা ও প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার কারণে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। এতে রেলওয়ের মেরামত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, ফলে পুরনো ইঞ্জিন-চালিত ট্রেনগুলোতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিচ্ছে ঘনঘন।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দ্রুত কেনাকাটা কার্যক্রম শুরু না হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ট্রেন চলাচলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে যন্ত্রাংশ ও জ্বালানী ক্রয়ের জন্য প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিসিএস) গত ৩ মাসে ১৬৫ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আর ২ সিওএসকে (পূর্ব ও পশ্চিম) দিয়েছে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর আগের ৯ মাসে অর্থ দিয়েছিল মাত্র ৫৫ কোটি টাকা।
পাহাড়তলী রেলওয়ের সিসিএস সৃত্রে জানায়, গত বছরের আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের নানা জটিলতায় অর্থ ছাড়তে পারেনি মন্ত্রণালয়। ফলে যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় স্থবিরতা দেখা দেয়। এই নিয়ে গত ৬ মার্চ অর্থ সংকটে রেলের যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় স্থবিরতার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ হয়। তার কিছুদিন পর একসাথে বরাদ্দের ২য় ও ৩য় কিস্তির ১১০ কোটি টাকা ছাড় দেয় মন্ত্রণালয়। পরে আবারো চলতি বছরের জুন মাসে ৪র্থ কিস্তির ৫৫ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে বলে সুত্র জানায়।
সৃত্রে জানায়, কেনাকাটার জন্য ৩ কিস্তির ১৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে মন্ত্রণালয়, এরমধ্যে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিওএস) পূর্ব ও পশ্চিমের জন্য দেয়া হয়েছে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকী ১৬৫ কোটি টাকা খরচ করেছে সিসিএস। এরমধ্যে পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করেছে ৪০ কোটি টাকা আর জ্বালানী তেল ক্রয় করেছে প্রায় ৩০ কোটি টাকার আর ফরেন (বিদেশী) যন্ত্রাংশের জন্য এলসি করা হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। আর স্থানীয় মালামাল কেনার জন্য টাকা পেয়েছে মাত্র ২৫ কোটি টাকা। বর্তমানে আবারো বকেয়ার পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ২১০ কোটি টাকা।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলকে সচল রাখতে সরঞ্জাম কেনাকাটার জন্য বছরে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা দরকার। সম্প্রতি যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা যথেষ্ঠ নয়। এদিকে প্রক্রিয়া জটিলতায় এখনো পাওয়ার কারের যন্ত্রাংশ সরবরাহ পায়নি ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগ। দ্রুত মালামাল সরবরাহ না হলে নিয়মিত সার্ভিস দেয়া কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মালামাল সরবরাহ না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বৈদ্যুতিক কর্মকর্তা (সিইই) মো. শফিকুর রহমান বলেন, যন্ত্রাংশ সংকট চরম আকারে পৌছেছে, স্টকে অনেক মালামাল নেই, আমরা অলরেডি জোড়াতালি দিয়ে কোনরকমে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। আমাদের যন্ত্রাংশগুলো বিদেশি হওয়ায় আমদানি করতে হয়, ফলে সরবরাহ পেতে একটু সময় লাগে। তবে আমদানি করার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি, আশা করছি শীঘ্রই সরবরাহ পাব।
এবিষয়ে জানতে চাইলে, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) মো. বেলাল সরকার বলেন, ’মালামাল কেনার জন্য কনজ্যুমারদের প্রচুর চাহিদাপত্র জমা হয়েছে। ফরেন মালামাল আমদানির প্রক্রিয়া চলমান আছে, চলতি অর্থবছরে ৪০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করেছি আরো ১৬০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। যন্ত্রাংশ কেনাকাটার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। বকেয়া পরিশোধ করে কেনাকাটায় গতি আনতে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা দরকার।