ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬০ বেডের শিশু ওয়ার্ডে চার শতাধিক রোগী, মেঝে-বারান্দায় রেখে চলে চিকিৎসা। রোগীর চাপ বেশি থাকায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা কম থাকায় হাসপাতালের বারান্দায় ও মেঝেতে চলছে চিকিৎসা। এতে রোগীরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও। ১ হাজার বেডের হাসপাতালে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার রোগী ভর্তি হওয়ায় অন্যান্য ওয়ার্ডেও রয়েছে সিটের সমস্যা। পাশাপাশি রয়েছে ওষুধ, পানিসহ বাথরুমের সমস্যা।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থেকে সীমা রানী তার অসুস্থ শিশুসন্তান নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওয়ার্ডে তার জায়গা হয়নি। সিট মিলেছে ওয়ার্ডের বাইরে। সেখানে নেই ফ্যান। ভ্যাপসা গরমে অসুস্থ সন্তান নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সীমা রানী। আরেক অভিভাবক তাদের তিন মাস বয়সের অসুস্থ শিশু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তার সিট হয়েছে হাসপাতালের লিফটের সামনে। লিফট থেকে নামার পরেই তার সন্তানের সিটের ওপর পা পড়ে রোগী ও রোগীর অভিভাবকদের। প্রতিনিয়তই এ রকম চিত্র ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে।
সম্প্রতি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তাই সিটের তুলনায় কয়েক গুণ শিশু রোগী ভর্তি করা হয় এই হাসপাতালে। পা ফেলার জায়গা নেই এই ওয়ার্ডে। শিশু রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শুধু শিশু ওয়ার্ডে এমন দৃশ্য নয়, প্রতিটি ওয়ার্ডেই রোগীর বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা ছাড়াও বৃহত্তর ময়মনসিংহ, ঢাকা বিভাগের গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে রোগী আসে এই হাসপাতালে।
সম্প্রতি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের ৩১ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। হাসপাতালের মেঝে, সিঁড়ি, এমনকি লিফটের সামনেও শিশু রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা ছিল না। বেডের ওপরে নেই ফ্যান। একে তো দাবদাহ, তার ওপর নেই ফ্যান, রোগীর লোকজনের ভিড়ে যেন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা শিশু ওয়ার্ডে। চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের এই দৃশ্য।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ৬০টি। প্রতিদিন শুধু শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে চার শতাধিক রোগী। এ রকম চিত্র প্রতিদিনের। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ভিড় ঠেলে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে ডাক্তার/নার্সদের। শিশু বিভাগের ভর্তিকৃত রোগীর অভিভাবক আনোয়ার হোসেন বলেন, এভাবে একটি হাসপাতাল চলতে পারে না। হাসপাতালে সিট নেই, ওয়ার্ডের বাইরে রাখা হচ্ছে শিশুদের। এরপর নেই পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা। সব মিলে শিশু ওয়ার্ডের করুণ দশা। তিনি দ্রুত সিট বাড়ানোর দাবি জানান।
শিশু ওয়ার্ডের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, গরমে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর পরও প্রতিটি চিকিৎসক তাদের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, ১ হাজার শয্যার হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার পর্যন্ত রোগী ভর্তি করা হয়। বেডের বাইরে মেঝেতে ও বারান্দায় বিছানা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। কোনো রোগীকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে তিনি জানান। সূত্র : ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :