শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারী, ২০২২, ০১:৫৫ রাত
আপডেট : ১২ জানুয়ারী, ২০২২, ০১:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খান আসাদ: বাঙালির সাম্যবাদ চর্চা

খান আসাদ: ‘নব্যরাশিয়া মানবসভ্যতার পাঁজর থেকে একটা বড় মৃত্যুসেল তোলার সাধনা করছে যেটাকে বলে লোভ। এ প্রার্থনা মনে আপনিই জাগে যে, তাঁদের এই সাধনা সফল হোক।’ ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, অমিয় চক্রবর্তীকে, এক চিঠিতে। রাশিয়ায় এই ‘লোভ থেকে মুক্তির’ সাধনা সফল হয়নি। ইতিহাসে ব্যক্তিমালিকানার লোভ থেকে মুক্তির প্রথম প্রচেষ্টা, তা পুরোটা সফল যে হয়নি সে তো আমরা ইতিহাস থেকেই জানি। সাফল্য হয়তো যে ‘ব্যক্তিমালিকানা লোভ’ থেকে মুক্তির একটি প্রচেষ্টা ছিলো, যা থেকে শিক্ষা ও প্রেরণা নেওয়া যায়। সফল হয়নি, কারণ ওই ‘লোভের’ প্রত্যাবর্তন। একদিকে সোভিয়েতের (স্বশাসিত সমবায় ব্যবস্থা) হাতে ক্ষমতার বদলে রাষ্ট্রযন্ত্রের অভিভাবকদের ক্ষমতার লোভ, অন্যদিকে নাগরিকদের নীলজিন্স ও পশ্চিমা ‘ব্যক্তি-স্বাধীনতার’ লোভ। ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের ও সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব আছে। এই দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণ পথে মীমাংসিত না হলে, সেখান থেকেই সহিংসতার সূচনা। এই সহিংসতাকে বৈধতা দেওয়া হয়, নানান কিছু দিয়ে। জাতি শ্রেষ্ঠত্ব, ধর্ম শ্রেষ্ঠত্ব, আদর্শ শ্রেষ্ঠত্ব, বর্ণ শ্রেষ্ঠত্ব, লিঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব, নানান কিছু দিয়ে।

ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের দ্বন্দ্ব, নানান প্রকারে প্রকাশিত হয়। একদিকে ‘ব্যক্তি স্বাধীনতার’ প্রশ্ন, অন্যদিকে ‘সমষ্টির অধিকারের’ প্রশ্ন। রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিষয়ে লিখেছেন, ১৯৩০ সালেই। ‘মানুষের ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগত সীমা তারা যে ঠিকমতো ধরতে পেরেছে তা আমার বোধ হয় না’। প্রসঙ্গ সোভিয়েত রাষ্ট্রনীতি। ‘একটি সুবিধার কথা এই যে, যদিও সোভিয়েত মূলনীতি সম্বন্ধে তারা মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে অতি নির্দয়ভাবে পীড়ন করতে কুণ্ঠিত হয়নি তথাপি সাধারণভাবে শিক্ষার দ্বারা চর্চার দ্বারা ব্যক্তির আত্মনিহিত শক্তিকে বাড়িয়েই চলেছে- ফ্যাসিস্টদের মতো নিয়তই তাকে পেষণ করেনি।’ (সমাজতন্ত্র ও ফ্যসিবাদকে কিংবা হিটলার ও স্টালিনকে যেসকল পুঁজিবাদী বুদ্ধিজীবী সমান্তরালে আনে, রবীন্দ্রনাথ অনেক আগেই তাঁদের চিন্তার দৈন্যতা দেখেছেন।) সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসের যে বিবর্তন ও রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের বিলুপ্তি, সেখানে বাইরের (সংশোধনবাদ বা সিআইএ) ফ্যাক্টর হয়ত রয়েছে, কিন্তু মৌলিকভাবে তা সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের ও সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের ফলাফল। ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বাধীনতার সীমারেখার বিষয়ে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘ব্যষ্টি যদি শৃঙ্খলিত হয় তবে সমষ্টি স্বাধীন হতে পারে না’।

দুটি বিষয়ে বলার জন্য উপরের এই ভূমিকা। [এক] বাঙালির সাম্যবাদ চর্চা। আমি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে দেখি বাঙালির সাম্যবাদ চর্চার রাজনীতির অংশ হিসেবে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, এর পরের ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা, ১৯৬৯ সালের ১১ দফা, সব দাবির মর্মার্থে রয়েছে সাম্যের মূল্যবোধ, বৈষম্য ও শোষণ থেকে মুক্তির প্রেরণা। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয়ী হয়েছে, কিন্তু ব্যক্তি এখনো মুক্ত হয়নি সেই লোভ থেকে যা তাকে অপরের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে, ইহলৌকিক ব্যক্তিমালিকানা লোভ ও পারলৌকিক অবাধ ভোগলিপ্সার লোভে । এই লোভ বাধ্য করে মানুষকে দারিদ্র্য ও ধর্মান্ধতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখতে। ক্ষমতাবান লোভীদের হাতে যখন রাষ্ট্রযন্ত্র, তখন তা দরিদ্র ব্যক্তি, নারী, আদিবাসী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের শৃঙ্খলিত করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাই প্রাসঙ্গিক। বৈষম্য, সহিংসতা থেকে মুক্তি এবং ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়েই সাম্যবাদ চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।

[দুই] বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের উপর নিওলিবারাল ও নিওকনজারভেটিভ চিন্তার প্রভাব। গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদ নিয়ে মার্কিনি প্রোপাগাণ্ডার মুল কথা ‘সমষ্টির উপর ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব’, ব্যক্তিস্বাধীনতার কিংবা ব্যক্তিঅধিকারের নামে। ব্যক্তি মুক্ত না হলে যেমন সমষ্টি মুক্ত হতে পারে না, তেমনই সমষ্টির স্বাধীনতা ছাড়া ব্যক্তিও মুক্ত হতে পারে না। পুঁজিবাদী সমাজে বিত্তবান ব্যক্তিও শৃঙ্খলিত সম্পদ মালিকানা কিংবা ক্ষমতার লোভের শিকলে। ব্যক্তির ভোটের অধিকার একটি ঐতিহাসিক অর্জন। কিন্তু সেটিকে গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হিসেবে প্রচার করে নিওকনরা, যা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা কিংবা অসততা। ব্যক্তির জীবনে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে, সেই সমাজের বা সমষ্টির দিকে তাকাতে হবে। যে ব্যবস্থায় ব্যক্তি ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাহীন, সেই ব্যবস্থার দিকে তাকাতে হবে। শুধু ব্যক্তির খণ্ডিত ভোটের ‘অধিকার’ দিয়ে ব্যক্তির সামাজিক ও আধ্যাত্মিক মুক্তি ঘটে না। ঘটে এমন সমাজ ও সমষ্টিতে, যখন বাইরের অভিভাবক ও ভেতরের ব্যক্তিতাবাদী লোভ থেকে সবাই মুক্ত। শুধু একটি শ্রেণির বা শুধু পুরুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা কিংবা খণ্ডিত আইনি অধিকার নয়, সমাজের সকল মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সমানাধিকার তথা সমষ্টির মুক্তির ধারণা সাম্যবাদী চিন্তার মূলে। বাঙালির সাম্যবাদ চর্চা বিকশিত হোক। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়