শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১১ জানুয়ারী, ২০২২, ০১:১৯ রাত
আপডেট : ১১ জানুয়ারী, ২০২২, ০১:২০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ভেজাল ওষুধে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, ফার্মেসীগুলোর টার্গেট গরিব ও পড়তে পারে না সাধারন মানুষদের

নিউজ ডেস্ক : [২] বিশ্বে বাংলাদেশি উৎপাদিত ওষুধের সুনাম ও চাহিদা বাড়লেও দেশের চিত্র ভিন্ন। শুধু মুনাফাই নয়; অতিরিক্ত লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের এ বিষ খাইয়ে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে মহানগরীর পাড়া-মহল্লার ফার্মেসীগুলো। সু-চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ভেজাল ওষুধ কিনে উল্টো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ওষুধের মান নিয়ে তাই প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। একশ্রেণির ওষুধ কোম্পানি বেশি মুনাফা লাভের আসায় তৈরি করছে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল ওষুধ। এসব ওষুধ সেবন করে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছে জটিল ও কঠিন রোগে। অনেক সময় এসব ওষুধ সেবনে মারাও যাচ্ছে রোগী।সূত্র: ইনকিলাব

[৩] দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে নকল-ভেজাল ওষুধের কারবার। বিভিন্ন বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অতীতে এমন অনেক ভেজালকারী ও বিক্রেতা ধরা পড়েছে। চক্রটি দীর্ঘদিন আয়ুবের্দিক ওষুধ তৈরির ভুয়া লাইসেন্সে রীতিমতো কারখানা বানিয়ে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের মোড়কে ভেজাল ওষুধ বানাচ্ছে। ওষুধ তৈরির নিরাপদ স্থান হিসেবে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার, ডেমরাসহ পুরান ঢাকার কিছু এলাকাকে বেছে নিয়েছে।

[৪] নকল-ভেজাল ওষুধ নিয়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইটের গুঁড়ার সঙ্গে নানা ধরনের রং ও কেমিক্যাল মিশিয়ে ওষুধ বানানো হয়। গ্রামে-গঞ্জে এ ধরনের ওষুধই নাকি বেশি বিক্রি হয়। কারণ নকল ওষুধে বিক্রেতাদের লাভ হয় অনেক বেশি। শুধু মুখে খাওয়ার ওষুধই নয় ইনহেলার, অয়েন্টমেন্ট বা ইনজেকশনের মতো ওষুধও নকল হচ্ছে। এমন উপাদান দিয়ে ইনহেলার তৈরি হয়েছে, যা উপকার তো করবেই না; বরং মারাত্মক ক্ষতি করবে।

[৫] ক্রেতারাও মূল কোম্পানির ওষুধের চেয়ে দাম কম হওয়ায় এসব ওষুধ কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। এতে টাকা গচ্চা যাচ্ছে। একই সঙ্গে রোগীর লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ও অস্থিমজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

[৬] রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসীগুলোতে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি বাড়ছে। মহানগরীর পাড়া-মহল্লার ফার্মেসীগুলোতে নিম্নমানের ওষুধের ছড়াছড়ি। মূল কোম্পানীর ওষুধের মতো হুবহু লেবেলে নকল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। মূল কোম্পানির ওষুধের চেয়ে দাম কম হওয়ায় এসব ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। রোগীর লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, অস্থিমজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নজরদারী না থাকায় নকল ওষুধ বিক্রির রমরমা ব্যবসা চলছে।

[৭] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সায়েদুর রহমান বলেন, নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন ভয়াবহ অপরাধ। দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে এটি থামবে না। এতে রোগ তো সারেই না, উল্টো আরও জটিলতা বাড়ে।

[৮] খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দেশের শীর্ষ ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেফ-৩। এর বাজার মূল্য প্রতি পিস ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। একটি চক্র হুবহু নকল সেফ-৩ তৈরি করে বিক্রি করছে একই দামে। আর ফার্মেসীগুলো নকল এ ওষুধটির ১৪টি ট্যাবলেটের এক প্যাকেট ক্রয়ই করছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সুযোগ বুঝে ফার্মেসীগুলো গরিব ও পড়তে পারে না এ রকম রোগীর কাছে ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা করেই বিক্রি করে অতি মুনাফা করছে। শুধু মুনাফাই নয়; অতিরিক্ত লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের এ বিষ খাইয়ে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আরেক শীর্ষ ওষুধ কোম্পানি স্কয়ার ফার্মার গ্যাস্টিকের ছয় টাকা দামের সেকলো-২০ মিলি গ্রাম বাজারে হুবহু নকল করে ৫০-৭৫ পয়সায় বিক্রি করছে। একইভাবে শীর্ষ ওষুধ কোম্পানি ইনসেপ্টা ফার্মার অ্যাজমা ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যার জন্য ১৬ টাকা মূল্যের মনটেয়ার নকল করে মাত্র ২-৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, ১১ টাকা মূল্যের ন্যাপ্রোক্সেন আড়াই টাকা এবং ১৬ টাকা মূল্যের একমি ল্যাবরেটরিসের মোনাস-১০ ৩ টাকায় বিক্রি করছে। ফার্মেসী মালিকরাও মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার লোভে করোনা মহামারিতে বহুল ব্যবহৃত নামসর্বস্ব এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে অধিক মুনাফা করছে। একই জেনেরিক নামের ওষুধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করলেও একেকটির মান একেকরকম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদারকির অভাবেই নিম্নমানের ওষুধ দেদার বিক্রি হচ্ছে।

[৯] এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুল কালাম লুৎফুল কবির বলেন, ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িতরা গণহত্যার মতো অপরাধ করছে। না জেনে ওষুধ খেয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছেন।

[১০] বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ এমন এক পণ্য, যার সঙ্গে জীবন-মৃত্যু জড়িয়ে। অ্যালোপ্যাথিক থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক সব ওষুধেই মিলছে ভেজাল। ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের এসব ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

[১১] তাদের মতে, নিম্নমানের ওষুধ খেয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিকার পাওয়ার সুনির্দিষ্ট আইনও নেই বাংলাদেশে। এছাড়া ওষুধ খাতের দুর্নীতি, চিকিৎসকদের কমিশনের লোভ, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে ভেজাল ওষুধ বাজারজাতকরণের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তারা।

[১২] ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখন দেশে ২৪১টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ বানাচ্ছে। যে কোনো ওষুধ বাজারজাত করার আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে বাজারজাত করতে হয়। কিন্তু একবার বাজারজাত করার পর সেই ওষুধের গুণগত মান নিয়ে আর কোনো তদারকি হয় না। এই সুযোগেও অনেক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ওষুধের মান কমিয়ে দেয়। অবশ্য মাত্র ৪ হাজার ওষুধ পরীক্ষা করে দেখার সামর্থ্য আছে সরকারের। ফলে বিপুল পরিমাণ ভেজাল, নকল বা নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিএইচও) এর তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে যে ওষুধ বিক্রি হয় তার শতকরা ১৫ ভাগ ওষুধ নিম্নমানের, ভেজাল বা নকল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়