শিরোনাম
◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী

প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ০২:০৮ দুপুর
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ০২:০৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ৩৬ দিনে নির্মিত নোনাজলের কাব্য’ সিনেমার গল্প শোনালেন পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত

ভূঁইয়া আশিক রহমান: [২] ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত হওয়ার পেছনের গল্প : রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতÑ একজন লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি টিস স্কুল অব দ্য আর্টস থেকে স্নাতকোত্তর। স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে। কীভাবে চলচ্চিত্রের প্রতি এতো টান তৈরি হলো? রেজওয়ান শাহরিয়ার বলেন, আর্ট কালচার থেকে আমাদের পড়াশোনা বেশ দূরে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ব্যবধান মাত্র একটি দেয়াল। দেয়ালের এপাশে আমরা ওপাশে চারুকলা। আইবিএতে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাস শেষ করে চারুকলায় গিয়ে সময় কাটাতাম। মনে হতো অন্য একটা জগতে চলে এসেছি, যেখানে সবাই সৃষ্টিকর্মে মত্ত। সেখানেই দেখলাম একটা ‘ফিল্ম এপ্রিসিয়েশন কোর্স’-এর পোস্টার। ভর্তি হয়ে গেলাম। কোর্সের পরই মাথায় ঢুকে গেলো সিনেমার পোকা। আইবিএতে পড়ার সময় সুমিত নির্মাণ করেছিলেন ‘সিটি লাইফ’ নামে একটি ডকু-ফিকশন। যার বদৌলতে ডাক পান বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বার্লিনেল ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসে। স্নাতক শেষ করার পর প্রায় তিন বছর চাকরি করেছিলেন তিনি।

[৩] সিনেমা নির্মাণ ও প্রযোজনা শুরু যেভাবে
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত বলেন, এ পর্যন্ত আমি চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি প্রযোজনা এবং পরিচালনা করেছি তিনটি। এ ছাড়া দু’টি ছবি রচনা, তিনটির সম্পাদনা, পাঁচটির শব্দ সংমিশ্রণ, তিনটি ছবির গ্রাফিক ডিজাইনসহ নানা ধরনের কাজে জড়িত। প্রতি সেমিস্টারেই একটি করে সিনেমা বানাতে হতো। চাকরি ছেড়ে নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। নিউইয়র্কে চলার জন্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। আমি সিনেমায় ফ্রিল্যান্স করা শুরু করলাম। কাজটা কঠিন ছিলো। কারণ আমাকে কেউ চেনে না। কে কাজ দেবে? কষ্ট হয়েছে, কিন্তু পেরেছি।

[৪] ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমায় প্রযোজক পেলেন যেভাবে
নিউইয়র্কে থাকার সময় ‘স্পাইক লি রাইটিং গ্র্যান্ড’-এর জন্য নোনাজলের কাব্য ছবির গল্প জমা দিয়েছিলাম। নোনাজলের কাব্যর প্রযোজক পাওয়ার জন্য ভারতের গোয়ায় এনএফডিসির আয়োজনে ফিল্মবাজারে আমন্ত্রিত হই। নতুন নির্মাতা এবং প্রযোজকদের মিলনমেলা বসে এখানে। সেখানে পেয়ে যাই ফরাসি প্রযোজক ইলান জিরাদকে। আমার সিনেমার গল্প পড়ে তিনি কাজ করতে আগ্রহী হন। ইলান জিরাদ অস্কারজয়ী তথ্যচিত্র মার্চ অব দ্য পেনগুইনস-এর প্রযোজক।

[৫] ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমা নির্মাণের শুরুটা যেভাবে
‘লোনাজলের কাব্য’ বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার গঙ্গামতীর চরে নির্মাণ করা হয়েছে। আড়াই বছর আগে এই সিনেমার প্রোডাকশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যে গ্রামটিতে আমরা সিনেমার শ্যুট করেছিলাম, সেটি গঙ্গামতীর চরে একটি জেলেপাড়া। যেখানে ২০ থেকে ২৫টি জেলে পরিবার বসবাস করতো। গত আড়াই বছরে এই জেলেপাড়াটি বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে যে জেলেরা থাকতেন, তারা উদ্বাস্তু হয়ে গেছেন। কারণ সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামটি আর নেই। জলবায়ু পরিবর্তনে একদম সম্মুখ যুদ্ধের যোদ্ধা আমার নোনাজলের কাব্যর জেলেরা।

