ডেস্ক রিপোর্ট : উভয় সংকটে পুরান ঢাকার ২ হাজার ২০০ ভবন মালিক। শত শত বছর আগে তৈরি করা এসব পৈতৃক বাড়ি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা বিবেচনায় একটি রিটে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, এসব ভবনের কোনোরকম পরিবর্তন করা যাবে না। যার কারণে এসব ভবন পরিবর্তন বা সংস্কারও করতে পারছেন না। এমনকি এসব ভবনের জায়গায় রাজউক থেকে প্ল্যানও পাশ করা বন্ধ রয়েছে। এতে অনেকে ঝুঁকি নিয়েও বসবাস করছেন। এসব ভবন নিয়ে সরকার থেকেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। রিটকারী আরবান স্টাডি গ্রুপও বলছে, এ অচলাবস্থার একটি সুরাহা হওয়া দরকার। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি এসব শত শত বছরের প্রত্নসম্পদ দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উচ্চ আদালতে রিট করে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরবান স্টাডি গ্রুপ (ইউএসজি)। এর মধ্যে ২০১৮ সালের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এসব বাড়ি অক্ষত রেখে সেগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য নির্ণয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। মাঠপর্যায়ে জরিপ করে সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল ও নিষ্পত্তির আগে এসব স্থাপনায় কোনো ধরনের পরিবর্তন করা যাবে না বলে আদেশ দেয় আদালত। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে পারেনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় ভবন মালিকদের নোটিশ, চিঠিও দিতে পারছে না তারা। ফলে পুরোনো বাড়ি ভাঙা ও নতুন ভবন নির্মাণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের ৩৮ দশমিক ৩ কাঠা জায়গার মালিক সুমন চক্রবর্তী ও তার সাত ভাই। সম্প্রতি তারা তাদের একটি একতলা পুরোনো ভবনের বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলেন। উদ্দেশ্য নতুন ভবন নির্মাণ। তখন ভবনটির গুরুত্ব তুলে ধরে থানায় সাধারণ ডায়ারি করে আরবান স্টাডি গ্রুপ। পরে গত ২৮ অক্টোবর ভবনটি ভাঙার কাজে বাধা দেয় গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ। একইভাবে রাজউক ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকেও তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে সুমন চক্রবর্তী জানান, বাড়িটি আমার পিতামহ তৈরি করেছেন। ভবনটির বয়স প্রায় ১০০ বছরের উপরে হয়েছে। পানি পড়ত। কারু কাজ ভেঙে গেছে। আমরাও থাকতেও পারছি না। যখন ভাইদের মধ্যে ভাগ করার জন্য ভাঙতে নিয়েছিলাম। তখন বাধা আসে। এর আগে আমরা এ বাড়ি নিয়ে কোনো নোটিশ পাইনি। আমরা চাই, এটি যদি সরকার নিয়ে যায়, তাহলে আমাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক। না হয় আমাদের এখানে নতুন ভবন করার অনুমতি দিক। এভাবে আমরা আমাদের নিজেদের মালিকানা জায়গায় কিছুই করতে পারছি না। এভাবে কতদিন অপেক্ষা করব।
জানা যায়, দীননাথ সেন রোডের এ বাড়িটির নির্মাণকাল ১৮৯৮ সাল। একতলা বাড়িটিতে নিও ক্লাসিক্যাল রীতিতে নির্মিত পাঁচটি খিলান ছিল, এর মধ্যে তিনটির অভ্যন্তরের অলংকৃত অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে ভবনটি এখনো যে অবস্থায় রয়েছে, নকশাগুলো সংরক্ষণ ও ছাদ পুনর্নির্মাণ করে সংস্কার করা সম্ভব বলে জানায় আরবান স্টাডি গ্রুপ।
শুধু গেন্ডারিয়ার এ বাড়িটি নয়, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের অধিকাংশ পুরান ভবনে থাকার ব্যবস্থা নেই। ভবনগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঐ রিট আদেশের কারণে ভবনগুলো ভেঙে নতুন ভবন করতে পারছেন না মালিকরা। আবার সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করছে না।
এ বিষয়ে আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, আমরা রিট করে এখন প্রায় প্রতিদিনই আদালতে হাজির হতে হচ্ছে। আমরা ২ হাজার ২০০ ভবন নিয়ে রিট করেছি, সরকার চাইলে অন্তত ৫০টি ভবন অতি দ্রুত সংরক্ষণ করতে পারে। মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে এটি শুরু করুক, পরে না হয় ধীরে ধীরে অন্য ভবনগুলো করা যাবে। এত বছরে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় একটি অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়া অনেক ভবনও ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা দ্রুত সরকারকে বিল্ডিং কোড আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এ নিয়ে রাষ্ট্রের একটি নীতিমালা দরকার। যেন এই ভূমির মালিক যারা, তারা যেন বঞ্চিত না হোন, আর অন্যদিকে রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদগুলোও রক্ষা পায়। এর জন্য রাষ্ট্রকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে শুধু নীতিমালা দিয়ে এ পুরাকীর্তি রক্ষা করা সম্ভব না।
এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ) আফরোজা খান মিতা বলেন, পরিদর্শন শেষে খসড়া তালিকা করা হয়েছে। অংশীজনদের নিয়েও বৈঠক হয়েছে। চলতি বছরই বাড়িগুলোর তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
সুত্র : ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :