খালিদ খলিল: পেঁয়াজের উপকারী গুণ ও আরোগ্য ক্ষমতা কিন্তু অবিশ্বাস্য! আর সবজি এবং মসলা হিসেবে পেঁয়াজের গুরুত্ব তো বলাই বাহুল্য। ঠিক কবে থেকে এই পেঁয়াজের চাষাবাদ শুরু হয় কিংবা ঠিক কবে থেকে রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহারের প্রচলন ঘটে তা সঠিক জানা যায়নি। মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার প্রায় সাত সহস্রাব্দ আগের ব্রোঞ্জ যুগের কিছু মানব বসতিতে সবজি হিসেবে পেঁয়াজের ব্যবহারের কিছু নমুনা পাওয়া যায়। গবেষকদের মতে, ইরান ও পশ্চিম পাকিস্তানে সর্বপ্রথম পেঁয়াজের চাষ করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর বহু স্থানে এই পেঁয়াজকেই অনন্ত জীবনের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। পেঁয়াজের গোলাকার আকৃতি ও এর সমকেন্দ্রিক একটির ওপর আরেকটি চক্রাকার রিং থেকে এই ধারণার জন্ম বলে মনে করা হয়। প্রাচীন মিসরীয়দের কাছে পেঁয়াজ ছিলো পূজনীয় বস্তু। তারা মনে করতো মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য পেঁয়াজ অতি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে তাদের সমাধির মধ্যে তারা পেঁয়াজ রাখতো। এই ঘটনার সবচেয়ে চমকপ্রদ প্রমাণ পাওয়া যায় রাজা চতুর্থ রামেসিসের সমাধিতে। এই সমাধি আবিষ্কৃত হওয়ার পর দেখা যায় রাজা চতুর্থ রামেসিসের মমির দুই চক্ষু কোটরে ভরে রাখা হয়েছে পেঁয়াজ! এছাড়াও মৃতদেহের শরীরের নানা অংশে পেঁয়াজ রাখা হতো। বুকে পেঁয়াজের ফুল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো। মমির কান, পায়ের পাতা ইত্যাদি স্থানে পেঁয়াজ দিয়ে সাজানো হতো।
কিছু মিসরীয়র ধারণা ছিলো পেঁয়াজের ঝাঁঝালো গন্ধ ও তার জাদুকরী ক্ষমতায় মৃত মানুষ আবার নিঃশ্বাস নেওয়া শুরু করে। গবেষকদের মতে, এমন ধারণার পেছনে কারণ হলো, পেঁয়াজের ঔষধি গুণ। ফলে মিসরীয়রা পেঁয়াজকে জাদুকরী বস্তু মনে করতো। নিজেদের পেশি আরও মজবুত ও শক্তিশালী করতে রোমান ডিয়েটররা তাদের শরীরে পেঁয়াজ মালিশ করতো। তারা দাঁতের ব্যথা কিংবা অনিদ্রা দূর করতে পেঁয়াজ খেতো।
প্রাচীন রোমে যে ব্যাপক আকারে পেঁয়াজের চাষ হতো তার প্রমাণ পাওয়া যায় অগ্নুৎপাতে চাপা পড়ে যাওয়া পম্পেই নগরীতে। মধ্যযুগে পেঁয়াজকে দেখা হতো ‘সুপার-ফুড’ হিসেবে। সেসময় মানুষ ঠিক মুদ্রার মতো পেঁয়াজ ব্যবহার করতো। কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কিংবা ভাড়া পরিশোধ করার ক্ষেত্রেও পেঁয়াজের প্রচলন ছিলো। এছাড়া বিয়েতে মানুষ বর-কনেকে পেঁয়াজ উপহার দিতো। ভারতে ষষ্ঠ শতাব্দীতে পেঁয়াজ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিখ্যাত চিকিৎসাবিদ্যার গ্রন্থ ‘চক্র সংহিতা’তে ওষুধ হিসেবে পেঁয়াজের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে পেঁয়াজকে মূত্রবর্ধক, হজমে সহায়ক, হৃদপিণ্ড ও চোখের জন্য উপকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর প্রাচীনকালের এসব বর্ণনার সত্যতা মিলছে বর্তমানের আধুনিক নানা গবেষণায়। বর্তমানে পেঁয়াজের নানা ওষধি গুণ কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। পেঁয়াজ থেকে নানা ওষুধও তৈরি হয় এখন।
আপনার মতামত লিখুন :