শরীফ শাওন: [২] মায়ের নামে কেনা জায়গায় বিশ্বমানের ল্যাব স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে এই প্রকল্প পাস হলেও গতিহীন হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তাদের দাবি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে শেখ হাসিনার এসডিজি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, জনগণের কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নসহ তা সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে।
[৩] প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ‘বঙ্গমাতা ন্যাশনাল সেলুলার এন্ড মলিকিউলার রিসার্চ সেন্টার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প’ একনেকে পাস হয়। ১ হাজার ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়সম্বলিত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ হয় জুন ২০২৩ সাল। ৩টি স্তরে প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
[৪] প্রকল্পের প্রথম ফেইজে অস্থায়ী ল্যাব ও প্রকল্প অফিস এবং দ্বিতীয় ফেইজে প্রধান ল্যাব নির্মাণ করা হবে। প্রথম ফেইজের কাজ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্পন্ন হবে আশাবাদ জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এতে মোট প্রকল্পের ১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হবে। দ্বিতীয় ফেইজের কাজ সম্পন্ন হলে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হবে।
[৫] তবে প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় ফেইজের কাজ শেষ হলে তৃতীয় ফেইজে বর্ধিত করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এই ফেইজের আওতায় প্রকল্প থেকে উদ্ভাবিত সকল স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট পণ্য মানব দেহে ব্যবহারের লক্ষ্যে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।
[৬] কর্মকর্তাদের দাবি, পৃথিবীতে এ মানের ল্যাব রয়েছে হাতে গোনা ৮ থেকে ১০টি, আর এশিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র জাপানে। করোনা ভ্যাকসিন কিনতে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হবে। এই ল্যাব স্থাপিত হলে আমরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি। ভারত থেকে অক্সিজেনও কিনতে হবে না, ল্যাব থেকেই পাওয়া যাবে।
[৭] দ্বিতীয় ফেইজের কাজ অর্থাৎ প্রধান ল্যাব চলতি বছর ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন করার কথা থাকলেও শুরু করা যায়নি নির্মাণ কাজ। অভিযোগ, প্রকল্পের নির্ধারিত এলাকার ৩ একর জায়গা অবৈধ দখলদারদের করায়ত্ত্ব থাকার কারণে শুরু করা যায়নি দ্বিতীয় ফেইজের কাজ।
[৮] স্থানীয় মানুষজন জানান, জায়গাটিকে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের সুতিকাগার’। দেশের শীর্ষ ২০ সন্ত্রাসীর ১৫ জনই নাকি এই বস্তি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
[৯] বর্তমানে প্রকল্প পরিচালক ডা. এস এম হাসিবুল ইসলাম। তিনি চলতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। এর আগে আরও ৩ জন প্রকল্প পরিচালক দায়িত্ব পালন করেন।
[১০] প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ফেইজের অস্থায়ী ল্যাব ও প্রকল্প অফিস নির্মাণের লক্ষ্যে একটি ভবন করা হয়েছে। ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় অফিস এবং ৯ তলায় অস্থায় ল্যাব রয়েছে। তবে প্রকল্পের মূল ল্যাব স্থাপন হবে মহাখালির নির্ধারিত স্থান ‘৭ তলা বস্তি’ এলাকায়। সেখানে মোট ১০ একর জমির উপর ভবন নির্মিত হবে। সেখানেই হবে দ্বিতীয় ফেইজের কোর ফ্যাসালিট বা প্রধান ল্যাব। এই ল্যাবে ভ্যাকসিন ও অক্সিজেনসহ বিভিন্ন উদ্ভাবন মূলক কাজ হবে। কর্মকর্তাদের দাবি, ল্যাবটি হবে বিশ^মানের, যা আইএসও এবং এফডিআই স্ট্যান্ডান্ড মেনে চলবে। ফলে এতে পৃথিবীর সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি এখানে থাকবে।
[১১] কর্মকর্তারা আশা জানিয়ে বলেন, বর্তমানে নামকরা বিজ্ঞানীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘ব্রেইন ড্রেইন’ করছে আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলো। এই ল্যাব স্থাপন হলে আমরাও তাই করতে পারবে। আশা করা যায়, ৫০ বছর পর প্রায় ৮ হাজার কর্মী এবং বিজ্ঞানী এখানে কাজ করবে। কর্মী ও ল্যাব ব্যবহারে আরও ২২ হাজার বিদেশি বিজ্ঞানী এখানে আসবেন। এসকল বিজ্ঞানীরা ল্যাব ব্যবহারে আকৃষ্ট হলে, তারা উদ্ভাবনে বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন। তাদের উদ্ভাবন দেশে ব্যবহারের পাশাপাশি রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। রপ্তানির মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
আপনার মতামত লিখুন :