শিরোনাম
◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী 

প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারী, ২০২২, ১১:৫২ দুপুর
আপডেট : ১৮ জানুয়ারী, ২০২২, ০২:০৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ‘বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড’ হাসপাতাল চালু হলে কোনো রোগীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে না : ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ

ভূইয়া আশিক রহমান : [২] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) দেশের প্রধান স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এটি ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এ্যান্ড রিসার্চের (আইপিজিএমআর) ঐতিহ্য বহন করে, যা ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। ১৯৯৮ সালে সরকার দেশে উচ্চ চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য আইপিজিএমআর-কে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে। বিভিন্ন বিশেষত্বে উচ্চ মানের স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রদানের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঈর্ষণীয় খ্যাতি রয়েছে। দেশে এবং বিদেশে অন্যান্য পেশাগত সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা, পাঠদান ও গবেষণার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত অনেক বিভাগ রয়েছে। শিক্ষার পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়টি মেডিসিনের বিভিন্ন শাখায় গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, বিশ্ববিদ্যালয়টি তৃতীয় স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসাবে সাধারণ এবং বিশেষায়িত ক্লিনিক্যাল পরিষেবাও প্রদান করে আসছে।

[৩] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ‘পিজি হাসপাতাল’ নামেই বেশি পরিচিত, বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে এর নাম ছিলো ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ।

[৪] চিকিৎসা শিক্ষায় স্নাতকোত্তর কোর্স প্রদানের জন্য ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণার দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও এই সংস্থার ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা ছিলো না। এটি ন্যস্ত হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ-এর কার্যক্রমসহ অনেকগুলো চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের এম.বি.বি.এস ডিগ্রি প্রদান করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল সংসদীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এমবিবিএস কোর্স চালু করা হলেও এই প্রতিষ্ঠানে পূর্বাপর কেবল স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রদান করা হতো।

[৫] উপাচার্যগণ : এম. এ. কাদেরী (৩০ এপ্রিল ১৯৯৮-৯ জানুয়ারি ২০০১), মো. তাহির (১০ জানুয়ারি ২০০১-১৭ মে ২০০১), মাহমুদ হাসান (১৮ মে ২০০১-২৩ নভেম্বর ২০০১), এম এ হাদী (২৪ নভেম্বর ২০০১-২১ ডিসেম্বর ২০০৬), মো. তাহির (২১ ডিসেম্বর ২০০৬-৪ নভেম্বর ২০০৮), মো. নজরুল ইসলাম (৫ নভেম্বর ২০০৮-২৪ মার্চ ২০০৯), প্রাণ গোপাল দত্ত (২৫ মার্চ ২০০৯-২৪ মার্চ ২০১২), প্রাণ গোপাল দত্ত (২৫ মার্চ ২০১২-২৪ মার্চ ২০১৫), কামরুল হাসান খান (২৪ মার্চ ২০১৫-২৩ মার্চ ২০১৮), কনক কান্তি বড়ুয়া (২৪ মার্চ ২০১৮-২৩ মার্চ ২০২১) এবং মো. শারফুদ্দিন আহমেদ (২৯ মার্চ ২০২১-বর্তমান)

[৬] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হাসপাতাল আছে যাতে উন্নতমানের চিকিৎসা প্রদানের আয়োজন আছে। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক কাদরী। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট পাঁচটি বহুতল ভবন আছে; ব্লক এ, বি, সি, ডি এবং কেবিন ব্লক। শিক্ষা, গবেষণা এবং চিকিৎসা সমান্তরালভাবে চলে এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রশাসনিক দপ্তর খোলা থাকে।

[৭] অবস্থান : ঢাকার শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ঠিক পাশেই রয়েছে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড মেটাবোলিক ডিসঅর্ডারস (বারডেম)। [৮] অনুষদ সমূহ : ক্যাজুয়ালটি ডিপার্টমেন্ট, মেডিসিন বহির্বিভাগ, সার্জারি, নিউরোসার্জারি, গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি, হেমাটোলজি, সাইকিয়াট্রি, পেডিয়াট্রিক সার্জারি এবং হাসপাতালের ডিসপেনসারি আলাদা একটি কমপ্লেক্সে অবস্থিত।

[৯] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস স্মরণ করে বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালের স্বায়ত্তশাসন চেয়ে আসছিলাম। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত, দীর্ঘ ২৭ বছরেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দেয়নি কেউ। অবশেষে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনকের নামে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল।

[১০] তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএসএমএমইউ একের পর এক চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও গবেষণায় আগের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা এখন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা দিই। তার প্রমাণ করোনায় চিকিৎসার জন্য কোনো রোগীকে দেশের বাইরে যেতে হয়নি। বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবায় পোস্ট গ্রাজুয়েশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই দিই আমরা।

[১১] চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিএসএমএমইউতে প্রতিদিন আউটডোরে ৮ থেকে ৯ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য আসেন। আমাদের হাসপাতালের সেবা মানুষের কাছে পছন্দ হয়। আমাদের সেবা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীরা উপকার পাচ্ছেন। স্বল্পমূল্যে রোগের ইনভেস্টিগেশন করতে পারছেন। অন্য হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক মূল্যে ইনভেস্টিগেশন করাচ্ছেন রোগীরা। কম খরচে অপারেশন, অর্ধেক খরচে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন। রোগের ইনভেস্টিগেশন সহজলভ্য করে দিয়েছি।

[১২] ২৪ বছর ধরে বিএসএমইউতে কোনো ইমার্জেন্সি ছিলো না। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেই ইমার্জেন্সি চালু করেছি। জার্নাল রেগুলারাইজড করেছি। রেগুলার সায়েন্টিফিক সেমিনার হচ্ছে। বিএসএমএমইউতে হাজার হাজার রোগী আসেন, তাদের চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি এবং রোগের ইনভেস্টিগেশনও সুলভমূল্যে করছি।

[১৩] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রোগীদের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এই হাসপাতালকে রোগীরা ভরসা করেন। ফলে এই হাসপাতালকে ঘিরে রোগীদের প্রত্যাশা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে রোগীদের সব প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারি না। আল্ট্রাসনো, এক্সরে ও সিটি স্ক্যান করার জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয়। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যতোটুকু সম্ভব আমরা রোগীদের সেবা দিচ্ছি। কেউ কেউ হয়তো একদিনে সেবাটি গ্রহণ করতে পারেন না। কারণ রোগীর পরিমাণ এতো বেশি যে, কুলিয়ে ওঠা যায় না। যেকোনো রোগের ইনভেস্টিগেশনে বিএসএমএমইউর সুনাম আছে, অথেনটিসিটি আছে যে, এখানকার রিপোর্ট বিশ্বসযোগ্য। সঠিক হয়। রোগীদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। হয়তো সব পারছি না। তবে রোগীদের ৯০ শতাংশ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি বলে মনে হয় আমার।

[১৪] প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসাসেবা নিতে বিদেশে যান। মেডিকেল পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে এক নম্বর স্থানে আছে প্রতিবেশী ভারত। তারপরই রয়েছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও দুবাই। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালে মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়ে খরচের পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে কমতে দেখা গেছে।

[১৫] বর্তমানে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো ‘অতি-বিশেষায়িত’ হাসপাতাল নেই। বিএসএমএমইউই দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা প্রদানকারী কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে থাকবে ১০০ শয্যার অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি সুবিধা; একটি লিভার, গল ব্লাডার ও প্যানক্রিয়াস সেন্টার; অঙ্গ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র; ক্যান্সার সেন্টার; মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং ডেন্টাল সেন্টার। এছাড়াও থাকবে কার্ডিওভাসকুলার সেন্টার, জেরিয়্যাট্রিক সেন্টার, স্পাইনাল কর্ড সেন্টার, বার্ন ইনজুরি সেন্টার, একটি হেলথ স্ক্রিনিং সেন্টার এবং একটি জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্র।

[১৬] অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি রোগী আসেন বিএসএমএমইউতেÑ এমন তথ্য জানিয়ে ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ধরে নিচ্ছি, রোগীরা এই হাসপাতালে এসে সেবা পান। বিএসএমএমইউর এক্সটেনশন ‘সুপার স্পেশালিস্ট’ হাসপাতাল সম্পন্ন হওয়ার পথে। হাসপাতালের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। প্রায় ১ হাজার বেডের এই হাসপাতাল আগামী মার্চ মাসে উদ্বোধনের চেষ্টা করছি। কোরিয়ান অর্থায়নে। স্বল্প সুদের ঋণে। ৪০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। লোকবল নিয়োগ প্রায় সম্পন্ন।

[১৭] তিনি বলেন, গত দুই বছরে বিএসএমএমইউ প্রমাণ করেছে চিকিৎসার জন্য কোনো রোগীকে দেশের বাইরে যেতে হয়নি, আমরা আশা করছি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হলে এদেশের কোনো রোগীকে আর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হবে না। এই হাসপাতালেই সব ধরনের রোগের চিকিৎসাসেবা দিতে পারবো। যারা মনে করেন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেবো, ভালো কেবিন নেবো, ভালো ধরনের ইনভেস্টিগেশন করবো, সে সমস্ত রোগীদের থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুরের পরিবেশে চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম হবো।

[১৮] সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটিকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে সব ধরনের ফ্যাসিলিটি থাকবে। ট্রান্সপ্ল্যান্ট, ক্যান্সার চিকিৎসা বা চোখের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়। সব ধরনের লেটেস্ট অপারেশন হবে। রোবোটিক সার্জারি ব্যবস্থার পরিকল্পনাও আমাদের আছে। যে সমস্ত চিকিৎসা, ইনভেস্টিগেশন বিদেশে গিয়ে করতে হয়, তা আমাদের দেশে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালেই করতে পারবো। এই হাসপাতালে দেশি চিকিৎসকের সঙ্গে প্রয়োজনে বিদেশি চিকিৎসকও রাখবো।

[১৯] বিএসএমএমইউকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই যে, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হলো গবেষণা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় বলেছেন যে, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের গবেষণার পরিমাণ খুব কম। গবেষণার মান বৃদ্ধির জন্য টাকার পরিমাণ, ইনসেনটিভসহ সব সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রত্যেক বিভাগীয় চেয়ারম্যান যেন রিসার্চওয়ার্ক করেন, এজন্য আমরা উৎসাহিত করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণার কাজ বাড়াবো। ভবিষ্যতে কনভেনশন সেন্টারকে লাইব্রেরি, সেমি ল্যাব করে আরও উন্নত করার চেষ্টা করবো। আশা করি শিক্ষা, সেবা ও গবেষণায় বিএসএমএমইউকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আমরা সক্ষম হবো।

[২০] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্নোয়নে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইমার্জেন্সি না থাকলে পূর্ণাঙ্গ হয় না, আমি ইমার্জেন্সি চালু করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়ালেখা বন্ধ ছিলো, এটা ওপেন করেছি। সব ধরনের অপারেশন বন্ধ ছিলো করোনার সময়, তা আবারও চালু করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অনিয়মিত ছিলো, সেটাও রেগুলার করেছি। গবেষণা ডে পালন করে গবেষণায় উন্নতি করার ব্যবস্থা চালু করেছি।

[২১] কেবিন ব্লগগুলোতে রোগীরা যাতে আরও বেশি সেবা পান, সেজন্য চিকিৎসকদের ও নার্সদের উপস্থিতির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। সব ধরনের রোগের ইনভেস্টিগেশন যাতে একটা জায়গায় করা যায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করেছি। ইমার্জেন্সি ল্যাবরেটরি সার্ভিসে এলে সমস্ত চিকিৎসাসেবা বা ইনভেস্টিগেশন করা যাবে। এ সমস্ত কিছুই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।

