রাগিব হাসান: খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম দিনে সারাবিশ্বে নববর্ষ উদযাপনের খবরগুলো পড়ছিলাম। কিন্তু আঁতকে উঠলাম বাংলাদেশের খবর পড়ে- কেবল ঢাকা শহরেই ফানুস থেকে অন্তত ১০টি অগ্নিকাণ্ড এবং আরও অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে ২০০ এর মতো জায়গায় আগুন লেগেছে দেখলাম। কী অদ্ভুত ব্যাপার! ঢাকা শহরের মতো এরকম ঘনবসতিপূর্ণ একটা জায়গায় কোন আহাম্মকের মাথা থেকে ফানুস উড়ানোর আইডিয়া এসেছে? ফানুসে কী থাকে এটা কি কারও মাথায় আসেনি? একটা শহর যেখানে আগুন লাগলে জ্যামের কারণে বা চিপা রাস্তার জন্য দমকলের গাড়ি যেতে পারে না, গেলেও লাগে অনেক সময়, কোনো ভবনেই আগুন নিভানোর ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, সেখানে হাজার হাজার আগুন আকাশে ওড়ানো হচ্ছে, আমোদফুর্তির জন্য? ঢাকা শহরে আমার থাকা কম হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় ৫ বছর কাটিয়েছি। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এরকম ফানুস ওড়াবার হিড়িক তো দেখিনি। কোথা থেকে এই কুবুদ্ধিগুলোকে চালু করা হচ্ছে? অল্প একটু কমন সেন্স থাকলেও যে কেউ বুঝতে পারবে, হাজার হাজার আগুনের সোর্স একটা শহরের উপরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে উড়তে থাকলে তার মধ্যে কয়েকশো ফানুস জ্বলন্ত অবস্থাতেই নেমে আসবে, আর ধরাবে আগুন।
যতোটুকু মনে পড়ে, দেশে কেবল বৌদ্ধ পূর্ণিমার সময়ে ধর্মীয় রীতি অনুসারে ফানুস ওড়াতে দেখেছি। তাও সীমিতভাবে এবং নিরাপত্তার দিক মাথায় রেখে। সেসময় এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে দেখিনি। কিন্তু এটা কীভাবে নিউ ইয়ার্সের মাঝে আসলো? আর এভাবে হাজারে হাজারে? এ এক বিচিত্র রহস্য। আনন্দ উৎসবের আরও একশোটা উপায় আছে। কিন্তু আকাশ থেকে আগুনের বৃষ্টি ঝরানো আনন্দের কাজ নয়, সেটা বরং চরম আহাম্মকের মতো কাজ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ফানুস হয়তো ওড়ানো হয়, কিন্তু কখনোই ঘনবসতিপূর্ণ শহরে নয়। আমেরিকার কথা আমি জানি, এখানকার অর্ধেক স্টেটে ফানুসকে ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেন? কারণ এখানে এমনিতেই নানান সময়ে দাবানল লেগে যায়, সেই রিস্কের মধ্যে যেচে পড়ে কেউ আকাশে আগুন ওড়াবে আমোদফুর্তির জন্য। বাংলাদেশেও তাই ফানুস ওড়ানোটা কেবল বিশেষ অনুষ্ঠানেই সীমিত আকারে নিয়ন্ত্রণের আওতায় অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাজার হাজার ফানুস ওড়ানোটা অচিরেই খুব বিশাল কোনো দুর্ঘটনার কারণ হবে। আশা করি শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আনন্দ করা মানে বুদ্ধিহীন হওয়া নয়, অন্যকে বিপদে ফেলা নয়। ফানুসের এই মরণফাঁদ আসুক নিয়ন্ত্রণে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :