লেলিন চৌধুরী: বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে গত দুই সপ্তাহে ১৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব শিশুর শরীরে নিউমোনিয়া রোগের লক্ষ্মণ ছিল। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গিয়েছে। চমকে ওঠার মতো জরুরি খবর এটি। বিশেষ করে চলমান করোনা মহামারির সময়কালে এ ধরনের ঘটনা নিঃসন্দেহে গুরুত্বের দাবিদার। এই ১৫টি শিশুমৃত্যুর তথ্য হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এসব শিশুর বেশির ভাগকে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আবার হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে কোনো কোনো শিশু মৃত্যুবরণ করে। যেসব রোগীর মৃত্যু হাসপাতালে হয় সেগুলোকে নথিভুক্ত অথবা রিপোর্টেড ডেথ বলা হয়। যে রোগী বাড়িতে মারা যায় সেটা সাধারণত নথিভুক্ত বা রিপোর্টেড হয় না। সাধারণভাবে নথিভুক্ত নয় বা আনরিপোর্টেড মৃত্যুর সংখ্যা নথিভুক্ত মৃত্যুর বেশি অনেক বেশি হয়। অবশ্য এটা আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য সত্য। সে হিসাবে পার্বত্য অঞ্চলে রিপোর্টেড শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ১৫ হলে আনরিপোর্টেড মৃত্যুর আরও বেশি হবে।
বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট সময়কালে এতোগুলো শিশুর মৃত্যু নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এসব শিশুমৃত্যুর কারণ কী হতে পারে? রোগতত্ত্বীয় তদন্ত ব্যাতিরেকে সঠিক কারণ বলা সম্ভব নয়। তবে সম্ভাব্য কারণগুলো অনুমান করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে- [১] শিশুর নিউমোনিয়া যে রোগটি প্রতি শীতকালে বেড়ে যায়, [২] করোনাজনিত নিউমোনিয়া, [৩] নতুন ধরনের কোনো ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা অন্যকোনো রোগজীবানু দ্বারা সংক্রমণ। প্রতিটি শীতকালে ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুর নিউমোনিয়া বেড়ে যায়। পার্বত্য বাংলাদেশেও সেরকম হয়। কিন্তু এবছর সে রোগটি এতো বেড়ে গেলো কেন তার সুরাহা হওয়া দরকার। এতোজন শিশুর মৃত্যুর কারণ কি করোনাজনিত নিউমোনিয়া, যা শুধু শিশুদের তীব্রভাবে সংক্রমিত করে অর্থাৎ নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট? এ প্রশ্নটির মীমাংসা হওয়া জরুরি। অথবা এ দুটি সম্ভাবনার বাইরে নতুন কোনো রোগজীবাণু দ্বারা এই শিশু-নিউমোনিয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নটির উত্তর জানা সবিশেষ প্রয়োজন। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আইইডিসিআর (জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান)-র পক্ষ থেকে একটি গবেষণা দলকে অতিদ্রুত পার্বত্য অঞ্চলে পাঠানো হোক। একইসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে পার্বত্য জেলাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
লেখক: চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদ।
আপনার মতামত লিখুন :