[২২] চিকিৎসাসেবা নিতে এসে অনেকেই ভাবেন যে, আরও বেশি সেবা পেলে ভালো হতো। একজন চিকিৎসক যেন সারাক্ষণ রোগীর পাশে বসে থাকেন, যা আসলে বাস্তবতার নিরিখে সম্ভব নয়। একেক রোগীর একেক রকম প্রত্যাশা। অন্য অনেক হাসপাতালের চেয়ে আমাদের চিকিৎসক, নার্স বা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোগীর সেবায় আরও অনেক বেশি সক্রিয়। রোগীর সেবায় তারা আত্মনিয়োগ করছেন। আমি বিশ্বাস করি, সকলে যদি আরও যত্নবান হন, তাহলে রোগীরা আরও অনেক বেশি সন্তুষ্ট হবেন।

[২৩] করোনাকালে মাত্র ১৫ দিনে একটি ফিল্ড হাসপাতাল আমরা তৈরি করেছি। এই ফিল্ড হাসপাতাল সেবার ক্ষেত্রে রোগীদের অনেক উপকারে এসেছিলো। এখনো ওমিক্রনের কারণে অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। কেবিন ও বঙ্গমাতা ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছি। ওমিক্রনে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে উপায় নেই। একজন আক্রান্ত হলে চারগুণ সংক্রমিত হচ্ছে। একই ঘরের একজন ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। যদি কেউ ভাবেন যে ওমিক্রনে কোনো সমস্যা হবে না, তিনি ভুল করবেন। কারণ যাদের ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস আছে, লাংসের সমস্যা আছে, ক্যান্সার আছে, তাদের অনেকেই ওমিক্রনে মারা যান। যাদের কো-মরবিডিটি আছে, তারা ঘরের বাইরে যাবেন না।

[২৪] করোনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সতর্কতার অংশ হিসেবে ভিড় বা জনসমাবেশে যাবেন না। মাস্ক পরবেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন। ভ্যাকসিন নেবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছেন। এই ভ্যাকসিন মানুষ বিনামূল্যে পাচ্ছেন। বিনামূল্যে ভ্যাকসিন গ্রহণের সুযোগটা যদি মানুষ নেয়, তাহলে করোনা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারবো। করোনা ব্যবস্থাপনায় সারাবিশে^ ২৬ তম আর দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা এক নম্বর হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। করোনা হয়ে গেলে ১৪ দিন যদি কেউ কাজ না করেন, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ পঙ্গু হয়ে যায়। ফলে করোনা যাতে না হয়, সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে।

[২৫] কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলছেন যে, ওমিক্রন মানে ইমিউনিটি গ্রো করবে। এর মধ্যে ওমিক্রন হয়তো আশি বা একশো শতাংশ লোকের হয়ে যাবে। ইসরায়েল বা ফ্রান্সের মতো আমরা বলি না, অর্ধেক লোক আক্রান্ত হবে, বাকি অর্ধেক আক্রান্ত হবে না। ওমিক্রনের ভ্যারিয়েন্টকে কেউ কেউ ভ্যাকসিন হিসেবে মনে করেন। ইমিউনিটি ভোগ করবে। কিন্তু আমরা মনে করি, ডেল্টা, ওমিক্রন কিংবা করোনা সবই কো-মরবিটি যাদের আছে তাদের জন্য ক্ষতিকর। ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

[২৬] করোনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ। একটি থেকে আটশো আরটিপিসিআর স্থাপিত হয়েছে। এখন সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা আছে। ফিল্ড হাসপাতাল করা হচ্ছে। আরও চিকিৎসক প্রস্তুত আছেন। দশ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দশ হাজার নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। চার হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে করোনা ব্যবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সফল হয়েছেন। যারা বিদেশ থেকে দেশে আসছেন, তাদেরও যদি সাথে সাথে ইনভেস্টিগেশন করা যায়, তাদের আইসোলেশন বা করোনা পজেটিভ হলে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা যাবে। যারা বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসবেন, তাদের র‌্যাপিড আরটিপিসিআর টেস্ট যেন করা হয়, সেই আহ্বান আমি জানাবো।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়