আনিস আলমগীর: ‘মাসুদ রানা’র জন্ম আমার জন্মেরও আগে। ১৯৬৬ সালের মে মাসে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে গড়ে প্রায় ৪০ দিন অন্তর এই সিরিজের একটি পর্ব প্রকাশিত হয়ে আসছে। সিরিজটির প্রকাশক এবং সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম প্রকাশিত হচ্ছে এই বইয়ের প্রচ্ছদে। পাঠক জানতো তিনিই এর লেখক কিন্তু অর্ধ শতাব্দী পার হওয়ার পর শুরু হয় নতুন বিতর্কÑ কে এর আসল লেখক? প্রায় ৫০০ বইয়ের অনেকগুলোই নাকি কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা নয়। পরে আদালতও ফালতু একটা রায় দিলো। মাসুদ রানা নিয়ে হালের আলোচনায় একটা জিনিস অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি যে বহুল জনপ্রিয় এই সিরিজটি ব্যক্তিগতভাবে আমার কখনোই খুব পছন্দের ছিলো না। সর্বোচ্চ ১০টির বেশি পড়েছি কিনা আমার সন্দেহ আছে এবং আমি মাসুদ রানা পড়েছি সিরিজ আকারে নয়, যেটি যখন মনে ধরেছে সেটি। দুর্ভাগ্য যে একটার কাহিনিও মাথায় নেই। আমার উপন্যাস পড়ার শুরুটা খুব কম বয়স থেকেই। ক্লাস সিক্সে ভর্তি হওয়ার আগেই উপন্যাস পড়া শুরু করেছিলাম। কাকতালীয়ভাবে আমার পড়া প্রথম উপন্যাস ছিলো বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস টেকচাঁদ ঠাকুরের লেখা ‘আলালের ঘরের দুলাল’। স্কুল বয়সে দ্বিতীয় উপন্যাস পাঠ ছিলো যাযাবরের ‘দূরবীন’। তেমন কিছু বুঝিনি পড়ার পরে। এর পরেরটা আরও ভয়াবহ। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাথ বধ কাব্য’। এসব বই আমাদের বাসার বুক শেলফে পেয়েছিলাম।
উপন্যাসের প্রতি আমার অনীহা শুরুর আগেই স্কুলে কোনো এক প্রতিযোগিতায় পেয়েছিলাম ‘কী পাইনি’ নামের একটি উপন্যাস। লেখক ছিলেন আকবর হোসেন। সেটি পড়ার পর আমার প্রচুর আগ্রহ জমে বই পড়ার। তারপর তার লেখা ‘অবাঞ্ছিত’ নামের একটি উপন্যাস কিনে পড়েছিলাম। উপন্যাস পড়ার ধুমের মাঝে হাতে আসে ‘মাসুদ রানা’। আমার সমবয়সী ভাগ্নে নাসির ছিলো এই মাসুদ রানার এক অন্ধ ভক্ত। সেবা প্রকাশনীর এই সিরিজ ছাড়াও এমন কোনো বই নেই সে স্কুল জীবনে না কিনে ছেড়েছে। তার পুরো রুমের খাটের নিচ, টেবিল, আলমারি ভর্তি ছিলো মাসুদ রানা আর সেবা প্রকাশনীর বইয়ে। সেখান থেকে নিয়ে আমি কয়েকটি পড়েছিলাম, দুয়েকটা নিজেও কিনেছিলাম। কিন্তু আমার কাছে শুরু থেকে এটিকে অবাস্তব কাহিনি মনে হতো। একজন সুপার হিরো যার পক্ষে সব কিছুই সম্ভব, অসম্ভব বলে কিছুই নেই, যে কখনো পরাজিত হয় না, যার কোনো মৃত্যু নেই- এমন কাহিনি আমার মনে ধরেনি। তবে একটি জিনিস আমি প্রশংসা না করে পারি না। মাসুদ রানা উপন্যাসের সহজ বাক্য গঠন, ভাষা শৈলী অত্যন্ত চমৎকার যেটি যেকোনো পাঠককে শুধু কাছে টানবে না তার নিজের লেখনী উন্নত করার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। রেখেছেও। আমার পরিচিত অনেকেই লেখালেখিতে হাত পাকিয়েছে মাসুদ রানা পড়েই। আমি নিজে সেবা প্রকাশনীর অনেক বই কিনেছি। কয়েক মাস আগেও অনলাইনে কিনেছি। বিশ্ববিখ্যাত সব উপন্যাসের অনুবাদ তাদের মতো কোনো প্রকাশনা করেনি। কাজী আনোয়ার হোসেন, আপনি আপনার কর্মের জন্য পাঠক হৃদয়ে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। পরপারে ভালো থাকুন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :