সাঈদ তারেক: বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯, পেটেন্ট নাম ‘ওমনি মাইক্রন’ সংক্ষেপে ‘ওমাইক্রন’, বাংলায় হয়ে গেছে ‘ওমিক্রন’। সে যাই হোক, নামে কিবা আসে যায়। করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটির যুগপৎ উৎপত্তি বতসোয়ানা আর দক্ষিণ আফ্রিকায়। সে অক্টোবর মাসের ঘটনা। প্রথমবার অফিসিয়ালি শনাক্ত হয় ২৪ নভেম্বর। এরপর থেকে দুয়েকজন করে এ দেশে ও দেশে। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ত্রিশটি দেশে ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
এই ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহতা আক্রমণরীতি কর্মক্ষমতা ইত্যাদী নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই শোরগোল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা চিরাচরিত বেয়াকুবের মতো না জেনে না বুঝে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্থ করতে হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেশে নানা সতর্কতা প্রস্তুতি বিধিনিষেধ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রায় দেড় মাসেও এই ভ্যারিয়েন্টে কোথাও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এমন শোনা যায়নি। বলা হয়েছিলো এর কোনো লক্ষণ নেই, এটা নাকি শরীরের ইমিউন এবং এন্টিবডিকে পাশ কাটিয়ে কর্ম সম্পাদন করে অর্থাৎ মানুষ মেরে ফেলে। কেউ বললো প্রধানত তরুণ এবং অল্প বয়সীদেরই ধরছে। প্রথম দিকে এটাও জানা গিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকায় যাদের দেহে এই ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশই ছিলো এইডসের রোগী। যদি তাই হয়, ধরে নেওয়া যায় ভ্যারিয়েন্টটি এইডস রোগীদের সহজেই কাবু করতে সক্ষম। আফ্রিকা প্রধানত এইডসপ্রবণ অঞ্চল, দেখাও যাচ্ছে ওখানকার বিভিন্ন দেশেই সংক্রমণের হারটা বেশি।
৪ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের এক চিকিৎসককে বলতে শুনলাম চরিত্রগত দিক থেকে এটা নাকি একটা মাইল্ড ভাইরাস। যে দক্ষিণ আফ্রিকায় এ ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি সেখান থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে দেশটি নাকি এ নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয়। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। উল্টো, প্রেসিডেন্ট সেই গবেষককে গালমন্দ করছেন যিনি রাতারাতি বিখ্যাত হওয়ার জন্য ভ্যারিয়েন্টটি আবিষ্কার করে তাকে বিধ্বংসী বলে প্রচার করেছিলেন। এর ফলে এখন দেশটি একঘরে, গোটা বিশ্ব থেকেই প্রায় বিচ্ছিন্ন। ডব্লিউএইচও হালে বলছে, ভ্যারিয়েন্টটির ধরন গতি প্রকৃতি নিয়ে নাকি গবেষণা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তাই যদি হয় তাহলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত করে বলার সময় এখনো আসেনি। অথচ এর মধ্যেই কোনো কোনো মহল গোটা বিশ্বকে ভীতিকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন এটা নাকি ওষুধ কোম্পানিগুলোর চাল। নতুন ভ্যারিয়েন্টের নামে আতঙ্ক ছড়িয়ে আবার কোনো টিকা বেচার ধান্ধা করা যায় কিনা।
সম্প্রতিকালে শীতের দেশগুলোয় সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। তবে ওমিক্রনে নয়। ওসব দেশের জনগণ ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিনেটেড, তারপরও করোনার গণআক্রমণ। আসলে পশ্চিমের দেশগুলোয় ফ্লুভাইরাস একটি বাৎসরিক রোগ। প্রতি শীতেই লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রধানত বয়স্ক এবং জটিল রোগীরাই ভোগে বেশি। মারা যায়। আমেরিকায় প্রতি বছর শুধু ফ্লুভাইরাসে প্রায় এক লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে থাকে। এই ফ্লু’র রোগীরা যখন করোনাক্রান্ত হয়
খুব কমই সার্ভাইভ করতে পারে। গত দুই বছর ধরে এমনটাই দেখা গেছে। এবারও লক্ষণে মনে হচ্ছে ব্যত্যয় হবে না। আমাদের দেশেও শীতকালে সর্দিজ্বর নামে ফ্লুভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কিন্তু গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল বলে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। তাছাড়া খাদ্য উপকরণ কায়িক পরিশ্রম ইত্যাদির কারণে মানুষের গড় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পশ্চিমাদের তুলনায় বেশি। গত দুই বছর করোনা মোকাবেলায় তা প্রমাণিত হয়েছে। সে হিসেবে বলা যায়- এখন পর্যন্ত যে খবরাখবর তাতে ওমিক্রন এখানে এসে গেলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। তার ওপর কিছু লোকের তো টিকা নেওয়া আছেই, একেবারে কোনো কাজই দেবে না তা তো নয়। কাজেই এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই অঞ্চল শীতপ্রধান বা এইডসপ্রবণ কোনোটাই নয়। টিকা গ্রহণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ইনশাআল্লাহ এই আপদও মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো বলে আমার বিশ্বাস। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :