শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর, ২০২১, ০৩:৩৬ রাত
আপডেট : ২৫ নভেম্বর, ২০২১, ০৩:৩৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রহমান বর্ণিল: ভাবুন ‘যুদ্ধশিশু’ শব্দটি ঘৃণার নাকি শ্রদ্ধার?

রহমান বর্ণিল
হাতে একটা ফাইল। ফাইলে কিছু ডকুমেন্টস। একটি জন্ম সনদ, কিছু ছবি। ছবিগুলো পঞ্চাশ বছর আগের। পুরানো, ঝাপসা, অস্পষ্ট। উদ্বেগ, উত্তেজনা, ক্লান্তি আর নৈরাশ্য নিয়ে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ছুটে বেড়াচ্ছে লিরা নামের একটি মেয়ে। এসেছে নরওয়ে থেকে। লিরার বয়স বাংলাদেশের বয়সের সমান। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেশে লিরা খুঁজছে তার জন্মদায়িনী মাকে। অনুমান করতে পারেন, কে এই লিরা? পাকিস্তানের পতাকা হাতে আর জার্সি গায়ে গ্যালারিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়ে আফ্রিদি, আজমদের সমর্থন দেওয়া কিছু মস্তিষ্ক বিকৃত উন্মাদকে গালি দিতে গিয়ে যারা বলেন, তারা একাত্তরের গণধর্ষণের ফসল, তারা শুনে রাখুন, উপর বর্ণিত লিরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন যুদ্ধশিশু। পাকিস্তানি ঔরসজাত হলেও সে নিজের শিকড় খুঁজতে এসেছে বাংলাদেশে। ‘ঘৃণা’ আর ‘পাকিস্তান’ শব্দ দুটো তার কাছে সমার্থক। পদ্মা-মেঘনার দেশে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে যদি একটি রক্তের সাগর তৈরি হয়, তবে ‘যুদ্ধশিশু’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি মহাকাশ সমান দুঃখের উপাখ্যান। জন্মের বহু বছর পর একজন মানুষ যখন জানতে পারে তাকে কেউ ভালোবেসে জন্ম দেয়নি। সে জাতিগত ঘৃণা, নৃশংসতা আর প্রতিহিংসাবশত ধর্ষণের ফসল, তার মানসিক অবস্থাটা তখন কেমন হয় একবার নিজেকে সে জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখুন তো।

চার লাখ মতান্তরে আরও অধিক বাঙালি নারী ধার্ষিত হয়েছিলো আমাদের জন্মযুদ্ধে। তাদের অধিকাংশই গর্ভবতী হয়েছিলো। তার মধ্যে বড় একটি অংশের গর্ভপাত করানো সম্ভব হয়নি। তারা জন্ম দিয়েছিলো আমাদের লিরার মতো হাজার হাজার যুদ্ধশিশুর। হাজার বছরের প্রাগৈতিহাসিক ঘুণে ধরা আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাঙালি সমাজ এসব শিশুদের গ্রহণ করেনি। গর্ভে ধারণ করা মা পর্যন্ত চেয়েছিলো অনাগত শিশুটির যেন গর্ভেই মৃত্যু হয়। এরকম অসংখ্য অনাদর, অবহেলা আর পাহাড় সমান কলঙ্কের দায় মাথায় নিয়ে জন্ম যুদ্ধশিশুদের। জন্মের পর পিতার স্নেহ, মায়ের আদর তারা পাইনি। তাদের জন্মের পর কোনো উৎসব হয়নি, এমনকি যে মায়ের গর্ভে জন্মেছে সেই মায়ের বুকের দুধটুকুও জোটেনি অনেকের ভাগ্যে। এরকম মর্মভেদী এক বেদনার ইতিহাস জড়িয়ে আছে আমাদের প্রতিটি যুদ্ধশিশুর সঙ্গে।

এবার ভাবুন এই ‘যুদ্ধশিশু’ শব্দটি ঘৃণার নাকি শ্রদ্ধার? পাকপন্থি কুলাঙ্গারদের আপনি যখন একাত্তরের গণধর্ষণের ফসল বলছেন, তখন আপনি একাত্তরের বীরাঙ্গনাদের অপমান করছেন, হতভাগ্য নিষ্পাপ যুদ্ধশিশুদের ভাগ্যের নির্মমতা নিয়ে রসিকতা করছেন। এই বীরাঙ্গনারা আমাদের মাথার মুকুট, এই যুদ্ধশিশুরা আমাদের জন্মযুদ্ধের স্মারক। আমাদের এই দেশটির জন্য যে অবর্ণনীয় কষ্ট, অসংখ্য ত্যাগ, সমুদ্র সমান অশ্রæজল আর হাহাকারের সওদা করতে হয়েছে, একেকটি যুদ্ধশিশু তার একেকটি জীবন্ত দুঃখ গাঁথা। বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে যারা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে তারা হচ্ছে সেই কুলাঙ্গার সন্তান, যার ঔরসে জন্মেছে তাকে বাপ না ডেকে যে অন্য লোককে বাপ ডাকে। আর ‘যুদ্ধশিশু’ হচ্ছে বাঙালির জন্মযুদ্ধে এক মর্মস্পর্শী উপাখ্যান। প্রথমটি লজ্জার, দ্বিতীয়টি এক মর্মন্তুদ বেদনার। দুটিকে গুলিয়ে ফেলে দয়া করে বাঙালির জন্মযুদ্ধের একটি বেদনাদায়ক ইতিহাসের সঙ্গে এমন নির্মম রসিকতা করবেন না।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়