ওয়াজহাতুল ইসলাম: [২] ভোরে শিশির ভেজা ঘাসে দৃষ্টির খুব কাছেই কুয়াশার রেখা। হালকা হিমেল হাওয়া বহমান। বুঝা যায় প্রকৃতিতে উঁকি দিচ্ছে শীত। ঠিক এই সময়টাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেক নাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। নানান প্রজাতির ভিনদেশী পাখির আনাগোনায় ভরে যায় ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলো।
[৩] দীর্ঘ আঠারো মাস পর শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাস এখন সরব। সঙ্গে পরিযায়ী পাখির আগমনে উৎসবমুখর রূপ ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। প্রতিদিনই পাখি দেখতে ক্যাম্পাসে ভীড় জমাচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাখিপ্রেমিরা।
[৪] সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, হিমালয়ের উত্তরাঞ্চল থেকে আসে অতিথিরা। সেখানের তীব্র শীত ও ভারী তুষারপাতে বছরের এই সময়ে টিকে থাকা কঠিন। তাই একটু উষ্ণতার খোঁজে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার এই দেশে আসে। সাধারণত মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করে।
[৫] সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেক, নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের ভেতরের লেকসহ সুইমিংপুল সংলগ্ন লেকে আশ্রয় নেয় তারা।
[৬] বড়-ছোট সড়ালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি, লাল গুরগুটি, নাকতা হাঁস, খুনতে হাঁস, জিরিয়া হাঁস, ভুতি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, আফ্রিকান কম্বডাকসহ নানা প্রজাতির পাখিr দেখা মিলে ক্যাম্পাসে।
[৭] জাবি’র প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য মতে, ১৯৮৬ সাল থেকে এখানকার জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখি আসছে। এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ২০৪ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে দেশি প্রজাতি রয়েছে ১২৬ টি ও বিদেশি ৭৮ টি।
[৮] অন্যান্যবারের তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা কম। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও পাখি বিজ্ঞানী অধ্যাপক কামরুল হাসান আমাদের সময়.কম কে জানান, “এ বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে পাখি আসা শুরু করেছে। প্রথম দিকে দুই প্রজাতির পাখি আসলেও ক্রমেই তা বাড়ছে। তবে পাখির সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় কম। ডিসেম্বরের দিকে তা পরিপূর্ণ রূপ পাবে।“
[৯] পরিযায়ী পাখি রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিবছর পাখিমেলার আয়োজন করে জাবি’র প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এ বছর পাখিমেলা হবে কিনা জানতে চাইলে পাখি বিজ্ঞানী কামরুল হাসান জানান, “আমাদের এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে (সম্ভাব্য ৭ তারিখ) করার পরিকল্পনা রয়েছে।“
[১০] বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, " অতিথি পাখি আগমনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আমরা লেকের পাশে সতর্কতামূলক ব্যানার স্থাপন করেছি। এছাড়া পাখির নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে লেক সংস্কার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন লেকের পানিতে জন্ম নেয়া অতিরিক্ত কচুরীপানা পরিস্কার, কাটাতারের বেড়া মেরামত করা হয়েছে।
[১১] এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর অতিথি পাখি সম্পর্কে তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, শীত এলেই অতিথি পাখির আনাগোনা শুরু হয়। জাবি ক্যাম্পাস তাদের জন্য অভয়ারণ্য হওয়ায় অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে পাখি অনেক বেশি দেখা যায়। করোনার কারণে গত বছর ক্যাম্পাসে পাখি দেখার সুযোগ হয়নি। সম্পাদনা: হ্যাপি
আপনার মতামত লিখুন :