শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৩ জানুয়ারী, ২০২২, ০৮:৩২ সকাল
আপডেট : ০৩ জানুয়ারী, ২০২২, ০৮:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইসলামে ওয়াকফের বিধান

ইসলামি ডেস্ক: মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম, ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’
সুরা মায়েদার তিন নম্বর আয়াতে আল্লাহর এ ঘোষণায় বুঝা যায়- ইসলাম সার্বজনীন পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। কুরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কুরআনে কোনো কিছুকেই অবজ্ঞা করা হয়নি।’ (সূরা আনআম-৩৮) জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মৌলিক বিষয় হিসেবে ইসলামের একটি বিধান, যার নাম ওয়াকফ।

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ওয়াকফর উদাহরণ হচ্ছে মসজিদে কোবা। ৬২২ সালে মদীনা মনোয়ারায় নির্মিত হয়। তারও ছয় মাস পর ইসলামি ওয়াকফর দ্বিতীয় উদাহরণ মদিনার কেন্দ্রে মসজিদে নববী। রাসুল (সা.)-এর সময় থেকে শুরু করে খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে অনেক ওয়াকফ কার্যক্রম চালু হয়।

ওয়াকফের অর্থ ও সংজ্ঞা

‘ওয়াকফ’ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ স্থগিত করা, আবদ্ধ করা, স্থির রাখা, নিবৃত্ত রাখা। ওয়াকফ ইসলামি শরিয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা। কোনো সম্পত্তি এর মালিক নিজের মালিকানা থেকে মুক্ত করে আল্লাহর সম্পত্তি ঘোষণা করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে জনকল্যাণ বা জনসেবার জন্য উৎসর্গ করলে সেই উৎসর্গ করার কাজটিকে ওয়াকফ বলা হয়।

১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মুসলমান ওয়াকফ বৈধকরণ আইনে প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ওয়াকফ অর্থ কোনো মুসলমান কর্তৃক তার সম্পত্তির কোনো অংশ এমন কাজের জন্য স্থায়ীভাবে দান করা, যা মুসলিম আইনে ‘ধর্মীয়, পবিত্র বা সেবামূলক’ হিসেবে স্বীকৃত।

ওয়াকফ ইসলামের প্রমাণিত ও নির্দেশিত একটি বিষয়। এটি রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমার দ্বারা প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে, ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে এলেন এবং বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি খায়বারে এমন উৎকৃষ্ট কিছু জমি লাভ করেছি, যা এর আগে আর কখনো পাইনি। আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কী আদেশ দেন?’

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূল স্বত্ব ওয়াকফে আবদ্ধ করতে এবং উৎপন্ন বস্তু সদকা করতে পারো।’ বর্ণনাকারী ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ওমর (রা.) এ শর্তে তা সদকা (ওয়াকফ) করেন যে তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং কেউ এর উত্তরাধিকারী হবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৫৮৬)

ফলে ওমর (রা.) উৎপন্ন বস্তু অভাবগ্রস্ত, আত্মীয়-স্বজন, দাসমুক্তি, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফির ও মেহমানদের জন্য সদকা করে দেন।

ওয়াকফের ভিত্তি

কুরআন ও হাদিসে ওয়াকফ বিষয়ে সরাসরি কোনো দিক-নির্দেশনা না থাকলেও এই দুটি উৎসেই এ বিষয়ে যথেষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। যাতে মুসলমানদের সম্পত্তি ওয়াকফ করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, 'নামাজ আদায় কর ও আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা তোমাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্য ভালো যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে তোমরা তা পাবে আল্লাহর নিকট। উহা উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসেবে মহত্তর।’ (সূরা মুজ্জাম্মিল: ২০)

ইসলামে অর্থব্যবস্থাপনার দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত ও ওয়াকফ। এই দুটি বিধান মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য খুবই জরুরি। এ বিষয়ে ঈমানদারগণকে উদ্বুদ্ধ করে তাই কুরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিমনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর।’ (বাকারা: ২৬৭)

ওয়াকফের গুরুত্ব

রাসুল (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিসে মানবতার প্রতি সাহায্য ও দান করার যে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ওয়াকফকেও গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। মহানবী (সা.) তার এক হাদিসে বলেছেন, মানুষ যখন মারা যায়, তখন সঙ্গে সঙ্গে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি বিষয় ছাড়া। প্রথমত, সাদকায়ে জারিয়াহ। দ্বিতীয়ত, এমন প্রয়োজনীয় জ্ঞান, যা থেকে মানুষ জানতে পারবে ও উপকৃত হবে। সর্বশেষ, এমন নেক সন্তান, যে তার মৃত পিতামাতার জন্য দোয়া করবে। এসব ভালো কাজের ফলাফলের শেষ নেই ও তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। আর ওয়াকফ হলো তার একটি।

মুসলিম সমাজে বর্তমানে ওয়াকফর ধারণা তেমন পরিচিত নয়। মানুষ এ বিষয়ে কোনো ধারনাই রাখতে চায় না। তবে আমাদের চেষ্টা ছাড়া আর কী বা করার আছে। দেশে ওয়াকফ এর প্রতি মানুষকে উৎসাহ দেওয়া ও তার সওয়াবের বিষয়ে আলাপ করা আবশ্যক।

ওয়াকফের প্রকারভেদ

ওয়াকফ তিন ধরনের। এক. ওয়াকফ ফি লিল্লাহ অর্থাৎ সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফ। দুই. ওয়াকফ আলাল আওলাদ অর্থাৎ ব্যক্তিগত ওয়াকফ। তিন. মিশ্র ওয়াকফ। শুধু ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে সৃষ্ট ওয়াকফকে ওয়াকফ ফি লিল্লাহ বলা হয়। উৎসর্গকারীর নিজের জন্য বা পরিবার বা বংশধরদের উপকারের জন্য যখন প্রভূতভাবে উৎসর্গ করা হয় তখন তাকে ওয়াকফ আলাল আওলাদ বলা হয়।

মিশ্র ওয়াকফে ধর্মীয় ও দাতব্য প্রকৃতির সর্বজনীন উদ্দেশ্যের পাশাপাশি উৎসর্গকারীর, তাঁর পরিবার ও বংশধরদের ভরণ-পোষণ উভয় উদ্দেশ্যই কাজ করে।

যেসব জিনিস ওয়াকফ করা যায়

ওয়াকফের স্থান তথা যেসব জিনিস ওয়াকফ করা যায় তা হলো, মূল্যবান স্থাবর সম্পত্তি; যা ব্যক্তির মালিকানায় বর্তমানে আছে। যেমন—জমি, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি অথবা স্থানান্তরযোগ্য জিনিস।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আর খালিদ ইবন ওয়ালিদ (রা.)-এর ওপর তোমরা অবিচার করছো। কেননা সে তার বর্ম এবং অন্যান্য সস্পদ আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করে দিয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৯৯)

আলেমরা একমত যে, মসজিদে মাদুর ও মোমবাতি ওয়াকফ করা নিন্দনীয় নয়। পরিধানের জন্য গয়না ওয়াকফ করা ও ধার দেওয়া জায়েজ। কেননা এগুলো উপকারী জিনিস। সুতরাং জায়গা-জমির মতো এগুলোও ওয়াকফ করা যাবে।

ওয়াকফের শর্ত

ওয়াকফকারীর মধ্যে কতিপয় শর্ত থাকতে হবে, নতুবা তার ওয়াকফ করা জায়েজ হবে না। শর্তগুলো হচ্ছে-

১. ওয়াকফকারী দান করার যোগ্য হতে হবে। অতএব, জবরদখলকারী ও যার মালিকানা এখনো স্থির হয়নি এমন লোকদের পক্ষ থেকে ওয়াকফ করা জায়েজ হবে না।

২. ওয়াকফকারী বিবেকবান (জ্ঞানসম্পন্ন) হতে হবে। অতএব, পাগল ও বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না।

৩. বালিগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। অতএব, শিশুর ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না, চাই সে ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী হোক বা না হোক।

৪. বুদ্ধিমান হওয়া। অতএব, নির্বোধ লোকের ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না।

ওয়াকফকৃত বস্তুর শর্ত

ওয়াকফকৃত বস্তুর মধ্যে যাতে ওয়াকফ বাস্তবায়ন করা যায় সে জন্য ওয়াকফকৃত বস্তুর মধ্যে কিছু শর্ত আছে। সেগুলো হচ্ছে-

১. ওয়াকফকৃত বস্তুর মূল্য থাকতে হবে। যেমন—জায়গা-জমি ইত্যাদি।

২. ওয়াকফকৃত বস্তু নির্দিষ্ট পরিমাণ জ্ঞাত থাকা।

৩. ওয়াকফকৃত বস্তু ওয়াকফের সময় ওয়াকফকারীর মালিকানায় থাকা।

৪. ওয়াকফকৃত বস্তু সুনির্দিষ্ট হবে, অ্যাজমালি সম্পত্তি হতে পারবে না। অতএব, বহু মানুষের মালিকানাধীন কোনো বস্তুর একাংশ ওয়াকফ করা শুদ্ধ হবে না।

৫. ওয়াকফকৃত বস্তুতে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত না থাকা।

৬. ওয়াকফকৃত বস্তু দ্বারা ‘উরফ তথা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী উপকার গ্রহণে সক্ষম হওয়া।

৭. ওয়াকফকৃত বস্তুতে বৈধ উপকার থাকা।

ওয়াকফ ও অসিয়তের মধ্যে পার্থক্য

ওয়াকফ হলো মূল স্বত্ব নিজের রেখে বস্তুর উপকার দান করা।, অন্যদিকে অসিয়ত হলো দানের মাধ্যমে মৃত্যুর পরে বস্তুগত বা অবস্তুগত (উপকার) জিনিসের মালিক বানানো।
বেশিরভাগ আলেমের মতে, ওয়াকফ করলে তা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে এবং ওয়াকফ ফেরত নেওয়া যায় না। কেননা রাসুল (সা.) ওমর (রা.)-কে বলেছেন, ‘তুমি ইচ্ছে করলে জমির মূল স্বত্ব ওয়াকফে আবদ্ধ রেখে উৎপন্ন বস্তু সদকা করতে পার।’ (বুখারি, হাদিস : ২৫৮৬)

অন্যদিকে অসিয়ত করলে বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যকীয় হলেও অসিয়তকারী তার অসিয়তের পুরোটাই বা আংশিক ফেরত নিতে পারবে।

ডেইলি বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়