[৬] গঙ্গামতী চর এলাকার জেলেদের সঙ্গে পরিচয় এবং ভিনদেশি অধ্যাপকদের উৎসাহ
গঙ্গামতী এলাকার জেলেদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২০০৮ সালে। সিডরের তাণ্ডবের কয়েক মাস পর বন্ধুদের সঙ্গে কুয়াকাটার পটুয়াখালী অঞ্চলে যাই ছুটি কাটাতে। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’র (আইবিএ) স্টুডেন্ট। টুকটাক ফটোগ্রাফির নেশা ছিলো। আমি ক্যামেরা নিয়ে জেলেপাড়াগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করি। তখন দেখতে পাই প্রকৃতি যেমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, মানুষ পুনরায় নির্মাণ করছে তার ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। তিন-চার মাসের মধ্যে জেলেরা নৌকায় করে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দুটি আমার মনে ভীষণ দাগ কাটে।
এরপর নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি টিস স্কুল অব দ্য আর্টসে স্নাতকোত্তর পড়ালেখা করতে যাই। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসররা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেন, তখন আমি জেলেদের জীবনযাপন নিয়ে লেখা শুরু করি। প্রথমে ড্রাফ্টটা লেখা হয়। যদিও এতে আমি খুব একটা হ্যাপি ছিলাম না। তখন ভাবলাম, উপকূলের জেলেদের জীবনযাপন নিয়ে আমার আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। আমি তখন প্রতিবছরই দেশে আসতাম জেলেদের সঙ্গে সময় কাটানোর উদ্দেশে। তা না হলে যে একটা ভালো সিনেমা হয়ে উঠবে না। সময় কাটাতে কাটাতে জেলেদের সঙ্গে একটা গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

[৭] দেশি প্রযোজকদের অনাস্থা, নোনাজলের কাব্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই
জেলেদের সহায়তায়, তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে নোনাজলের কাব্যর টিমটি ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে লাগলো। যখন আমি বুঝলাম সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব, তখন সিনেমার অর্থ যোগানের প্রশ্ন সামনে এলো। কে করবে এই প্রযোজনা? গেলাম অনেকের কাছে। যারা অর্থায়ন করবেন, তাদের অনেকেই বললেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুই মাস থেকে শ্যুট করবেন, খরচ বেশি হবে। অনেক কষ্ট। অনেক বেশি আনসার্টেন। বোঝাও যাচ্ছে না সিনেমাটি আপনি শেষ করে আসতে পারবেন কিনা! কেননা আপনি একজন নতুন নির্মাতা। আমরা খুব একটা ভরসা পাচ্ছি না। আমার সিনেমায় প্রথম টাকা এলো স্বনামধন্য আমেরিকান নির্মাতা স্পাইক লি’র কাছ থেকে। একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সিলেক্ট করে, পাঁচটি প্রজেক্টকে দেয়। এটি ছিলো একটা ‘রাইটিং গ্রান্ট’, যাতে লেখা চালিয়ে যেতে পারি।
নোনাজলের কাব্য সিনেমা সরকারি অনুদান পেয়েছিলো ৫০ লাখ টাকা। আরও প্রায় ৭৫ লাখ টাকা এসেছিলো ফরাসি প্রযোজক ইলানের মাধ্যমে। টরিনো ফিল্ম ল্যাব অডিয়েন্স ডিজাইন ফান্ড-২০২০ জিতেছে এই ছবি। চলচ্চিত্রকে বিশে^র দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পেয়েছি ৪৫ হাজার ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪৫ লাখ টাকার সমান। তারপর ধীরে ধীরে প্রজেক্ট এগিয়ে যায়। বড় বড় অনুদান পাওয়ার পর দেশীয় বিনিয়োগকারীরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। তখন বুঝতে পারেনÑ নোনাজলের কাব্য প্রজেক্টে মেরিট আছে। আছে সম্ভাবনাও।

[৮] জেলেরা যখন সক্রিয় সহযোগিতায় অনন্য ভূমিকা রাখেন
শহর থেকে মাত্র ছয়-সাতজন গিয়েছিলেন, বাকি সকলেই জেলে। ক্যামেরার সামনে তাদের ভূমিকা, ক্যামেরার পেছনে তাদের অবদান মিলেই ‘নোনাজলের কাব্য’ নির্মিত হয়েছে। সিনেমাটি নির্মাণ করতে গিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রথমত প্রকৃতি অত্যন্ত আনপ্রেডিক্টটেবল ছিলো। আমরা যে জায়গায় শ্যুট করতাম, সেই গ্রামটিতে জোয়ারের পানি এলে স্থলপথে আর যাওয়া যেতো না। যেতে হলে বনের ভেতর দিয়ে অনেক ঘুরে যেতে হতো। সবসময় আমাদের সময় হিসাব করে চলতে হতো। আমরা কতোক্ষণ ধরে কী পারবো, কী করবো না। কখন রওয়ানা দেওয়া উচিত, কখন ওখান থেকে চলে আসা দরকার ইত্যাদি। অর্ধেক মানুষ ওখানেই থাকতেন। কিছু মানুষ থাকতেন উন্নত আরেকটি জায়গায়। সব মিলিয়ে প্ল্যানিংয়ের একটা ভূমিকা ছিলো সিনেমাটি শ্যুটের ক্ষেত্রে। তবে নোনাজলের কাব্য নির্মাণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো প্রকৃতি। কখন কী হবে আমরা জানি না। নানান ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলাম। এমনও হয়েছে চোখের সামনে ঘটতে দেখেছিÑবিশাল বড় মাছ ধরার ট্রলার ভেঙেচুরে পানিতে ভেসে যাচ্ছে!

[৯] পদে পদে প্রমাণ করতে হয়েছে
‘নোনাজলের কাব্য’Ñ সিনেমা নিয়ে এখন অনেক প্রশংসা হচ্ছে। দেশ-বিদেশে সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা ও লেখালেখি হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই একটা অর্জন। কিন্তু এই অর্জনের পথ বেয়ে সামনে এগিয়ে চলা কি এতোটা সহজ ছিলো? ছিলো না। পদে পদে আমাকে প্রমাণ করে এগোতে হয়েছে। বাংলাদেশে এতো সময় নিয়ে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে সাধারণত সিনেমা শ্যুট করা হয় না। অনেকেই বলেছেন, ইন্টেরিয়র সিনগুলো আপনি এফডিসিতে করেন, আর বাইরের সিনগুলো পদ্মার চরে। আমি তা করিনি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, ইন্টেরিয়র শ্যুট করলে আমি যে ধরনের বাস্তব একটা উপস্থাপন চাচ্ছিÑ সেটা সম্ভব হতো না। আমি আমার পরিকল্পনায় অটল থাকলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু যতোদিন না প্রস্তুত হবে, ততোদিন শ্যুট করবো না! সৌভাগ্যবশত ২০১৮ সালে সিনেমাটির শ্যুট হয়। ওই বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৬ দিন শ্যুট হয়েছিলো। ৩৬ দিনের শ্যুট, একদিন করে গ্যাপ। শ্যুটের পনেরো দিন আগে গিয়েছিলাম আমরা স্পটে। দুই থেকে আড়াই মাস ছিলাম গঙ্গামতীর চরে। সম্পাদনার কাজ শেষ করতে দেড় বছর সময় লেগেছে। কারণ অর্থের সমস্যা ছিলো। শ্যুটিংয়ে খরচের যে ব্যয় ধরেছিলাম, তার চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে।

[১০] দেশি ইনভেস্টরদের সাড়া
কোভিডের কারণে ছয়-সাত মাস নষ্ট হয়েছিলো আমাদের। ২০২০ সালের জুলাইয়ে নোনাজলের কাব্য সিনেমার ফাইনাল কাজ হয়, আমরা প্রথম ইনভাইটেশন পাই বিএফআই লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে। গত অক্টোবরে লন্ডনে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার শো হয়, যা বিশে^র অন্যতম বড় ফেস্টিভ্যাল। ৬৪তম আসরে ৫০টি সিনেমা নিয়েছিলো মাত্র। এর মধ্যে আমরাও ছিলাম। বুসান, সিঙ্গাপুর, সাওপাওলো, হাওয়াইÑ এ ধরনের বড় বড় ফেস্টিভ্যালে আমাদের সিনেমাটি দেখানো হয় ‘কম্পিটিশন সেকশনে’। পুরস্কারের জন্য মনোনীত হই। কলকাতায় নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ‘নোনাজলের কাব্য।

