সুজন কৈরী : [২] এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ২২ ডিসেম্বর জিডি করেছেন। পাশাপাশি হলি ফ্যামিলির অধ্যক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি।

[৩] উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বাসা উত্তরা এলাকায়। এজন্য তিনি থানায় একটি জিডি করেছেন। তবে জিডিতে যৌন হয়রানির কোনো কথা উল্লেখ নেই। হুমকির বিষয়ে বলা হয়েছে।

[৪] জিডিটি তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলেই তদন্ত শুরু হবে।

[৫] ঘটনাস্থল রমনা থানায় হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে ওই থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

[৬] রমনা থানার ওমি মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

[৭] ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানান, তিনি পড়ালেখায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলেন। এক শিক্ষার্থীর কথা মতো তিনি ওই শিক্ষকের কাছে কলেজেই প্রাইভেট পড়া শুরু করেন ২০২০ সালের শুরুর দিকে। দুই দফায় তার কাছে ২০ হাজার টাকা নেন ওই শিক্ষক। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সেপ্টেম্বরের শুরুতে অনলাইনে আইটেম পরীক্ষার জন্য তার সঙ্গে যোগযোগ হয় ওই শিক্ষকের। এরপর থেকে তাকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা লিখতেন ওই শিক্ষক।

[৮] শিক্ষার্থী বলেন, রাজি না হওয়ায় আমাকে কলেজে ডেকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছেন তিনি। আমাকে পাস করাবে না এবং কলেজ থেকে বিতাড়িত করার কথাও বলেছেন। তিনি প্রভাব খাটিয়ে তার সাবজেক্টের ভাইভায় দুই বার ফেল করিয়েছেন আমাকে।

[৯] নিজের এবং পরিবারের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে তিনি এতদিন বিষয়টি কাউকে জানাননি। কিন্তু যখন শিক্ষকের কারণে পড়ালেখা হুমকির মুখে তখন থানায় জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

[১০] এর আগেও তিনি মৌখিকভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।

[১১] হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দৌলতুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিাযোগ পেয়েছেন। তার মেডিকেল কলেজে সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত পাঁচ সদস্যের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটির কাছে বিষয়টি তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

[১২] কমিটিতে হলি ফ্যামিলির তিনজন প্রফেসর, একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং মহিলা অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালক রয়েছেন।  এর আগেও এই ছাত্রী একই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি-এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, মেয়েটি মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন, কিন্তু কারো নাম বলেননি তখন।

[১৩] এ বিষয়ে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন ওই ছাত্রী। তিনি লিখেছেন- ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকদের অবশ্যই ভয় পাবে কিন্তু সেটা শ্রদ্ধার চোখে, কোনো অসাধু শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাব না মানায় পরীক্ষায় বার বার ফেল হওয়ার ভয়ে নয়। মেডিকেল কলেজে এত দিন আছি। এই প্রথম এ রকম অপ্রীতিকর প্রস্তাবের সম্মুখীন হলাম। যদিও এখন অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে যে তারাও এই একই শিক্ষকের দ্বারা বিভিন্নভাবে হেনস্থা হয়েছে। এখন আমি যাতে আর সামনে না আগাই সে জন্য বিভিন্ন দিক দিয়ে নতুন নতুন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর টিভি

[১৪] ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানান, তাকে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন ওই শিক্ষক। তার বাসায় না এলে একই শিক্ষাবর্ষে অনেক বছর রেখে দেওয়ারও হুমকি দেন তিনি। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর কলেজ থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়ায় বাধ্য হয়ে থানায় জিডি করেন তিনি।