[১১] আন্তর্জাতিক উৎসবে নোনাজলের কাব্য প্রশংসিত
আন্তর্জাতিক ফিল্ম উৎসবগুলোতে ‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমা প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশকে একেবারে অন্যভাবে উপস্থাপন করার কারণে। সিনেমার বিশেষ দিক ছিলো, প্রকৃতির প্রকৃত রূপ ধারণ করার জন্য গঙ্গামতীর চরে দুই-আড়াই মাস ছিলাম। প্রকৃতি আসলে কেমন সে ব্যাপারে বাস্তব জ্ঞান নেওয়ার জন্য। প্রকৃতি একদিকে যেমন ভয়াবহ ভয়াল, অপরদিকে ভয়াবহ সুন্দরও! দু’টি পার্টই আমরা ধারণ করতে পেরেছি বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সিনেমা গবেষক ও দর্শকরা। তারা সিনেমার কালার গ্রেডিং, সাউন্ড ডিজাইনের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেছেন। সব মিলিয়ে একটা ফুল প্যাকেজ, যা আন্তর্জাতিক সমালোচকদের পছন্দ হয়েছে। ফজলুর রহমান বাবু ভাইয়ের কথা অনেকেই বলেছেন। প্রশংসা করেছেন। তার অভিনয় পছন্দ করেছেন। তাসনুভা তামান্নার রোলটাও পছন্দ করেছেন। পুরো সিনেমার ভারটা রুদ্রের ঘাড়ে ছিলো। রুদ্র চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিতাস জিয়া। সিনেমাটির সব সিনেই তিনি আছেন।

[১২] নির্মাতা নতুন হলেও সহযোগিতা ছিলো সবার
নির্মাতা হিসেবে নতুন হলেও সবাই সহযোগিতা করেছেন আমাকে। ‘নোনাজলের কাব্য’ প্রযোজনা করেছি আমি এবং ফরাসি প্রযোজক ইলান জিরাদ। বাংলাদেশ থেকে ছবিটির নির্মাণ সহযোগী প্রতিষ্ঠান নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর হাফ স্টপ ডাউন। সিনেমাটি সম্পাদনা করেছেন রোমানিয়ার লুইজা পারভ্যু ও ভারতের শঙ্খজিৎ বিশ্বাস। ছবির সংগীতায়োজন করেছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব। শব্দ ও রং সম্পাদনার কাজটি হয়েছিলো ফ্রান্সের দু’টি বিখ্যাত স্টুডিওতে। যেখানে ডিজনির ছবিরও সম্পাদনা হয়। জেলেপাড়ার জীবন নিয়ে এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, তিতাস জিয়া, তাসনুভা তামান্না, অশোক ব্যাপারী, আমিনুর রহমানসহ অনেকে।

[১৩] গঙ্গামতী চরে সিনেমার প্রথম প্রদর্শন, আবেগাপ্লুত জেলে পাড়ার মানুষ
নোনাজলের কাব্য সিনেমাটি দেখে জেলেরা আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। গঙ্গামতী চরের শ্যুটিং পাড়াটা এখন আর নেই। জেলেরা একটু উত্তরে নতুন করে বসতি গড়ে তুলেছেন। জেলেদের মধ্যে যারা নোনাজলের কাব্য সিনেমায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারা এসেছিলেন সেটি দেখতে। এর বাইরে তাদের পাড়াপড়শী সকলেই এসেছিলেন। এক হাজারেরও বেশি মানুষ এসেছিলেন সিনেমাটি দেখার জন্য। মনোযোগসহকারে দুই ঘণ্টা ধরে তারা সিনেমাটি দেখেছেন। এ সময়ে কেউ কোনো কথা বলেননি। চুপচাপ ছিলেন। সিনেমার সঙ্গে নিজেদের রিলেট করতে পারছিলেন। এটা আমার জন্য খুবই ভালোলাগার ব্যাপার ছিলো। জেলেরা বলেছিলেন, সবাই বলে যান আবার আসবেন, কিন্তু কেউ আর আমাদের এখানে আসেন না, কিন্তু আপনি বারবার আসছেন। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া ছিলো। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক একটা ভিন্ন মাত্রা পেলো। সিনেমাটাও দেখালাম। তারা আমার সঙ্গে আলিঙ্গন করেছেন। এসব জীবন ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো। আমিও আলিঙ্গন করলাম তাদের, এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন। যদি বলেন কীসে সফল? আমি বলবো, গঙ্গামতীর জেলেপাড়ায় আবার যেতে পেরেছি, যে অভিজ্ঞতাটা জেলেদের দিতে পেরেছি একরাতের জন্য, সেটা আমার জন্য বড় ব্যাপার ছিলো, জেলে পাড়ার লোকজনের জন্যও তাই।

[১৪] পরিবারের উৎসাহ, পরিবারের সহযোগিতা
‘নোনাজলের কাব্য’ সিনেমা নির্মাণের পেছনে আমার পরিবারের সদস্যদেরও অবদান আছে। উৎসাহ আছে। যে যার জায়গা থেকে সহযোগিতা করেছেন। অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন বাবা-মা। তাদের কাছে আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ। তবে পরিবারকে কনভিন্স করার ব্যাপারে সমাজের আর দশটা পরিবারের ছেলেমেয়ের জন্য যে চ্যালেঞ্জ থাকে, আমার ক্ষেত্রেও তা ছিলো। কারণ স্বাধীন সিনেমা নিয়ে কাজ করতে হলে বরাবরই অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তিতিক্ষারও প্রয়োজন হয়। কিছু অর্জনের গভীর কমিটমেন্ট লাগে। কারণ বছরের পর বছর লেগে থাকতে হয়। এটা আমি করতে পেরেছি বলেই মনে হয়।

[১৫] পাঁচ বছরের শ্রম ও ঘামের ‘নোনাজলের কাব্য’ এখন প্রেক্ষাগৃহে
এখনো পর্যন্ত অনেক বড় বড় উৎসবে সিনেমাটি গিয়েছে। দেখানো হয়েছে। এ বছর জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে দেখালাম। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে দুইদিন ছিলাম, বিশে^র নেতৃস্থানীয় মানুষ গিয়েছিলেন সেই সম্মেলনে। তারা দেখলেন। প্রথমত, এটি আমার প্রথম ছবি। পাঁচ বছর ধরে ছবিটি বানিয়েছি। আর করোনার কারণে ফেস্টিভ্যালগুলোতে কমসংখ্যক ছবি নিচ্ছে। বিএফআই লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মতো উৎসবগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে সোয়া এক লাখ থেকে দেড় লাখ মানুষের সমাগম হয়। আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও ফিল্মসংশ্লিষ্ট বিশে^র সেরা মানুষগুলোর নজর থাকে এই উৎসবগুলোতে। সব মিলিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গঙ্গামতী চর এলাকার জেলেদের জীবনগল্পের সিনেমাটি মুক্তি দিতে পেরে আমি দারুণ খুশি। সকলে সিনেমা হলে আসবেন, সিনেমা দেখবেন। বাংলা সিনেমা বিশ^ দরবারে পৌঁছে দিতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

[১৬] ‘নোনাজলের কাব্য’ এখন দেশের যেসব সিনেমা হলে চলছে
[১] স্টার সিনেপ্লেক্স, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, ঢাকা। [২] স্টার সিনেপ্লেক্স, এসকেএস টাওয়ার, ঢাকা। [৩] স্টার সিনেপ্লেক্স, সীমান্ত সম্ভার, ঢাকা। [৪] স্টার সিনেপ্লেক্স, সনি স্কয়ার, ঢাকা। [৫] ব্লকবাস্টার সিনেমা, যমুনা ফিউচার পার্ক, ঢাকা। [৬] শ্যামলী সিনেমা, ঢাকা। [৭] সিনেমাস্কোপ, নারায়ণগঞ্জ। [৮] সিলভার স্ক্রিন, চট্টগ্রাম। [৯] সুগন্ধা সিনেমা, চট্টগ্রাম। [১০] মধুবন সিনেপ্লেক্স, বগুড়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়